ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রহুল আমিন ভূঁইয়া

যান্ত্রিক ঢাকায় শান্তির ছোঁয়া

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ২৯ আগস্ট ২০১৬

যান্ত্রিক ঢাকায় শান্তির ছোঁয়া

নগর জীবন মানেই ব্যস্ততা। সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত চলে নাগরিকের ব্যস্ততার জীবন। প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততার মাঝে আমরা যখন হাঁপিয়ে উঠি তখন আমাদের শরীর ও মন চায় একটু নির্মল আনন্দ আর সবুজ পরিবেশ। তাই তো সময় সুযোগ হলেই আমরা ছুটে চলি নগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। ভোর থেকে শুরু হয় বাসের ভ্যাঁ ভু শব্দ, রিক্সার টিং টিং শব্দ যা চলে রাত পর্যন্ত। সারাদিনে কর্ম ব্যস্ততায় শারীরিক ক্লান্তি চলে আসে। সে ক্লান্তিকে দূর করতে মানুষ খুঁজে বেড়ায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর একটু মনোরম পরিবেশ। যা কর্মব্যস্ত মানুষের মনে একটু প্রশান্তির পরশ আনে। ঢাকা শহরে এ রকম কিছু পার্ক আর লেক এখনও রয়েছে। যার মধ্যে ধানম-ি লেক অন্যতম। লেক এলাকায় পা রাখা মাত্রই সবুজ মনোরোম পরিবেশ অনেকটা স্বস্তি দেবে আপনাকে, যেখানে পাবেন স্নিগ্ধ বাতাসের সঙ্গে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে মিশ্রণ। ধানম-ি লেকে প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত চলে মানুষের আসা যাওয়া। নগর জীবনের ক্লান্তি দূর করে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমায় এই লেকে। প্রকৃতির হাত দিয়ে তৈরি হওয়া এই লেকের দুই ধারে রয়েছে আঁকা বাঁকা রাস্তা। লেকের দুই ধারে দাঁড়িয়ে আছে নানা প্রজাতির ছোট বড় গাছ। একেবারে সকাল থেকেই শুরু হয় ধানম-ি লেকে প্রায় সকল বয়সী মানুষের চলাফেরা। সকালে এখানে অনেক নারী-পুরুষ আসে জগিং করতে। সবুজ প্রকৃতিতে কিছুটা সময় কাটিয়ে দিন শুরু করেন। বেলা বাড়তে থাকে, পুরো ধানম-ি এলাকার কলেজ এবং বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্রছাত্রীদের পদচারণায় মুখর হয় লেক প্রাঙ্গণ। লেকজুড়ে ছাত্রছাত্রীদের এ কোলাহল চলে রাত পর্যন্ত। সুখ-দুঃখের হাজারো কথা ভাগাভাগি করে নেয় কাছের মানুষের সঙ্গে। এর মাঝে বাড়তে থাকে লোক সমাগম। প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য একটি নিরাপদ স্থান। আবার কেউ নিয়ে আসে সন্তানসহ পুরো পরিবারকে। কেউ নিয়ে আসে দূর-দূরান্ত থেকে আগত বন্ধু-বান্ধবীকে। বরিশাল থেকে ঢাকায় ঘুরতে আসা সাইফুল ইসলাম রনি জানান, বন্ধুদের মুখে অনেক শুনেছি ধানম-ি লেকের কথা। বিশ্বাস করতে পারছি না এত সুন্দর জায়গা। বন্ধুদের সঙ্গে এসে খুব ভাল লাগছে। এই লেকের দুইধারে রয়েছে অসংখ্য বসার স্থান। যার প্রতিটির রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন নাম। যেমন ব্যাচেলর পয়েন্ট, জিয়া চত্বর, শূটিং পয়েন্ট, জাহাজবাড়ি পয়েন্ট, ডিঙ্গি চত্বর, দ্বীপ চত্বর, লেক ভিউ সাইড, রবীন্দ্র সরোবর, শতায়ু অঙ্গন ইত্যাদি। জলাধার ঘেরা সবুজের সমারোহ এ জায়গাটিতে পাখির কিচিরমিচির শব্দে মাঝে মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে পারেন অজানায়। এই লেকের অন্যতম আকর্ষণ রবীন্দ্র সরোবর। এখানে প্রায় সারা বছর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এটি একটি মুক্তাঞ্চল। এখানে বসে অনেকে প্রিয়জন বা বন্ধু-বান্ধবীর সঙ্গে আড্ডাবাজি করে সময় কাটিয়ে থাকেন। সুলাইমান জানান, প্রতিদিন বিকেলে এখানে আসি বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে। আর মনটাকে প্রফুল্ল রাখার জন্য। এখানের পরিবেশ খুব ভাল। আবার চাইলে কিছু সময় লেকের পানিতে নৌকা চালাতেও পারেন। প্রিয়জনের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে পারেন লেকে নৌকা দিয়ে। তবে ভয় নেই, লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা আছে এখানে। ‘ডিঙি বোট’-এর এই নৌকা ভ্রমণে নৌকা প্রতি প্রথম ৩০ মিনিট ১০০ টাকা, পরবর্তী ১৫ মিনিট ৫০ টাকা। প্রতি নৌকায় শিশুসহ সর্বোচ্চ তিনজন, শিশু ছাড়া সর্বোচ্চ দুজন চড়তে পারবেন। তবে অভিভাবক ছাড়া ১২ বছরের ছোট শিশুদের নৌকা ভ্রমণ নিষিদ্ধ। লেকের ভেতরে কাবাব, লুচি, সিঙ্গারা, সমুচা, ডাল পুরি, চটপটি ও ফুচকার বেশ কয়েকটি দোকান আছে। যেখানে সুন্দরভাবে বসার ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকা শহরজুড়ে রবীন্দ্র সরোবরের চায়ের বেশ নাম ডাক আছে। ধানম-ি লেকে গেলে কেউ চা না খেয়ে ঘরে ফিরেন না। জলাধার ঘেরা সবুজের সমারোহ এ জায়গাটিতে পাখির কিচিরমিচির শব্দে মাঝে মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে পারেন অজানায়। এখানে রয়েছে কৃষ্ণচুড়া, বটগাছ, রেইনট্রি, আমগাছ, কাঁঠালগাছ, বকুলগাছ, কদমগাছসহ নানা প্রজাতির গাছ। তাই পাখিদের আনাগোনাও এখানে অনেকটা বেশি। অবকাশ অথবা আড্ডা শেষে খাবারের প্রয়োজন হলে লেকের ভেতরেই অনেক খাবারের দোকান পেয়ে যাবেন। লেকে রয়েছে কয়েকটি ব্রিজ। এগুলো আপনার ভ্রমণে আনবে ভিন্নতা। লেকের জলে নিজের ছায়াটুকু দেখার খুব বেশি মেলে না শহুরে মানুষের। শিশুদের জন্যও জায়গাটি বেশ খোলামেলা। এখানে এসে প্রাণভরে খেলতে পারে শিশুরা। চাইলে ঘাস আর মাটিতে এক শান্তির পরশও নিতে পারেন। তাই অবসরে পরিবার-পরিজন নিয়ে নির্মল বাতাসে, সবুজের স্পর্শে ঘুরে আসতে পারেন ধানম-ি লেক থেকে। যা ধানম-ির সবুজ মনোরোম অপরূপ পরিবেশ অনেকটা স্বস্তি দেবে আপনাকে।
×