ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মীর কাশেমের মামলায় প্রসিকিউশনের ব্যর্থতায় ফের সিনহার অসন্তোষ

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৯ আগস্ট ২০১৬

মীর কাশেমের মামলায় প্রসিকিউশনের ব্যর্থতায় ফের সিনহার অসন্তোষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদ-প্র্রাপ্ত বদর বাহিনীর তৃতীয় শীর্ষ নেতা জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলীর মামলা পরিচালনায় প্র্রসিকিউশনের ব্যর্থতা তুলে ধরে আবারও অসন্তোষ প্র্রকাশ করেছেন প্র্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তিনি বলেন, রায় প্র্রকাশিত হলে দায়ী প্র্রসিকিউটরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা খোদ আইনমন্ত্রী প্রেস কনফারেন্স করে জানিয়েছিলেন। কিন্তু কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা আদালত এখনও জানে না। আশা করেছিলাম প্র্রসিকিউশন রিসাফল হবে। কিন্ত এরা পাল্লা ভারি করল। এ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে প্র্রধান বিচারপতি বলেন প্র্রসিকিউশন রিসাফল করেন। রিভিউ শুনানি শেষে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ট্রাইব্যুনালে মীর কাশেম আলীর মামলায় প্র্রসিকিউশনের পক্ষে যারা যুক্ত ছিলেন এবং যিনি তাদের দায়িত্ব দিয়েছেন (প্রধান প্র্রসিকিউটর), তাদের ওই দায়িত্বে থাকা ‘উচিত নয়’ নয় বলে আপীল বিভাগ মত দিয়েছে। এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, মীর কাশেম আলীর রিভিউ শুনানির শুরুতেই প্র্রধান বিচারপতি আমাকে বলেছেন, মীর কাশেম আলীর মামলা পরিচালনায় প্র্রসিকিউটরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে রায়ে বলেছিলাম। এখনও তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি? রাষ্ট্রের এ প্র্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি বিষয়টি সরকারকে জানাব।’ কোন কোন প্র্রসিকিউটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের তিনি নাম প্র্রকাশ না করে বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালে যারা মীর কাশেম আলীর মামলা পরিচালনা করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’ তবে মীর কাশেম আলীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আদালত মামলা পরিচালনায় প্র্রসিকিউশনের অদক্ষতার বিষয়টি বলেছেন। কিন্তু প্র্রসিকিউশনের দুর্বলতার দায় শুধু আসামিপক্ষ নেবে কেন?’ সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে রবিবার মীর কাশেম আলীর রিভিউ শুনানিতে প্র্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, রায় প্র্রকাশ হলে দায়ী প্র্রসিকিউটরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা খোদ আইনমন্ত্রী প্রেস কনফারেন্স করে জানিয়েছিলেন। কিন্তু কী ব্যবস্থা সরকার নিয়েছে তা আদালত জানে না। আদালতের এ বক্তব্যের সূত্র ধরে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, “১২ নম্বর অভিযোগেও সাজা হতো। ‘ট্রাইব্যুনালের প্র্রসিকিউটরদের অদক্ষতার কারণেই মীর কাশেম আলীর মতো একজন যুদ্ধাপরাধী ১২ নম্বর অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’ প্রধান বিচারপতি এ সময় বলেন, এটা মোটিভেটেডলিও হতে প্রারে। এটা যেন নাটক এক অংশ একজন পরিচালনা করবেন, আরেক অংশ আরেকজন। ট্রায়াল নিয়ে মকারি করেছেন। ভাল ভাল প্র্রসিকিউটর নিয়োগ করেন না কেন? ভাল ভাল প্র্রসিকিউটর নিয়োগ করেন। টাকা প্রয়সা দিতে কী সমস্যা?”এ সময় এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম উত্তরে বলেন, “ভাল প্র্রসিকউটর আছে। এদের এই মামলায় কেন যুক্ত করা হলো, সেটা বিষয়।” প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘যারা মামলাটি করেছেন, তাদের ফৌজদারি মামলা করার অভিজ্ঞতা কী রকম, সেটা কি খোঁজ নেয়া হয়েছে? এ ধরনের মামলায় যারা দক্ষ প্র্রসিকিউটর, তাদেরকে কেন অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি?’ প্র্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘প্রসিকিউটররা ট্রায়েলের নামে তামাশা করেছেন। তারা একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য ট্রাইব্যুনালে ভাগ করে পাঠ করেছেন। জাতিকে এ বিষয়টি জানা দরকার।’ পরে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমি আইনমন্ত্রীকে অবহিত করব।’ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্র্রসিকিউশন পক্ষ মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে মাবতাবিরোধী অপরাধের মোট ১৪টি অভিযোগ এনেছিল। ২০১৪ সালের ২ নবেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে ১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগে জসিমসহ মোট আটজনকে হত্যার দায়ে তাকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়। গত ৮ মার্চ আপিলের রায়ে ১২ নম্বর অভিযোগ থেকে কাশেমকে খালাস দেয়া হলেও ১১ নম্বর অভিযোগে জসিম হত্যার ঘটনায় সর্বোচ্চ সাজার রায়ই বহাল থাকে। এছাড়া আরও ছয় অভিযোগে মোট ৫৮ বছরের কারাদ-ের রায় বহাল রাখে আপীল বিভাগ।
×