ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অতি দরিদ্রের সংখ্যা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৯ আগস্ট ২০১৬

অতি দরিদ্রের সংখ্যা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারী-বেসরকারী নানা উদ্যোগের কারণে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর হার ২৩ শতাংশ থেকে কমে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। শহরে কমেছে চরম দারিদ্র্যের হার, বস্তিতে বসবাসকারীরা এখন আর হতদরিদ্র নয়। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ক্ষুদ্র ব্যবসার মাধ্যমে তারা নিজস্ব অবস্থানের পরিবর্তন ঘটিয়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় বাড়ায় তারা এখন মধ্যবিত্তের সারিতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। রবিবার রাজধানীতে ডেইলি স্টারের অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত বেসরকারী সংস্থা দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের (ডিএসকে) ‘সিঁড়ি’ প্রকল্পের আওতায় গৃহস্থালি জরিপের তথ্য উপস্থাপনকালে এসব তথ্য জানানো হয়। প্রকল্পের আওতায় ডিএসকে ঢাকা নগরের কড়াইল, কামরাঙ্গীরচর, মোহাম্মদপুর, বউবাজার, ঢাকা উদ্যান, মিরপুর, কল্যাণপুর বস্তিতে বসবাসরত ৩০ হাজার অতিদরিদ্র পরিবারের সামগ্রিক জীবনমান উন্নয়নে ২০০৯ সাল থেকে কাজ করে আসছে। গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. বিনায়ক সেন বলেন, ১৯৯১ সালে শহরে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৩ শতাংশ। ২০১৬ সালে তা হ্রাস পেয়ে ১৪ শতাংশে নেমে এসেছে। আর এখন অতিদরিদ্র রয়েছে ৫ শতাংশ, যা ১৯৯১ সালে ছিল ২৩ শতাংশ। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় বাড়ছে উল্লেখ করে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, বর্তমানে দরিদ্রদের আয় বেড়েছে। ফলে তারা এখন মধ্যবিত্তের সারিতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। দেশের এ পরিস্থিতিতে মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল অর্জনে আমরা খুব বেশি দূরে নই। বিনায়ক সেন তার গবেষণার আলোকে বলেন, দরিদ্র পরিবারগুলোর ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের জন্য অতিরিক্ত পুঁজি সংস্থান করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। প্রকল্প কতৃক গড়ে ওঠা সমিতিগুলো এক্ষেত্রে উপকারভোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় পুঁজি সরবরাহ করতে সক্ষম হবে বলেই আমার প্রত্যাশা। তিনি আরও বলেন, সাময়িকভাবে দরিদ্র দূর করলেও তা অগ্নিকা-, উচ্ছেদ, দুর্যোগ বা অন্য কোন দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আবার ফিরে আসতে পারে। এর সঠিক সমাধান বা স্থায়িত্ব ধরে রাখতে সরকারকে নতুন করে ভাবতে হবে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. মিহির কান্তি মজুমদার বলেন, দারিদ্রের সামনে দুস্থ শব্দ লাগিয়ে তাদের অসম্মান করা হয়। বর্তমানে আর কেউ দুস্থ নয়, তারাও অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। তবে দারিদ্র্যকে শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে হলে ইকো সিস্টেমে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সমবায় অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ মফিজুল ইসলাম বলেন, রাস্তায় যারা বসবাস করে তারা স্থায়ী নয়, যারা স্থায়ীভাবে ব্যবসা করছে তাদের অবস্থান কিন্তু ভাল। তবে গার্মেন্টস কর্মীদের থাকা-খাওয়ার অবস্থা অমানবিক, তারা দরিদ্রসীমার উর্ধে উঠতে পেরেছে কি-না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ডিএসকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ঋণ) ড. মাসুদুল কাদের বলেন, বস্তিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নে এ প্রকল্প যে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছে তা ভবিষ্যতে অনেকের জন্য অনুকরণীয় হয়ে পথ দেখাবে। কড়াইল বস্তির সেতেরা বেগম বলেন, আমরা এখন আর হতদরিদ্র নই, তবে দরিদ্রতা এখনও আমাদের নিত্যসঙ্গী। নানা ধরনের প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যবসা করে আমাদের অবস্থানের উত্তরণ ঘটেছে। কড়াইল বস্তিতে তিন লাখ মানুষের বসবাস, আমরা এখানে ২৫ বছর যাবত বসবাস করছি। তবে বারবার বস্তি ভেঙ্গে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়, ফলে আমরা প্রতিনিয়ত শঙ্কার মধ্যে থাকি। নাগরিক অধিকার হিসেবে সরকারের কাছে আমাদের পুনর্বাসন চাই। বস্তির আরেক সদস্য আনারকলি বলেন, বস্তিতে বসবাস নিয়ে আমরা এখন আতঙ্কের মধ্যে থাকি। সরকারের কাছে আমাদের পুনর্বাসনের দাবি দীর্ঘদিনের। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিএসকের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রফেসর মাহফুজা খানম।
×