ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্কে নতুন মাত্রা, কেরি আসছেন আজ

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৯ আগস্ট ২০১৬

ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্কে নতুন মাত্রা, কেরি আসছেন আজ

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঢাকা-ওয়াশিংটনের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেয়ার লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি আজ সোমবার ঢাকায় আসছেন। তার এই সফরে গণতন্ত্র, উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও মানবাধিকার বিষয়ে আলোচনা প্রাধান্য পাবে। জন কেরির ঢাকা সফরের সময় জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে নতুন প্রস্তাব দেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ঢাকার মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দীর্ঘমেয়াদী ও বিস্তৃত সম্পর্ক আরও জোরদার করার লক্ষ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ঢাকায় আসছেন। বিভিন্ন বৈশ্বিক বিষয়ে দুই দেশের ক্রমবর্ধমান সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেরি বাংলাদেশের সরকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়াও গণতন্ত্র, উন্নয়ন, নিরাপত্তা এবং মানবাধিকার বিষয়ে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী দ্বিপক্ষীয় অংশীদারিত্ব আরও শক্তিশালী করার ওপরেও তিনি জোর দেবেন। সোমবার সকাল সাড়ে নয়টায় জন কেরি জেনেভা থেকে ঢাকায় পৌঁছাবেন। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেলা সাড়ে এগারটায় ধানম-ির বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুপুর বারোটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে দুপুর একটায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন জন কেরি। সেখানে তার সম্মানে মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী। বেলা তিনটায় মিরপুর শেওড়াপাড়ায় কে টেক্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল পোশাক কারখানা পরিদর্শন করবেন জন কেরি। বিকেল চারটায় ধানম-ির ইএমকে সেন্টারে নাগরিক ও তরুণ সমাজের প্রতিনিধিদের সামনে বক্তৃতা করবেন। বিকেল পাঁচটায় মার্কিন দূতাবাসের কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন জন কেরি। এছাড়া বিকেলে ঢাকা ছাড়ার আগে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করবেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সন্ধ্যা ছয়টা চল্লিশ মিনিটে তিনি দিল্লীর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানাবেন পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক। জন কেরির সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে রবিবার ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেছেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের সময় সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে দেশটির পক্ষ থেকে নতুন প্রস্তাব দেয়া হবে। কেরির ঢাকা সফরে সন্ত্রাস প্রতিরোধে কৌশলগত সহায়তার পাশাপাশি বাংলাদেশকে অর্থ সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হবে। বার্নিকাট বলেন, সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ফোকাস। এছাড়া অংশীদারিত্ব সংলাপ, নিরাপত্তা সংলাপের মাধ্যমে দু’দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। সোমবার প্রথমবারের মতো জন কেরি বাংলাদেশে আসছেন উল্লেখ করে মার্শা বার্নিকাট বলেন, এ সফরে দু’দেশের মধ্যকার সকল বিষয় নিয়েই আলোচনা হবে। রবিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। জন কেরি কেনিয়া, নাইজেরিয়া, সৌদি আরব ও সুইজারল্যান্ড সফর শেষে ঢাকায় আসছেন। জেনেভায় তিনি রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতীয় উপদেষ্টা শেখ তাহনুন বিন জায়েদ বিন নাহিয়ানের সঙ্গে বৈঠক করছেন। বৈঠকে সিরিয়া ও লিবিয়া পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন কেরি। সূত্র জানায়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জন কেরির সফর উপলক্ষে ঢাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া জন কেরির সফরের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি নিরাপত্তা দল ঢাকায় এসেছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন ইতোমধ্যেই ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। ওবামা প্রশাসনের শেষ সময়ে জন কেরির ঢাকা সফর দুই দেশের মধ্যে বন্ধন আরও জোরাল করবে বলে আশাপ্রকাশ করেছে উভয় দেশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির আসন্ন ঢাকা সফরের সময় সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। অনেক দিন ধরে তার আসার কথা ছিল। তিনি আসছেন বলে আমরা আনন্দিত। জন কেরির এই সফরে সম্পর্কের সব দিক নিয়ে, বিশেষ করে বর্তমান আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা হবে। গত পহেলা জুলাই রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলায় ১৭ বিদেশীসহ ২০ জিম্মি নিহত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নির্মূলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত বলে প্রেসিডেন্ট ওবামার পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী গত বছর কেরিকে ঢাকা আসার আমন্ত্রণ জানান। সে সময় তিনি শীঘ্রই আসবেন বলে জানিয়েছিলেন মন্ত্রী। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কেরির এই সফর হচ্ছে হঠাৎ করেই। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেরি ভারতের ঢাকা সফরের পরে দিল্লী যাবেন। দিল্লী সফরকালে তিনি ভারতের ঊর্ধতন সরকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। আগামীকাল মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেরি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী পেনি প্রিৎস্কার যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের মধ্যকার দ্বিতীয় কৌশলগত ও বাণিজ্যিক সংলাপে সহ-সভাপতিত্ব করবেন। এই সংলাপে আলোচনায় ভারতের পক্ষে সহসভাপতিত্ব করবেন দেশটির পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এবং বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারাম। তাদের সঙ্গে থাকবেন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতীয় প্রতিনিধি দল। যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মধ্যকার টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, জীবিকা, ব্যবসা ও বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং বিশ্বব্যাপী টেকসই আইনের শাসন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটি স্বাক্ষর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। রাজধানীর গুলশান হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বাংলাদেশ ঘুরে যান। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বিশেষজ্ঞ সহযোগিতার প্রস্তাব দেন তিনি। গত জুনে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব সংলাপে আইএস ও আল কায়েদার মতো জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করতে সম্মত হয় দুই দেশ। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্টারটেররিজম পার্টনারশিপস ফান্ডেও (সিটিপিএফ) বাংলাদেশের যোগ দেয়ার ঘোষণা আসে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে জন কেরির এটি প্রথম ঢাকা সফর। এছাড়া বিগত পাঁচ বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এটি দ্বিতীয় ঢাকা সফর। এর আগে ২০১২ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন। সে সময় হিলারি বাংলাদেশ সফর শেষে ভারতেও গিয়েছিলেন। সূত্র জানায়, জন কেরি এমন এক সময়ে ঢাকায় আসছেন, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। এছাড়া বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী হামলা বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন দেশ ও জোটের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে ওবামা প্রশাসন। এতে কেরির ঢাকা সফরে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর পাশাপাশি সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। তাছাড়া রাজধানীর গুলশানে জঙ্গী হামলার পর বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের উদ্বেগ রয়েছে। বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে সহায়তার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
×