ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার বক্তব্যের জঙ্গীদের প্রশ্রয় ॥ পুলিশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৯ আগস্ট ২০১৬

খালেদার বক্তব্যের জঙ্গীদের প্রশ্রয় ॥ পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলমান জঙ্গীবিরোধী অভিযান সম্পর্কে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। এক বিবৃতিতে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, জন্মাষ্টমী উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় যে বক্তব্য প্রদান করেন তা নিন্দনীয়। প্রকৃতপক্ষে গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে নিহত জঙ্গীদের হামলায় ২ পুলিশ কর্মকর্তা আত্মোৎসর্গ করেছেন এবং ২০ জন দেশী-বিদেশী মানুষ নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় যৌথবাহিনীর সফল অভিযানে সকল জঙ্গী নিহত হয় ও ৩২ জন দেশী-বিদেশী জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র-গুলি, গ্রেনেড, ছোরা ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে প্রাপ্ত আলামত বিশ্লেষণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে গুলশান হামলার ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন বাসস্থানের অবস্থান, অর্থদাতা, অস্ত্রদাতাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই বাসায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন পোশাক ও গ্রেনেড সংরক্ষণে ব্যবহৃত বালু ভর্তি বস্তাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। হামলায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক সদস্যই ছিল আত্মস্বীকৃত জঙ্গী। তারা তাদের পরিবার থেকে দীর্ঘদিন যাবত বিচ্ছিন্ন ছিল। জঙ্গীদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ এ মামলায় জড়িত মাস্টারমাইন্ডদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জে সোয়াতের সঙ্গে গুলিবিনিময়ে নিহত হয়েছে। ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। এতে আরও বলা হয়, কল্যাণপুরে জঙ্গীদের সঙ্গে গুলিবিনিময়ে ৯ জঙ্গী নিহত হয়। ওই ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে কল্যাণপুরে তাদের আস্তানা থেকে অস্ত্র-গুলি, গ্রেনেড, ছোরা ইত্যাদি আগ্নেয়াস্ত্র ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত আলামত ইলেকট্রনিক ডিভাইসে আত্মস্বীকৃত জঙ্গীদের বিভিন্ন ধরনের অডিও, ভিডিও ও স্থির চিত্র পাওয়া গেছে। যা অত্র ঘটনায় তাদের জঙ্গী সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে জড়িত থাকার পক্ষে অকাট্য প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত। তদন্তে জানা যায় এ জঙ্গীরা দীর্ঘদিন যাবত পরিবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন। এদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা ছিল। এ অভিযানে জীবিত আসামি রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন আছে। যে কোন ঘটনায় পুলিশের উদ্দেশ্য থাকে সকল আসামিকেই জীবিত গ্রেফতার করা। কিন্তু যখন কোন অভিযানে পুলিশের জীবন বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় ও সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ও বোমা ছুঁড়ে তখন অবশ্যই পুলিশ আইনগতভাবে আত্মরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার প্রয়োগ করে সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে বাধ্য হয়। অত্র ঘটনায় পুলিশ জান-মাল রক্ষার্থে সন্ত্রাসীদের প্রতি গুলি ছুড়েছে যাতে নয় জন সন্ত্রাসী নিহত ও এক জনকে জীবিত গ্রেফতার করা হয়েছে। যদি ঘটনা সাজানো হতো তাহলে রাকিবুল হাসান রিগ্যানকে জীবিত রাখা হতো না। ইতোমধ্যে রিগ্যানকে অনেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন এবং ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন। এছাড়াও ঘটনাস্থলের চারপাশের অনেক বাসিন্দা ঘটনা সম্পর্কে তাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেছেন যা ইতোমধ্যে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। গুলশান, কল্যাণপুর ও নারায়ণগঞ্জে তিনটি অভিযানই দিনের আলোতে সংঘটিত হয়েছে। এজন্য এ সকল অভিযানের কার্যক্রম স্থানীয় জনগণ সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছে। পুলিশকে সাধুবাদ ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করেছেন। দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও সোশ্যাল মিডিয়ায় পুলিশের কার্যক্রমকে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করা হয়েছে। জনগণের জানমাল রক্ষার্থে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তাদের পেশাদারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যেখানে আত্মোৎসর্গ করেছেন সেখানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের মতো দায়িত্বশীল একজন নাগরিকের কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য শুধু পুলিশকেই নয় বরং সমগ্র জাতিকে হতাশ করেছে। যেখানে নিহত জঙ্গীদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজন তাদের জঙ্গী সম্পৃক্ততার নিন্দা জ্ঞাপন করে লাশ গ্রহণে অসম্মতি জ্ঞাপন করছেনÑ সেখানে এমন শতভাগ সফল অভিযান সম্পর্কে মনগড়া, বানোয়াট তথ্য প্রদান করে অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা জঙ্গীদের কার্যক্রমকে সহায়তা তথা আশ্রয়-প্রশ্রয়ের শামিল।
×