ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘তামিমসহ তিনজনই মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছে’

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৯ আগস্ট ২০১৬

‘তামিমসহ তিনজনই মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছে’

স্টাফ রিপোর্টার/ নিজস্ব সংবাদদাতা, নারায়ণগঞ্জ থেকে ॥ বিদেশীদের ওপর হামলার পরিকল্পনা নিয়ে গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম আহমেদ চৌধুরীসহ অন্য জঙ্গীরা নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় অবস্থান করছিল বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মঈনুল হক। রবিবার এসপি কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি একথা বলেন। তিনি আরও জানান, নিহত জঙ্গীদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শনিবার বাড়ির মালিকসহ ১২ জনকে আটক করা হলেও রবিবার ১১ জনকেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তথ্য গোপনের দায়ে বাড়িওয়ালা নুরুদ্দিন দেওয়ানের নামে মামলা দিয়ে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এদিকে, শনিবারের জঙ্গী নিধন অভিযানের ঘটনায় রবিবার নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। অন্যদিকে, ঢাকা মেডিক্যালে জঙ্গীনেতা তামিম চৌধুরীসহ তিনজনের ময়নাতদন্ত সমাপ্ত হয়েছে। তিনজনই মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক। অপরদিকে শনিবার রাতে পুলিশ পাইকপাড়া এলাকা থেকে জিহাদী বইসহ শিবির নেতা ইব্রাহিম খলিলকে গ্রেফতার করেছে। রবিবার প্রেস ব্রিফিংয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক সাংবাদিকদের বলেন, নারায়ণগঞ্জের নিহত জঙ্গীরা পাইকপাড়ার ওই বাড়িতে অবস্থান করছিল ২ জুলাই থেকে। তারা মূলত বিদেশীদের উপর হামলা করার পরিকল্পনার নিয়ে এখানে অবস্থান করছিল। নিহতরা একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করার কথা বলে এ বাসাটি ভাড়া নিয়েছিল বলে পুলিশ সুপার জানান। তিনি আরও জানান, ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শনিবার মোট ১২ জনকে পুলিশ থানায় আনলেও ১১ জনকে রাতেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে। শুধু বাড়ির মালিক নুরুদ্দিন দেওয়ানকে তথ্য গোপনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসপি জানান, বাড়িতে যেকোন লোক এলে তাদের সম্পর্কে তথ্য দেয়া বাড়িওয়ালার কাজ। কিন্তু বাড়িওয়ালা তা না করে তথ্য গোপন করেছেন। এসপি আরও জানান, বাড়িওয়ালা তাদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র চাইলে তারা একটি পরিচয়পত্রের ফটোকপি বাড়িওয়ালাকে দিয়েছিলেন। বাড়িওয়ালার কাছ থেকে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট নিয়ে গেছে যাচাই করতে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে সোহেল নামে এক শিবিরকর্মীকে জিহাদী বইসব আটক করা হয়েছে বলেও এসপি জানিয়েছেন। জঙ্গী নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা ॥ রবিবার নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরীসহ তিন জঙ্গী নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফারুক হোসেন জানান, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। এ মামলায় আসামি করা হয়েছে নিহত জঙ্গী তামিম চৌধুরী এবং তার সঙ্গে থাকা অপর দুইজনসহ অজ্ঞাতনামা অনেকের নামে। সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ এর সংশোধিত ২০১৩ সালের আইনে মামলাটি দায়ের করা হয়। জঙ্গী আস্তানার বাড়ির মালিক গ্রেফতার ॥ জঙ্গী নিহত হওয়ার পর শনিবার ওই বাড়ির মালিক নুরুদ্দিন দেওয়ান, তার স্ত্রী ও ছেলেসহ মোট ১২ জনকে আটক করা হয়েছিল। শুধু বাড়ির মালিক নূরুদ্দিন দেওয়ানকে গ্রেফতার দেখিয়ে অন্য ১১ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। জঙ্গীদের ব্যবহৃত বাড়ির মালিক নুরুদ্দিন তথ্য গোপন করায় তার বিরুদ্ধে অন্য একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া অভিযানের ঘটনায় দায়ের করা মামলায়ও নুরুদ্দিন দেওয়ানকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তিন জঙ্গীর গুলি লাগে মাথায় ॥ নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার অপারেশন ‘হিট স্ট্রং টোয়েন্টি সেভেন’য়ে নিহত তিন জঙ্গীই মাথায় গুলিবিদ্ধ। এদের মধ্যে একজনের হাতের কব্জি শরীর থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন ছিল। রবিবার দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে ওই তিন জঙ্গীর ময়নাতদন্ত শেষে ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহাকারী অধ্যাপক ডাঃ সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। ময়নাতদন্তকারী বোর্ডের চিকিৎসকদের ধারণা, অভিযানের এক পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করতে গিয়ে জঙ্গীর হাতে বোমা বিস্ফোরণ হয়। ফলে ওই জঙ্গীর হাতের কব্জি থেঁতলে যায়। তিন সদস্য ময়নাতদন্তকারী বোর্ডের অন্য সদস্যরা হচ্ছেনÑ ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক প্রদীপ বিশ্বাস ও কবীর চৌধুরী। এদিন বেলা ১১টায় ওই তিন জঙ্গীর ময়নাতদন্ত হয়। দুপুর ১টার দিকে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে ময়নাতদন্তকারী বের্ডের প্রধান সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, দুই জনের শরীরে স্প্রিন্টার ও গুলির চিহ্ন ছিল। গুলির কারণেই তাদের মৃত্যু হয়। মাথার সামনে দিয়ে গুলি ভেদ করে পেছন দিয়ে বেরিয়ে গেছে। তবে তামিমের শরীরে শুধু গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। তিনি জানান, জঙ্গীদের শরীর থেকে ঊরুর মাংস, চুল এবং রক্তের নমুনা মহাখালীর রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি তারা শক্তিবর্ধক ওষুধ বা মাদক সেবন করেছিলেন কিনা তা জানার জন্য ভিসেরা, রক্ত ও ইউরিন সংগ্রহ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
×