ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মাতৃত্বভাতার তালিকায় কুমারীদের নাম

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৯ আগস্ট ২০১৬

মাতৃত্বভাতার তালিকায় কুমারীদের নাম

কামরুজ্জামান বাচ্চু, বাউফল থেকে ॥ পটুয়াখালীর বাউফলে কুমারী মেয়েদের ছবি ও ভুয়া নাম ব্যবহার করে মাতৃত্বকালীন ভাতার টাকা আত্মসাত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা মহিলা বিষয়ক দফতরের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে ভাতার এ টাকা অবাধে লুটে নেয়া হচ্ছে। অনুসন্ধান করে জানা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাউফল উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে ৪শ’ ৩২ জন গর্ভবতী নারীকে মাসিক ৫শ’ টাকা করে দুই বছরে ১২ হাজার টাকা ভাতা প্রদান করছে সরকার। নিয়ম অনুযায়ী ইউনিয়ন ভিত্তিক অসহায় দুস্থ গর্ভবতী নারীরাই কেবল এই ভাতা পাবেন। ২০১৪ সালের অক্টোবর থেকে নবেম্বর মাসের মধ্যে সুুবিধাভোগী গর্ভবতী নারীদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। হিসেব অনুযায়ী ওই সময়ের সকল গর্ভবতী নারীর নামের তালিকা ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা অফিস রেজিস্ট্রারে থাকার কথা। কিন্তু ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা অফিসে সংরক্ষিত রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ গর্ভবতী নারীদের তালিকায় নেই অধিকাংশ ভাতাভোগীর নাম। শুধু তাই নয়, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের হালনাগাদ ভোটার তালিকাতেও নেই অধিকাংশ সুবিধাভোগীর নাম। পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক অথবা উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার ভাতাভোগী গর্ভবতী নারীকে গর্র্ভবতী হিসেবে সনদ প্রদানের নিয়ম থাকলেও তাদের কোন সনদ জমা দেয়া হয়নি। উপজেলার সূর্যমনি ইউনিয়নের ৭ ও ৯ নং ওয়ার্ডে মাতৃত্বকালীন ভাতার আওতায় ১০ জন সুবিধাভোগীর নাম রয়েছে। এই ১০ জনের মধ্যে একজনেরও নাম নেই ওই সময়ের (২০১৪ সালের অক্টোবর থেকে নবেম্বর মাস পর্যন্ত) ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের গর্ভবতী নারীদের তালিকায়। এরপর ভাতা প্রদানের তালিকায় দেয়া নাম ঠিকানা অনুযায়ী সরেজমিন ১০ জনের মধ্যে মাত্র ২ জনের ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়। আভযোগ আছে, অফিসের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে বাকি ৮ জনের টাকা আত্মসাত করা হয়েছে (যারা আসলে অবিবাহিত বা কুমারী), যেমন-রিনা বেগম, স্বামী কামাল এবং হামিদা বেগম, স্বামী ফারুক, গ্রাম নুরাইনপুর। তালিকায় এদের নাম থাকলেও বাস্তবে কারও অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তবে সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় শাখায় তাদের নামের হিসাবে যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে বাস্তবে তারা নেই বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে ওই তালিকা প্রস্তুতকারী কমিটির সদস্য ওই ইউপির ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য রেকসোনা বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ভুয়া নাম ঠিকানা দিয়ে কোন টাকা আত্মসাত করিনি। আর তাছাড়া সবার নাম আমি দেইওনি। গর্ভবতী নারীদের নামের তালিকায় সুবিধাভোগীদের নাম না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব গর্ভবতী নারীর নাম তালিকায় থাকে না। এ বিষয়ে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রত্যেকটা ইউনিয়নের প্রত্যেক গর্ভবতী নারীর নামের তালিকা করা হয়। এখানে কোন গর্ভবতী নারীর নাম বাদ পড়ার সুযোগ নেই। নিয়মানুযায়ী আর্থিকভাবে অসচ্ছল অসহায় দুস্থ গর্ভবতী নারীরাই কেবল এই ভাতা পাবেন অথচ আর্থিকভাবে যথেষ্ট সচ্ছল হওয়ার পরেও দাশপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (সংরক্ষিত মহিলা) তাহমিনা বেগমের মেয়ে সানজিদা খাতুনের নাম রয়েছে এই তালিকায়। সূত্র আরও জানায়. উপজেলা মহিলাবিষয়ক দফতরের অফিস সহকারী কামরুজ্জামানের মাধ্যমেই লেনদেন হয় এই টাকার। নাম সঠিক হলে ৫শ’ টাকা এবং নাম ভুয়া হলে ভাতার অর্ধেক টাকা নেয় অফিস। এভাবেই অনৈতিকভাবে এবং সরকারী নিয়ম-নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারী টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ রয়েছে এই ভাতা প্রদানের সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে উপজেলা মহিলাবিষয়ক দফতরের অফিস সহকারী কামরুজ্জামান ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন তাদের বিরুদ্ধে আনীত সকল অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, এ ধরনের অপরাধে সংশ্লিষ্ট দফতরের কোন কর্তা ব্যক্তি জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×