ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সব্যসাচী দাস

বাড়ি ভাড়ার বিড়ম্বনা

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ২৯ আগস্ট ২০১৬

বাড়ি ভাড়ার বিড়ম্বনা

নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীর মধ্যে দেখা যায় না। তার উন্নত জীবসত্তাই উন্নতর জীবনযাপনে পরিচালিত করে। হাজার বছরের ইতিহাস পেরিয়ে মানুষ এখন আধুনিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত। মানুষের গতিশীল চিন্তা ও পদক্ষেপ যুগে যুগে সভ্যতার ইতিহাস বদলে দিয়েছে। বর্তমান নগরকেন্দ্রিক জীবনযাপন আধুনিক সভ্যতার এক রকম সংজ্ঞাই বলা যেতে পারে। পৃথিবীর সবদেশই জীবন এখন নগরকেন্দ্রিক। বিশেষ করে উন্নয়নশীল, নিম্ন মধ্যবিত্ত বা মধ্যম আয়ের দেশের জনসাধারণের মধ্যে শহরে ছোটার প্রবণতা বেশি। জীবনযাপনে এ সব দেশে শহর এবং গ্রামের তফাত অনেক। এমন বাস্তবতা আমাদের দেশে একটু বেশিই প্রবল। রাজধানীসহ অন্যান্য বড় শহরের থেকে দূরবর্তী জনপদের জীবনযাপন, কর্মসংস্থান ও আর্থিক সঙ্গতির ব্যবধান দুই মেরুর মতো। তাই তো এক রকম বাধ্য হয়েই অনেকে ছাড়তে হয় নিজের বাড়ি, আপন মানুষ। বেছে নিতে হচ্ছে শক্ত শহুরে জীবন। নগর জীবন সভ্যতার আশীর্বাদ হলেও বিড়ম্বনার শেষ নেই! বিশেষ করে আমাদের মত দেশে। ঢাকা আমাদের রাজধানী শহর। প্রায় দুই কোটির বেশি মানুষ এই শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে জনসংখ্যার এই সংখ্যা। ঘনবসতির দিক থেকে ঢাকা বিশ্বের তৃতীয় শহর। জীবনযাপনে অন্য যে কোন সমস্যার থেকে আবাসন সমস্যা সব থেকে প্রকট। মোট জনসংখ্যার মাত্র ২৪ লাখ মানুষের আছে নিজস্ব বাসস্থান বা বাড়ি, বাকি বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে থাকতে হয় বাসা বা বাড়ি ভাড়া নিয়ে। আসল কথা হলো বাসা এবং তার ভাড়া এই শহরের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সমস্য। বর্তমানে বাসা পাওয়া যেমন দুরূহ তেমনি শর্ত অনুযায়ী ভাড়া মেটানো আর বেশি কষ্টসাধ্য। দু-রুম, রান্নাঘর ও একটি বাথরুম ও এমন একটি বাসার ভাড়া এলাকা ভেদে আয়তন অনুযায়ী ১০ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকার মধ্যে। স্পষ্টই বোঝা যায় ভাড়া ধার্য ও আদায় রীতিমত প্রহসন। এ প্রসঙ্গে সব ভাড়াটিয়া একই অভিব্যক্তি প্রকাশ করে, এই অনিয়ম দেখার কেউ নেই! তাই তো দিন দিন প্রহসনের এই মাত্রা বেড়েই চলছে। ব্যাচেলর চাকরিজীবী, ছাত্রছাত্রী, রিক্সাচালক, খেটে খাওয়া মজুর, এবং ছাপোষা পরিবার নিয়ে থাকা চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ী সকলকেই যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ আর্থিক মূল্য দিতে হচ্ছে বাড়ি বা বাসা ভাড়ার নামে। মৌল-মানবিক চাহিদার অন্যদিক পূরণ হোক বা না হোক বাসস্থানের জন্য কিছু কিছু চাহিদা শিথিল রাখতে হয়! বাড়িওয়ালাদের ভাড়া নির্ধারণ, অহেতুক ভাড়া বৃদ্ধি একরকম মনের খেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ বলেই ফেলছে, এটা সত্যিই অমানবিক। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক সরকার, স্বায়ত্তশাসিত দুটি সিটি কর্পোরেশন কখনও কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারেনি। আত্মরক্ষায় বার বার সেই ১৯৯১ সালের বাড়ি ভাড়া আইনের রেফারেন্স। এ আইনের দুর্বল প্রয়োগ। কখন ভাড়াটিয়াদের পক্ষে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। সুযোগে বাড়িওয়ালারা ইচ্ছামত ভাড়া ধার্য করেন এবং নিয়মত তা আদায়ও করেন। এখন ২০১৬ সাল, বাড়িভাড়া আইনের সঙ্গে সময়ের ব্যবধান ২৫ বছরের। স¦াভাবিক ভাবেই ওই আইন এখন সময়োপযোগী না। অবশ্য আইনের কথা উল্লেখ করে বা কি লাভ। যা আছে, তার বা প্রয়োগ কোথায়। জীবনধারণের পর্যাপ্ত সুযোগের অভাবে, উদীয়মান তরুণ থেকে শিক্ষত বেকার যুবক, সকলেই বাধ্য হচ্ছে মা মাটির কোল ছাড়তে। আর এই সংকটের সুযোগ নিচ্ছেন বাড়িওয়ালারা। আর্থিক ও সামাজিকভাবে শক্তপক্ষ হলো বাড়িওয়ালা। সংখ্যায় তারা কম হলেও তাদের প্রভাব এবং কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা সব মিলে প্রহসনের ক্ষেত্র তৈরি করছে। ছবি : রেজওয়ান করিম
×