ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের বিরোধ তুঙ্গে

জাবেদ-মোছলেম মুখোমুখি

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ২৯ আগস্ট ২০১৬

জাবেদ-মোছলেম মুখোমুখি

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগে বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। নেতারা খোলামেলাভাবেই বক্তব্য রাখছেন একে অপরের বিরুদ্ধে। সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদের নাম ধরে তীব্র সমালোচনা করেছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। তিনি বলেন, রাজনীতির সকল ধারা উপধারাকে উপড়ে ফেলে টাকার বিনিময়ে মাদক সম্রাট, ডাকাত, চোর ও চাঁদাবাজদের পদ পদবি দেয়ার বাণিজ্য করছেন দক্ষিণ জেলা সভাপতি। দল কোন ব্যক্তির সম্পত্তি নয়। তিনি আওয়ামী রাজনীতিকে কলঙ্কিত করেছেন। অপরদিকে, জনসম্মুখে এ ধরনের বক্তব্যকে অশোভন উল্লেখ করে মোছলেম উদ্দিন বলেন, আমি হঠাৎ করে রাজনীতিতে আসিনি। আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্বশীল নেতারা দেখবেন। ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ গত ২৬ আগস্ট বোয়ালখালীর একটি অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে ক্ষোভ ঝাড়েন মোছলেম উদ্দিনের আহমদের কর্মকা-কে নিয়ে। তিনি বলেন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ যখন গঠিত হয় তখন দলকে সুসংগঠিত করা হবে এ আশায় বুক বেঁধেছিলেন আওয়ামী পরিবারের নেতাকর্মীরা। কিন্তু রাজনীতিতে পকেট স্বার্থে ব্যবহার করতে করতে এ নেতা দক্ষিণ চট্টগ্রাম তথা সারাদেশে ‘মোছলেম সওদাগর’ নামে পরিচিতি পেয়েছেন। রাজনীতিকে পুঁজি করে এ নেতা অপরাজনীতির চর্চায় লিপ্ত হয়েছেন অভিযোগ করে প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, মাদক সম্রাট, ডাকাত, চোর এমনকি জামায়াত-শিবির ও বিএনপি নেতাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিনি বাণিজ্য করে যাচ্ছেন। তিনি অপরাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানান। প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিত্বের দায়িত্বে দীর্ঘদিন ছিলেন প্রতিমন্ত্রী জাবেদের পিতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। মোছলেম উদ্দিন ছিলেন সেই কমিটির সাধারণ সম্পাদক। পরবর্তীতে আখতারুজ্জামান দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ লাভ করায় সভাপতির দায়িত্ব পান তিনি (মোছলেম)। চট্টগ্রামের প্রবীণ নেতা বাবুর মৃত্যুর পর আনোয়ারা আসন থেকে উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তাঁর পুত্র জাবেদ। মূলত তখন থেকেই সক্রিয় রাজনীতিতে। বর্তমানে তিনি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। শুরুতে সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদের সঙ্গে তাঁর বিরোধ দেখা যায়নি। এ বিরোধ প্রকাশ্য হয় বিগত ইউপি নির্বাচনে আনোয়ারা ও পশ্চিম পটিয়ায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও দু’ভাগ হয়ে পড়েন। একটি অংশ ধর্ণা দেন সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদের কাছে। অপর অংশটি সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের আর্শিবাদ লাভের চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কমিটির সভাপতির পছন্দের প্রার্থীরাই মনোনয়ন লাভ করেন। তবে তৃণমূলের ভোটের মাধ্যমেই তারা মনোনয়ন পান বলে দাবি মোছলেম উদ্দিন আহমেদের। ইউপি নির্বাচন শেষ হয়ে গেলেও বিরোধের যে বীজ রোপিত তখন হয়েছে তা এখন ডালপালা গজিয়ে বিস্তৃতি লাভ করেছে। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগে একজন প্রবীণ নেতা হিসেবে পরিচিতি রয়েছে মোছলেম উদ্দিন আহমদের। অপরদিকে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ সক্রিয় রাজনীতিতে নবীন হলেও ছোট থেকেই রাজনীতি সংস্পর্শে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। সে হিসেবে রাজনীতিতে আমি নতুন এসেছি বলে যদি কেউ মনে করেন তাহলে ভুল করবেন। আমার সরলতাকে যেন কেউ দুর্বলতা না ভাবেন। জাবেদ বলেন, তিনি (মোছলেম উদ্দিন) নানা অনিয়ম করে চলেছেন। স্বেচ্ছাচারিতার কারণে নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার ভাল সম্পর্ক নেই। সংগঠনকে ব্যবহার করে চলছে বাণিজ্য। কারও ব্যক্তি স্বার্থে সংগঠন ধ্বংস হতে পারে না। অপরদিকে, মোছলেম উদ্দিন আহমেদ কোন সভায় প্রকাশ্যে কিছু না বললেও সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এসব কথা পাবলিক মিটিংয়ে বলার বিষয় নয়। কোন দোষ ত্রুটি থাকলে তা দেখার জন্য কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ রয়েছেন। সবার উপরে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, আমি দীর্ঘদিন রাজনীতি করে এ পর্যায়ে এসেছি। হঠাৎ করে রাজনীতিতে এসে নেতা হইনি। এদিকে, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পর্যায়ে বিরোধের প্রভাব ক্রমেই প্রসারিত হচ্ছে তৃণমূল পর্যায়ে। বিভিন্ন থানা ও ইউনিয়ন কমিটি এখন অনেকটাই বিভক্ত। উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের আওয়ামী রাজনীতিতে বিরোধ নতুন কিছু নয়। মহানগরীতে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দিনের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলায় আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু যতদিন সভাপতি পদে ছিলেন ততদিন অভ্যন্তরীণ বিরোধ চাপা ছিল। বাবুর মৃত্যুর পর দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ অস্থির হতে শুরু করেছে।
×