ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের ৫৯২ হাসপাতাল ফের শিশুবান্ধবে রূপ নিল

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৯ আগস্ট ২০১৬

দেশের ৫৯২ হাসপাতাল ফের শিশুবান্ধবে রূপ নিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের সরকারী ও বেসরকারী ৫৯২ হাসপাতালকে পুনরায় শিশুবান্ধব হাসপাতালে রূপান্তর করেছে সরকার। ঘোষিত এসব হাসপাতালকে সত্যিকার অর্থে শিশুবান্ধব করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে গত চার বছরে সাত সহস্রাধিক ডাক্তার ও নার্সকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। শিশুবান্ধব হাসপাতাল হিসেবে পরিগণিত হওয়ার লক্ষ্যে হাসপাতালগুলোকে বিশেষজ্ঞরা ১৫টি নির্দেশনা পালনের লক্ষ্যমাত্রা বেধে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান ও জাতীয় পুষ্টি সেবার সহায়তায় বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশন ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫৯২টি সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালকে শিশুবান্ধব করতে প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ন সম্পন্ন করেছে। রবিবার রাজধানীর মহাখালীর বিসিপিএস মিলনায়তনে শিশুবান্ধব হাসপাতাল পুনরুজ্জীবিতকরণ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিশুবান্ধব মেডিক্যাল কলেজ, জেলা সদর, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের পরিচালক ও সিভিল সার্জনসহ প্রতিষ্ঠান প্রধানদের মধ্যে শিশুবান্ধব সনদ প্রদান করা হয়। জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও জাতীয় পুষ্টি সেবার লাইন ডিরেক্টর ডাঃ এ বি এম মুজ্হারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ দীন মোহাম্মদ নুরুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) অধ্যাপক ডাঃ সামিউল ইসলাম। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ড. এস কে রয়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপ-পরিচালক ডাঃ মোঃ মউদুদ হোসেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে, শিশুবান্ধব হাসপাতাল কর্মসূচীর আওতায় এ পর্যন্ত ৬৫টি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ৬৫০ জন, ৪১৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৪ হাজার ১শ’ ৪০ জন, ৬০টি সদর হাসপাতালের ৬শ’ জন, ১৮টি সরকারী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৩শ’ ৬০ জন এবং ৩৮টি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ৭শ’ ৬০ জনসহ মোট ৭ হাজার ৫০ জন ডাক্তার ও নার্সকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। শিশুবান্ধব হাসপাতাল হিসেবে পরিগণিত হওয়ার লক্ষ্যে হাসপাতালগুলোকে বিশেষজ্ঞরা ১৫টি নির্দেশনা পালনের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন। সেগুলো হলো- হাসপাতালে শিশুদের জন্য কি কি সুবিধা ও নিয়মনীতি রয়েছে তা হাসপাতালের প্রবেশপথে সাইনবোর্ড আকারে ঝুলিয়ে দেয়া, ডাক্তার ও নার্সসহ প্রয়োজনীয় জনবলের প্রশিক্ষণ, মায়েদের সন্তান প্রসবের সকল প্রকার সুবিধা, জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো, বোতলজাত ও চুষনি জাতীয় দ্রব্যাদি প্রবেশ করতে না দেয়া, ছয় মাস পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ, ছয় মাস থেকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি ঘরে তৈরি পুষ্টিকর খাবার, স্থানীয় জনগণকে হাসপাতাল কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা ও ছয় মাস পর পর শিশুবান্ধব হাসপাতালটির কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে কিনা সে সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানদের মনিটর ও সুপারভিশন জোরদার করা। ড. এস কে রয় জানান, ১৯৯২ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সারাদেশে ৪৯৯টি হাসপাতালকে শিশুবান্ধব হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলা হয়। ১৯৯১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ যৌথভাবে বিশ্বব্যাপী মায়ের দুধ খাওয়ানোর গুরুত্বের সঠিক প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে শিশুবান্ধব হাসপাতাল করার পদক্ষেপ নিলে সে ডাকে সাড়া দিয়ে ওই সময় প্রায় ৫শ’ হাসপাতাল করা হয়। কিন্তু নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, মূল্যায়নের অভাব ও নিয়মিত অর্থ বরাদ্দের অভাবে শিশুর ছয় মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর হার ও ছয় মাস পরবর্তী থেকে ঘরে তৈরি খাওয়ানোর হার কম ও কৌটার দুধ খাওয়ানোর হার বৃদ্ধি পায়। তিনি জানান, ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শিশুবান্ধব হাসপাতালগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করার নির্দেশ দিলে পর্যায়ক্রমে শিশুবান্ধব হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়।
×