ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এক নেতা এক পদ- খুশি বিএনপির জেলা নেতারা

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৯ আগস্ট ২০১৬

এক নেতা এক পদ- খুশি বিএনপির জেলা নেতারা

শরীফুল ইসলাম ॥ এক নেতার এক পদ কার্যকর করায় বিএনপির জেলা নেতারা খুশি। এখন অন্তত ৫০ জেলায় কেন্দ্রীয় নেতাদের বদলে স্থানীয় নেতারা জেলা কমিটির সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক হতে পারবেন। আর জেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকলে এসব নেতা পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার লড়াইয়েও এগিয়ে থাকবেন। ১৯ মার্চ বিএনপির ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে দলে এক নেতার এক পদের বিধান চালু করা হয়। তবে এ বিধান চালু করলেও একাধিক পদে থাকা দলের প্রভাবশালী নেতারা আগে মনে করেছিলেন হয়ত শেষ পর্যন্ত এ বিধান কার্যকর হবে না। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া জাতীয় কাউন্সিলের পরপরই দলের নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দেন, যারা একাধিক পদ আঁকড়ে রেখেছেন তারা যেন এক পদ রেখে অন্য পদ ছেড়ে দেন। খালেদা জিয়ার নির্দেশ মেনে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব থাকাকালেই সবার আগে কৃষক দলের সভাপতি ও দিনাজপুর জেলা বিএনপির সভাপতির পদ ছেড়ে দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পদ ছাড়ার কিছুদিন পর বিএনপি চেয়ারপার্সন তাকে বিএনপির মহাসচিব নিয়োগ করেন। মির্জা ফখরুলের পথ ধরে পরে বিএনপির বর্তমান কমিটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতির পদ, ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতির পদ, এ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতির পদ, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের পদ ও যুগ্ম-মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতির পদ ছেড়ে দেন। আর বিএনপির আরেক যুগ্ম-মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল যুবদলের সভাপতির পদ ছেড়ে দেন। এছাড়াও আরও ক’জন কেন্দ্রীয় নেতা বিভিন্ন সাংগঠনিক জেলা ও অঙ্গসংগঠনের পদ ছেড়ে দেন। এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতির পদ ছেড়ে দেয়ার পর এক নেতার এক পদ কার্যকর করতে কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করে ডাঃ শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতির পদ গ্রহণ করেন। একই ভাবে আরও ক’জন কেন্দ্রীয় নেতা ইতোমধ্যেই কেন্দ্রের পদ ছেড়েছেন জেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার জন্য। জানা যায়, এবার জেলা পর্যায়ের প্রায় ৭০ নেতা স্থান পেয়েছেন ৫৯১ সদস্যের বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে। তবে এখন পর্যন্ত যারা একাধিক পদ দখল করে রেখেছেন তাদের এক পদ রেখে অন্যান্য পদ ছেড়ে দিতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর ফলে শীঘ্রই বিএনপির ৭৫ সাংগঠনিক জেলার মধ্যে অন্তত ৫০ জেলায় সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পদে স্থান পাবেন স্থানীয় নেতারা। সূত্রমতে, যারা বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন তাদের অধিকাংশই জেলা বা অঙ্গসংগঠনের পদ ছেড়ে দিচ্ছেন। তবে তাদের মধ্যে কিছু কিছু নেতা কেন্দ্রের পদ ছেড়ে জেলা কমিটির পদ ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। যারা কেন্দ্রের পদ ছেড়ে জেলা কমিটির পদ রাখছেন তারা স্থানীয় রাজনীতিতে নিজের প্রভাব বিস্তার করা এবং পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় টিকেট নিশ্চিত করতে এ অবস্থান নিয়েছেন। আর যারা জেলাপর্যায়ের বড় বড় পদ ছেড়ে কেন্দ্রের পদ বহাল রাখছেন তারা রাজধানীতে রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন লাভজনক পেশার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তাই জেলাপর্যায়ের পদ থেকে কেন্দ্রের পদ রাখলে তাদের সুবিধা বেশি। এদিকে এখন পর্যন্ত বিএনপির একাধিক পদ ধরে রেখেছেন যেসব নেতা তাদের মধ্যে রয়েছেনÑ কেন্দ্রের ভাইস চেয়ারম্যান ও পটুয়াখালী জেলা সভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী, কেন্দ্রের যুগ্ম-মহাসচিব ও বরিশাল মহানগরের সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার, কেন্দ্রের ভাইস চেয়ারম্যান ও লক্ষ্মীপুর জেলা সভাপতি আবুল খায়ের ভূঁইয়া, কেন্দ্রের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও নোয়াখালী জেলা নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক, কেন্দ্রের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও কিশোরগঞ্জের সভাপতি এ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, কেন্দ্রের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা সভাপতি একেএম মোশাররফ হোসেন, কেন্দ্রের ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলা সভাপতি এমএ মান্নান, কেন্দ্রের ভাইস চেয়ারম্যান ও রাজশাহী মহানগরের সভাপতি মিজানুর রহমান মিনু, কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক ও লালমনিরহাট জেলা সভাপতি আসাদুল হাবিব দুলু, কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগরের সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, কেন্দ্রের ভাইস চেয়ারম্যান ও মাগুরা জেলার সভাপাতি এ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা সভাপতি ফজলুল হক মিলন, কেন্দ্রের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও মানিকগঞ্জ জেলার সভাপতি আফরোজা খানম রীতা, কেন্দ্রের যুগ্ম-মহাসচিব ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সভাপতি আসলাম চৌধুরী প্রমুখ। উল্লেখ্য, বিএনপির আগের কেন্দ্রীয় কমিটির শতাধিক নেতা বিভিন্ন জেলা-উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ পদ দখলে রেখেছিলেন। এর ফলে ঢাকায় বসে এলাকার রাজনীতি করার কারণে দল ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতো। বিশেষ করে এলাকায় যারা রাজনীতিতে সক্রিয় তাদের সঙ্গে ঢাকায় বসে রাজনীতি করা নেতাদের দ্বন্দ্ব লেগেই থাকত। এর ফলে রাজপথে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন ও নির্বাচনসহ বিভিন্ন কাজে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো বিএনপিকে। এমনকি বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি পুনর্গঠন করতে গেলেও দ্বন্দ্ব-কোন্দলের কারণে তা আর করা যেত না। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ১৯ মার্চের জাতীয় কাউন্সিলের আগেই গঠনতন্ত্র সংশোধন করে এক নেতার এক পদ করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি হাইকমান্ড। পরে গঠনতন্ত্র সংশোধন উপ-কমিটি করে এ বিষয়ে একটি সুপারিশ জাতীয় কাউন্সিলে উপস্থাপন করে কাউন্সিলরদের মতামত নিয়ে তা গ্রহণ করা হয়। আর এক নেতার এক পদের বিষয়টি চিন্তা করেই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া পরে ৫৯১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করেন। এ জন্যই বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতাকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দেন তিনি। আর কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পদ ছেড়ে দিতে বলেন। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, জেলাপর্যায়ে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করতেই কেন্দ্রের পদ রেখে জেলা সভাপতির পদ ছেড়ে দিয়েছি। আরও অনেক কেন্দ্রীয় নেতা জেলা কমিটির পদ ছেড়ে দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে মহিলা দলের এক নেতা বলেন, অঙ্গসংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে কেন্দ্রীয় কমিটির পদ ছেড়ে দিচ্ছি। এর ফলে আমার জায়গায় নতুন আরেকজন কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান বলেন, গণতান্ত্রিক চর্চার অংশ হিসেবে এবার জাতীয় কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে এক নেতার এক পদ বিধান চালু করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই দলের বেশ ক’জন প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতা জেলাপর্যায়ের পদ ছেড়ে দিয়েছেন। আবার কোন কোন কেন্দ্রীয় নেতা কেন্দ্রের পদ ছেড়ে জেলার গুরুত্বপূর্ণ পদ নিচ্ছেন। এতে একদিকে বেশিসংখ্যক নেতা দলের পদ পাচ্ছেন এবং দলের সর্বক্ষেত্রে নেতৃত্বে ভারসাম্যও রক্ষা পাচ্ছে।
×