এ সপ্তাহের গোড়ার দিকে ইতালিতে ভূমিকম্পে কয়েক শ’ লোকের মৃত্যু হয়েছে। এখন বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন যে, সামনে আরও বড় ধরনের দুর্যোগ রয়েছে। পৃথিবীর বৃহত্তম চ্যুতি রেখা বরাবর আরও বড়মাত্রার ভূমিকম্প অপেক্ষা করছে।
অস্ট্রেলিয়ার ইউটিএস জিওটেকনিক্যাল এ্যান্ড আর্থকোয়েক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সিনিয়র লেকচারার ডক্টর বেহজাদ ফাতাহি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, বিশ্বে কেউ নিরাপদ নয়। আর এই ভূমিকম্প হবে কিনা, এটা প্রশ্ন নয়; প্রশ্ন হচ্ছে ‘কখন’ হবে। ফাতাহি নিউজ ডটকম এইউকে বলেন, মধ্যপ্রাচ্য, ভারত, চীন জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রে বহু ৬ মাত্রার উপরের ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। কিছু চ্যুতি রেখা রয়েছে যেখান থেকে একবারও তাদের শক্তির নিঃসরণ ঘটেনি।
বিভিন্ন গতিতে ও বিভিন্ন দিকে অগ্রসরমান দুটি টেকটোনিক প্লেটের প্রতিনিধিত্বকারী একটি চ্যুতি রেখা যদি শক্তি নিঃসরণ না ঘটায় তাহলে এখানে চাপ বাড়তে থাকে। আর যত দীর্ঘ সময় ওই চ্যুতি রেখা থেকে শক্তি নিঃসৃত না হবে, চূড়ান্ত নিঃসরণের সময় ততটাই তা বেশি শক্তিশালী হবে।
ফাতাহি বলেন, কমপক্ষে পাঁচ থেকে দশটি ভূমিকম্প আঘাত হানার অপেক্ষায় রয়েছে। তবে আমরা জানি না এই ভূমিকম্পসমূহ কখন ঘটতে যাচ্ছে। এসব ভূমিকম্প প্রক্রিয়াধীন কিনা, সেটি প্রশ্ন নয়। প্রশ্ন হচ্ছেÑ সেটি কখন ঘটবে। যুক্তরাষ্ট্রে বিজ্ঞানীরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন যে, ক্যালিফোর্নিয়া, আলাস্কা ও হাওয়াই বিরাট ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে। ২০০৮ সালে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সতর্ক করে দেয় যে, ৭ দশমিক ৮ বা এর চাইতে বেশি মাত্রার ভূমিকম্পে ১ হাজার ৮শ’ লোকের মৃত্যু, কমপক্ষে ৫০ হাজার আহত এবং ২০ হাজার কোটি ডলারের ক্ষতি হতে পারে। ফেডারেল এজেন্সি আরও হুঁশিয়ার করে দেয় যে, ভূমিকম্পের কারণে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ছয় মাসের জন্য অচল হয়ে পড়তে পারে। সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া আর্থকোয়েক সেন্টারের (এসসিইসি) যোগাযোগ, শিক্ষা ও তথ্য সরবরাহ বিষয়ক পরিচালক মার্ক বেনথিয়েন সতর্ক করে দেন যে, ইতালির সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের চাইতে বড় ভূমিকম্প আঘাত হানার আশঙ্কা বেড়ে গেছে। বেনথিয়েন ব্যাখ্যা করে বলেন, ক্যালিফোর্নিয়ার সান এ্যান্ড্রিয়াস ফলেট অথবা ক্যালিফোর্নিয়ার অন্য শত শত চ্যুতির যে কোনটিতে প্রকৃতপক্ষে যে কোন সময় ইতালির ভূমিকম্পের চাইতে অনেক বড় ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। এটা হচ্ছে ঠিক পৃথিবীর ভূ-ত্বকের প্লেট সীমানার ওপর বসবাসের বাস্তবতা। তিনি বলেন, চাপ ক্রমশ বাড়ছে এবং শেষ পর্যন্ত এটা আপনার হাতের আঙ্গুল ফস্কে যাওয়ার মতো বেরিয়ে যায় এবং ওই চাপমুক্ত হয়।
বেনথিয়েন ব্যাখ্যা করেন, বৃহৎ ক্যালিফোর্নিয়া ফল্টের যে কোন একটি থেকে যে ভূমিকম্প ঘটবে তার আওতা হবে ইতালির চাইতে বেশি। এই কম্পনও হবে আরও ব্যাপক এবং দীর্ঘসময় ধরে। তিনি আভাস দেন যে, দুই মিনিট পর্যন্ত এই শক্তিশালী কম্পন স্থায়ী হতে পারে। তিনি অবশ্য একটি ইতিবাচক বিষয় তুলে ধরে বলেন, ক্যালিফোর্নিয়ার অবস্থা ইতালির মতো নয়। ইতালিতে বহু প্রাচীন ভবন ও কাঠামো রয়েছে। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়ায় ভবনসমূহ অপেক্ষাকৃত নতুন এবং বেশিরভাগই নির্মিত হয়েছে ভূমিকম্পের বিষয় মাথায় রেখে। এ কারণে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ক্যালিফোর্নিয়ায় অপেক্ষাকৃত কম প্রাণহানি হবে। বেনথিয়েনের মতে, বড় উদ্বেগের বিষয় হচ্ছেÑ শক্তিশালী একটা ভূমিকম্প আঘাত হানার পর কী ঘটবে। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন যে, ভূমিকম্পের সময় অবকাঠামো ক্ষেত্রে বিপর্যয় ঘটলে লোকজনকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে অথবা লুটপাট ও সহিংসতার মতো আরও খারাপ দৃশ্য দেখতে হবে। ক্যালিফোর্নিয়ার মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে অবস্থিত ডায়াবলো ক্যানিয়নে এখনও একটি পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে। ভূমিকম্পের কারণে ফুকুশিমার মতো বিপর্যয় এখানেও ঘটতে পারে। ভূমিকম্প ব্যাপারে সঠিকভাবে পূর্বাভাস দেয়া অসম্ভব। ফাতাহি বলেন, সাধারণভাবে ভূমিকম্প আঘাত হানার মাত্র মিনিটখানেক আগে আপনি এ ব্যাপারে অনুধাবন করতে পারেন। কেননা ভূমিকম্পের প্রক্রিয়া শুরু হয় ভূগর্ভের কয়েক কিলোমিটার অভ্যন্তরে।
সূত্র : ম্যানিলা টাইমস
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: