ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতার পর প্রথম বুয়েটে টাঙ্গানো হলো বঙ্গবন্ধুর ছবি

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৯ আগস্ট ২০১৬

স্বাধীনতার পর প্রথম বুয়েটে টাঙ্গানো  হলো বঙ্গবন্ধুর ছবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অসন্তোষ আর প্রতিক্রিয়াশীলদের বাধা পেরিয়ে অবশেষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি প্রদর্শন করল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। প্রগতিশীল শক্তির দাবি মেনে স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো রবিবার ভিসি অফিস ছাড়াও ডিন, বিভাগীয় প্রধান, হল প্রভোস্টসহ সকল প্রধান ও শাখা অফিসে টাঙানো হলো জাতির পিতা ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি। দেশের স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রহস্যজনকভাবে বুয়েটই সর্বশেষ রাষ্ট্রীয় এ আইন কার্যকর করল। তবু বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রগতিশীল শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামের উদ্যোগে একই সঙ্গে জাতির জনক ও প্রধানন্ত্রীর ছবি প্রদর্শন করা হয়েছে। উপাচার্য অফিস থেকেই সকল ছবি প্রস্তুত করা হয়েছে। এরপর গত দুই দিন সংশ্লিষ্ট সকল অফিসে তা সরবরাহ করা হয়। এতদিন যে প্রতিষ্ঠানে গেলে উপাচার্য অফিস ছাড়া কোথাও দেখা মিলত না জাতির জনকের কোন ছবি, দেখা যেত না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। রবিবার সেখানে গিয়ে দেখা যায় সকল ডিন, বিভাগীয় প্রধান, হল প্রভোস্টদের অফিসে টাঙানো হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ৪(ক) ধারা অনুযায়ী উপাচার্য অফিস ছাড়াও ডিন, বিভাগীয় প্রধান, হল প্রভোস্টদের অফিসে জাতির পিতার ছবি টাঙানো হয়েছে। এদিকে দেশের স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবার শেষে বুয়েটে জাতির জনক ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি টাঙানো হলেও বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখেছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রগতিশীল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। জানা গেছে, বুয়েট বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতৃবৃন্দসহ প্রগতিশীল শক্তির দাবি মেনেই নতুন উপাচার্যের উদ্যোগে এ ছবি টাঙানো হয়েছে। যারা এতদিন ধরে একই দাবি জানিয়ে আসছেন তাদের একজন বুয়েট বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ মিজানুর রহমান। রবিবার ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, এই শিক্ষক তার বিভাগে কাজ করছেন। তার বিভাগেও প্রদর্শন করা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। অধ্যাপক মিজানুর রহমান উপাচার্যের উদ্যোগে স্বস্তি প্রকাশ করে বলছিলেন, উদ্যোগের জন্য উপাচার্য মহোদয়কে অভিনন্দন জানাচ্ছি। ভাল লাগছে যে দেরিতে হলেও আমরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে পেরেছি। উপাচার্য মহোদয়কে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, স্যার (উপাচার্য) দায়িত্ব গ্রহণের দিনই আমরা বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতৃবৃন্দ দেখা করে জানাই উপাচার্য ও ডিএসডব্লিউ অফিস ছাড়া বাংলাদেশের সংবিধানের ৪(ক) ধারা অনুযায়ী জাতির জনকের ছবি টাঙানো হয় না। টাঙানো হয় না প্রধানমন্ত্রীর ছবি। আমাদের কথা শুনেই উপাচার্য মহোদয় বিষয়টিতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছিলেন। উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন একাধিক ডিন। তারা বলেছেন, বুয়েটে জাতির জনকের মর্যাদা দেয়া হয় না, মর্যাদা দেয়া হয় না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারÑ এমন অভিযোগ আমাদের সব সময় কষ্ট দিয়েছে। এখন থেকে অন্তত সেই কষ্ট থাকবে না। ডিনরা অনেকে বলছেন, প্রতিক্রিয়াশীলদের আধিপত্য থাকা বুয়েটে এ কাজ এর আগেও দুই-একজন উপাচার্য করতে চেয়েছেন কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মকর্তার সহযোগিতা পাবেন নাÑ এ আশঙ্কায় সে পথ থেকে সরে আসনে। এবারের সিদ্ধান্তের জন্য উপাচার্য ও যারা দিনের পর দিন দাবি জানিয়ে আসছেন তারা অবশ্যই অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য। প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরাও কর্তৃপক্ষের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। অভিনন্দন জানিয়েছেন উপাচার্যকে। কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী রাহুল বলেন, বুয়েট দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ; অথচ এখানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি টাঙানো হলো সবার পরে। এটা হতাশার হলেও শেষ পর্যন্ত অন্তত কাজটা হয়েছে। তবে এ কাজটা মন থেকে না বাধ্য হয়ে সেটাও একটা বড় কথা। উদ্যোগকে অভিনন্দন জানালেও অতীত অভিজ্ঞতার জন্য ক্ষোভের কথা জানালেন বুয়েটের সাবেক ছাত্রনেতা তন্ময় আহমেদ। উগ্রবাদীদের আক্রমণের শিকার হয়েও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া এই শিক্ষার্থী বলছিলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি প্রদর্শন করা হয়েছেÑ এটা ভাল খবর। কিন্তু এটা মন থেকে না অনেক শিক্ষক ও শিক্ষক নেতার জঙ্গীবাদী চেহারা আড়াল করার জন্যÑ সেটাই আমার প্রশ্ন। এখন দেশে জঙ্গী নিয়ে অনেক প্রতিবাদ-প্রতিরোধ হচ্ছে; তাই এ কাজ করে অনেকে ভাল মানুষ সাজার চেষ্টা করতে পারে। তিনি আরও বলেন, আমার এখনও স্পষ্ট মনে আছে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম স্যার ১৫ আগস্ট উপলক্ষে একবার মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তার আগে ওই দিনটিতে বুয়েছে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে কোন অনুষ্ঠান হয়নি। নজরুল স্যার আলোচনা সভার উদ্যোগ নেয়ায় বহু বিভাগের প্রধান ও শিক্ষক সরাসরি আপত্তি জানিয়ে বলেছিলেন, ১৫ আগস্ট মিলাদ করলেই তো হয়ে যায়। শেখ মুজিবকে নিয়ে আলোচনা সভা করার কী আছে? এখন ওই শিক্ষকরাই তো বিভিন্ন পদে আছেন। তারা কি আর মন থেকে জাতির পিতাকে সম্মান করবেন? সম্মান করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে? নিশ্চয়ই না। এদিকে বহুদিনের দাবি ও সরকারের আদেশ থাকার পরও বুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের কোন ভাস্কর্য নেই। শীঘ্রই প্রতিষ্ঠানটিতে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য নির্মাণ করার দাবি জানিয়েছেন প্রগতিশীল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
×