ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আধুনিক বাংলা কবিতার উজ্জ্বল নক্ষত্র শহীদ কাদরী আর নেই

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৯ আগস্ট ২০১৬

আধুনিক বাংলা কবিতার উজ্জ্বল নক্ষত্র   শহীদ কাদরী আর নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভয় নেই/আমি এমন ব্যবস্থা করবো যাতে সেনাবাহিনী/ গোলাপের গুচ্ছ কাঁধে নিয়ে/মার্চপাস্ট করে চলে যাবে/এবং স্যালুট করবে/ কেবল তোমাকে প্রিয়তমা...। এমন বহু অনবদ্য কবিতার জনক বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কবি শহীদ কাদরী আর নেই। নিউইয়র্কের নর্থ শোর বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার স্থানীয় সময় সকাল সাতটায় ইন্তেকাল করেন তিনি (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। কবির বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। একাধিকসূত্র জানায়, কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন কবি। নিউমোনিয়ায়ও আক্রান্ত হয়েছিলেন। ছিল উচ্চ রক্তচাপ এবং জ্বর। সাত দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হন। প্রথম কয়েকদিনে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি দেখা যায়। কিন্তু হঠাৎ অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে। রবিবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে মহাবেদনার সংবাদÑ কবি নেই আর! শহীদ কাদরীর মৃত্যুতে দেশের শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া। শহীদ কাদরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে বাংলা একাডেমি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, জাতীয় কবিতা পরিষদসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান। কবি শহীদ কাদরীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে জাতীয় কবিতা পরিষদ। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, শহীদ কাদরীর মৃত্যুতে এক শক্তিমান কবিকে হারাল বাংলা সাহিত্য। সাহিত্যের প্রতি তাঁর এই অবদান চিরদিন স্মরণ করবে জাতি। প্রধানমন্ত্রীর শোক ॥ কবির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী এক শোকবার্তায় বলেন, তাঁর মৃত্যুতে আধুনিক বাংলা কবিতা এক উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারাল। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং কবির শোকসন্তপ্ত পরিবার ও তাঁর কবিতার অগণিত পাঠকের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান। বুধবার মরদেহ আসছে॥ কবির শহীদ কাদরীর মরদেহ বুধবার দেশে আসছে। ইতোমধ্যে সেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। কবি পতœীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের পর জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মুহাম্মদ সামাদ জানান, সব ঠিক থাকলে বুধবার সকাল আটটা ৪০ মিনিটে কবির মরদেহ ঢাকায় পৌঁছবে। এরপর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হবে। এখানেই সর্বস্তরের মানুষ কবির প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মুহাম্মদ সামাদ জনকণ্ঠকে বলেন, শহীদ কাদরীর স্ত্রী নীরা কাদরী জানিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব তাঁর মরদেহ বাংলাদেশে নিয়ে আসা হবে। শহীদ কাদরীকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাধিস্থ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন নীরা কাদরী। এ ব্যাপারে আমরা যথাযথ সহযোগিতা করব শহীদ কাদরীর পরিবারকে। এছাড়া সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শহীদ কাদরীর শবদেহ নিয়ে আসা হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সম্মিলিক সাংস্কৃতিক জোটের তত্ত্বাবধানে এই শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হবে। ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন শহীদ কাদরী। পঞ্চাশ উত্তর বাংলা কবিতায় আধুনিক মনন ও জীবনবোধ সৃষ্টিতে যে ক’জন কবি উল্লেখযোগ্য তাদের মধ্য অন্যতম শহীদ কাদরী। আধুনিক নাগরিক জীবনের সুখ-দুঃখ, প্রেম, স্বদেশচেতনার পাশাপাশি বিশ্ব-নাগরিক পবাধের সম্মিলন ঘটে তার কবিতায়।‘উত্তরাধিকার’, ‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’ ‘আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও’ এবং ‘কোথাও কোন ক্রন্দন নেই’ এই চারটি কাব্যগ্রন্থ দিয়েই বাংলার জনপ্রিয় কবিদের একজন শহীদ কাদরী। ১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমি ও ২০১১ একুশে পদক পান তিনি। ১৯৭৮ সালের পর থেকেই বাংলাদেশের বাইরে কবি। জার্মান, ইংল্যান্ড হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হন তিনি।
×