ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মীর কাশেমের রিভিউ শুনানি শেষ, রায় কাল

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৯ আগস্ট ২০১৬

মীর কাশেমের রিভিউ শুনানি শেষ, রায় কাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বদর বাহিনীর কমান্ডার, চট্টগ্রামের বাঙালী খান, জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলীর মৃত্যুদ-ের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন ওপর শুনানি শেষ হয়েছে। রায় ঘোষণা করা হবে মঙ্গলবার। রবিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুই দফায় প্রায় দুই ঘণ্টা রিভিউ শুনানির পর প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপীল বেঞ্চ রায়ের জন্য এ দিন নির্ধারণ করেছেন। আপীল বেঞ্চে অন্যান্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান। এদিকে মীর কাশেম আলীর রিভিউ শুনানি শেষে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন হত্যার প্রসঙ্গে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ‘কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিনকে ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন ও হত্যার সঙ্গে মীর কাশেম আলীর সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। আর এই অভিযোগেই তাকে মৃত্যুদ- দিয়েছে আপীল বিভাগ। আশা করি, রিভিউ রায়ে এই মৃত্যুদ- বহাল থাকবে। অন্যদিকে মীর কাশেম আলীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘রাষ্ট্র পক্ষের সাক্ষীর স্বার্থে মীর কাশেমের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে যে তথ্য রয়েছে- এটা সত্যি নয়। আমরা মনে করি, এই হত্যাকা-ে তার সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই। এরপরও আপীল বিভাগ যদি তার দ- দেয়, তাহলে মৃত্যুদ- দেয়া ঠিক হবে না। মীর কাশেম আলীর রিভিউ শুনানি আসামি পক্ষের প্রধান আইনজীবী বুধবার (২৪ আগস্ট) শুরু করেন। এর পর দ্বিতীয় দিনের (২৮ আগস্ট) শুনানি শেষ হয়েছে। মীর কাশেমের আবেদনে আপীল বিভাগ কি সিদ্ধান্ত দেন, তা জানার অপেক্ষায় রয়েছে পুরো বাংলাদেশ। যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর শেষ আইনী সুযোগ এই রিভিউ আবেদন। এ আবেদনে রায়ের কোন পরিবর্তন না হলে তার সামনে কেবল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ থাকবে। রিভিউ খারিজ হলে এবং তিনি প্রাণভিক্ষা না চাইলে কিংবা আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হলে মৃত্যুদ- কার্যকরে কোন বাধা থাকবে না। ২০১৪ সালের ২ নবেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে মীর কাশেমকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়। এরপর গত ৮ মার্চ আপীলের রায়ে ওই সাজাই বহাল থাকে। ৬ জুন পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর তা পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য ১৯ জুন আবেদন করেন মীর কাশেম। রাষ্ট্রপক্ষ এরপর রিভিউ শুনানির দিন ধার্যের জন্য আবেদন করে। এর ধারাবাহিকতায় ২১ জুন চেম্বার বিচারপতি বিষয়টি নিয়মিত আপীল বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। গত বুধবার আসামিপক্ষের সময়ের আবেদন নাকচ করে রিভিউ শুনানি শুরু করে আদালত। মীর কাশেমের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন তার বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করার পর সেদিনের মতো শুনানি মুলতবি করা হয়। রবিবার সকাল সাড়ে ৯টার পর আবার রিভিউ শুনানি শুরু হলে খন্দকার মাহবুব তার অসমাপ্ত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তার বক্তব্যের পর রাষ্ট্রপক্ষে ব্ক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। শুনানি চলার মধ্যেই বেলা ১১টায় আপীল বিভাগ বিরতিতে যায়। বিরতি শেষে ফিরে এ্যাটর্নি জেনারেল তার যুক্তি উপস্থাপন শেষ করলে আসামিপক্ষে খন্দকার মাহবুব আবারও তার যুক্তি আদালতের সামনে তুলে ধরেন। শুনানি শেষে বেলা সাড়ে ১২টার পর আদালত রায়ের জন্য ৩০ অগাস্ট দিন ঠিক করে দেয়। দ- মওকুফ চেয়ে ৮৬ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ১৪টি যুক্তি তুলে ধরেছেন মীর কাশেম। রিভিউ দায়েরের পর তার প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছিলেন, এতে ‘ন্যায়বিচার’ পাবেন বলে তারা ‘প্রত্যাশা’ করছেন। অন্যদিকে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম অতীত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেছিলেন, ফৌজদারি মামলায় পুনর্বিবেচনায় রায় বদলের ‘খুবই সীমিত’। আশা করি দ- বহাল থাক ॥ এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, একটি চার্জের জন্য তাকে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়েছে। অথচ সে যে মুক্তিযোদ্ধা জসীমকে হত্যা করেছে, এর কোন চাক্ষুষ সাক্ষী নাই। আমি আদালতকে দেখিয়েছি, জসীম যে ডালিম হোটেলে বন্দী অবস্থায় ছিল, এটা প্রমাণিত। মীর কাশেম আলীর যে সেখানে সব নিয়ন্ত্রণ ছিল, জসীমকে যখন নির্যাতন করে ফেলে দেয়া হয়, তখন সেখানে মীর কাশেম ছিলেন, তা শফিউল আলম ২ নম্বর সাক্ষীকে বলেছেন। অন্য কয়েকজন সাক্ষী মীর কাশেমের উপস্থিতি ও অত্যাচার এবং জসীমকে ফেলে দেয়া, সেই সময়ে তার উপস্থিতির বিষয়ে সাক্ষী বলেছে। সাক্ষী নাই বলে আসামি পক্ষের বক্তব্য ঠিক না। কারণ মীর কাশেম যে ডালিম হোটেলের হর্তাকর্তা ছিল, জসীম ওখানে মারা গেছে, তা তারা নিজেরাই অস্বীকার করে নাই। যারা অত্যাচারিত হয়েছে, প্রক্যেকেই মীর কাশেম আলীর কথা বলেছে। ১২ নম্বর চার্জেও মীর কাশেম আলীর মৃত্যুদ- হতো, যদি প্রসিকিউশন ঠিকমত মামলাটি পরিচালনা করত। এ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, এটা ঠিক বলা যাবে না, তারা যেটা বলতে চায় যে, তিনি একজন দানশীল ব্যক্তি। আমি আদালতে বলেছি, তিনি ২৫ লাখ ডলার দিয়ে লবিস্ট নিয়োগ করেছেন, এটা আমি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি, যা আসামিপক্ষ অস্বীকার করেনি। কোন ব্যক্তি যিনি বিচারকে বন্ধ করতে পন্থা অবলম্বন করতে বিদেশী লবিস্ট নিয়োগ করতে পারেন, এই ধরনের ব্যক্তি কোনরকম ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য নয়। চরম দ- দেয়া উচিত হবে না ॥ আসামি পক্ষের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, মীর কাশেম আলী প্রত্যক্ষভাবে হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না, তাই তাকে চরম দ- দেয়া উচিত হবে না’। ফাঁসির রায়ের পুনর্বিবেচনা চেয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাশেম আলীর রিভিউ আবেদনের শুনানি শেষে এ মন্তব্য করেন তিনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘যে সাক্ষ্য-প্রমাণ আছে তার ভিত্তিতে অন্তত এ অভিযোগে (মুক্তিযোদ্ধা জসিম হত্যা) তাকে সাজা দেয়া যায় না। তারপরেও যদি আপনারা (আদালত) মনে করেন অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমাদের নিবেদন থাকবে যে, যেহেতু মীর কাশেম আলী সরাসরি এ হত্যাকা-ের সঙ্গে প্রিন্সিপাল অফেন্ডার হিসাবে জড়িত, এটা প্রমাণ হয়নি। সেহেতু তাকে ৩০২ ধারায় মৃত্যুদ- দেয়া আইনগতভাবে উচিত হবে না’।
×