ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দু’লাখ কর্মী রুজি-রুটি হারানোর মুখে

গো-হত্যা ঘিরে রাজনীতির মাসুল গুনছে ভারতের চর্মশিল্প

প্রকাশিত: ০৪:০২, ২৯ আগস্ট ২০১৬

গো-হত্যা ঘিরে রাজনীতির মাসুল গুনছে ভারতের চর্মশিল্প

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কাঁচা চামড়ার যোগানের টানে সমস্যার পাকে ট্যানারি। কাজ হারানোর মুখে প্রায় দু’লাখ শ্রমিক। আবার ভিন্ন দেশ থেকে নগদে কাঁচামাল কিনতে বাধ্য হওয়ায় টান পড়ছে মূলধনে। ফলে উৎপাদন ছাঁটাইয়ে বাধ্য হচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা। কমছে রফতানিও। এ জোড়া সঙ্কটে জেরবার হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গও। চর্ম ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, গো-হত্যা নিয়ে বিতর্ক বিভিন্ন রাজ্যে তা বন্ধ করার ফরমান। আর সব থেকে বেশি করে রাজনৈতিক পরিসরে এ নিয়ে ক্রমাগত জল ঘোলা হতে থাকা। মূলত এ ত্র্যহস্পর্শেরই বলি দেশের এক হাজার ১শ’ কোটি ডলারের (প্রায় ৭৪ হাজার কোটি টাকা) চর্মশিল্প। পরিস্থিতি এমনই যে, কাঁচা চামড়ার অভাবে খাবি খাচ্ছে ভারতের প্রায় দেড় হাজার ট্যানারি। রুজি-রুটি হারাচ্ছেন সেখানে কাঁচা থেকে তৈরি চামড়া প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত বহু শ্রমিক। সমস্যার শিকড় কোথায় তা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উদাহরণ থেকেই স্পষ্ট। কাউন্সিল ফর লেদার এক্সপোর্টসের পূর্বাঞ্চলীয় চেয়ারম্যান রমেশ জুনেজার দাবি, পশ্চিমবঙ্গে চর্মশিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচা চামড়ার মাত্র ২০ শতাংশ স্থানীয়। বাকি ৮০ শতাংশ আসে অন্য রাজ্য থেকে। তার মধ্যে আবার ২৫ শতাংশের যোগান দেয় একা মহারাষ্ট্রই। কিন্তু গো-হত্যা সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞার কারণে সে যোগান কার্যত শুকিয়ে গেছে বলে অভিযোগ চামড়া ব্যবসায়ীদের। তাদের কথায়, অনেক রাজ্য থেকে কাঁচা চামড়া আসা ৪০-৫০ শতাংশ কমে গেছে। কোথাও থেকে আসা একেবারে বন্ধ। এ অবস্থায় জোড়া সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। প্রথমত, কাঁচা চামড়া কেনার পর বিভিন্ন ধাপে তার প্রক্রিয়াকরণ করা হয় ট্যানারিতে। তৈরি হয় চামড়ার চাদর। তা থেকে ব্যাগ-জুতা-বেল্টের মতো বিভিন্ন চর্মপণ্য তৈরি করে সংস্থাগুলো। এখন ভিন্ন? রাজ্য থেকে কাঁচামালের যোগানে টান পড়ায় বিদেশ থেকে তা আমদানিতে বাধ্য হচ্ছে তারা। কিন্তু সমস্যা হলো, বিদেশ থেকে সরাসরি প্রক্রিয়া করা চামড়াই কিনতে হয়। ফলে ট্যানারির কাজ কার্যত থাকছে না। আমদানি বৃদ্ধির কারণে ব্যবসায়ী ও শ্রমিক দু’পক্ষই সমস্যায়। বানতলার চর্ম ব্যবসায়ী ও কাউন্সিল ফর লেদার এক্সপোর্টসের সদস্য জিয়া নাফিসের অভিযোগ, এ কারণে দেশে প্রায় দু’লাখ কর্মী রুজি-রুটি হারানোর মুখে। দ্বিতীয়ত, এ কারণে সমস্যায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও। কলকাতা লেদার ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম কর্তা ইমরান আহমেদ খান জানান, আমদানি বেড়ে যাওয়ায় নগদ টাকায় টান পড়ছে। কারণ, ভিন্ন রাজ্য থেকে কাঁচা চামড়া কেনার টাকা মেটাতে সময় পাওয়া যেত। কিন্তু বিদেশ থেকে আমদানির টাকা মেটানোর পর তবে ওই কাঁচামাল হাতে আসে। ফলে বাধ্য হয়ে উৎপাদন কমাচ্ছেন অনেকে। আর এ চিত্র শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, সারা ভারতেই। গো-হত্যা নিয়ে রাজনীতির আকচা-আকচিতে সঙ্কটে এক হাজার ৫০০ ট্যানারি।
×