ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এবার কোরবানির পশুর সঙ্কট হবে না

প্রকাশিত: ০৪:০১, ২৯ আগস্ট ২০১৬

এবার কোরবানির পশুর সঙ্কট হবে না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চট্টগ্রামে চার লাখ ৯১ হাজার কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে, যা এবারের চাহিদার তুলনায় ১০ শতাংশ কম। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, মিয়ানমার ও নেপাল থেকে আমদানি এবং অন্য জেলা থেকে সরবরাহের মাধ্যমে এ ঘাটতি পূরণ হবে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। সূত্র জানিয়েছে, ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম জেলায় মোট চার লাখ ৯২ হাজার পশু কোরবানি দেয়া হয়েছে। এর বেশিরভাগই স্থানীয় গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়া। এবার চট্টগ্রামে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ পশু কোরবানি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত এ অঞ্চলে কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে চার লাখ ৯১ হাজার। দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের কুষ্টিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, খুলনা, কুমিল্লাসহ কয়েকটি জেলা থেকে প্রতি বছর চট্টগ্রামে কোরবানির পশু সরবরাহ করা হয়। এছাড়া চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর চাহিদা মেটাতে পার্শ¦বর্তী দেশ ভারত, মিয়ানমার ও নেপাল থেকে গরু আমদানি করা হয়। এবার দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে বন্যার কারণে গবাদিপশুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে সঙ্কটের আশঙ্কা নেই বলে আশ্বস্ত করেছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, সামীন্তবর্তী রাজশাহী, যশোর, খুলনা, সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৩১টি করিডর দিয়ে গরু আমদানি করা হতো। দেশের চাহিদার ২০ শতাংশ গরু ভারত থেকে আমদানি হতো। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশে গরু রফতানিতে ভারত সরকারের কড়াকড়ির পর দেশে উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। ২০১৫ সালে কোরবানির চাহিদার সিংহভাগ দেশীয় উৎপাদিত পশু দিয়ে মেটানো হয়েছে। গত বছর চাহিদার তুলনায় উৎপাদনে কিছুটা ঘাটতি থাকলেও এবার তা থাকবে না বলে জানিয়েছিল প্রাণিসম্পদ বিভাগ। তবে উত্তরাঞ্চলে বন্যার কারণে কিছুটা সঙ্কট দেখা দিতে পারে। চট্টগ্রাামের গরু ব্যবসায়ীরা জানান, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে গরুর খামার অনেক বেড়েছে। লাভজনক হওয়ায় মানুষ এখন গরু পালনের দিকে ঝুঁকছেন। উত্তরাঞ্চল ছাড়াও তিন পার্বত্য জেলা, চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী, আনোয়ারা, পশ্চিম পটিয়া, সাতকানিয়া, রাঙ্গুনিয়ায় ব্যক্তি উদ্যোগে গরুর খামার করা হয়েছে। অন্যান্য বছরের মতো এবারও মিয়ানমার ও নেপাল থেকে কোরবানির আগে গরু আমদানি করা হবে। চট্টগ্রামের বিবিরহাট বাজারের গরু ব্যবসায়ী আকবর আলী বলেন, দেশী জাতের গরু পালন আগের চেয়ে বেড়েছে। সরকার গরু উৎপাদনের দিকে নজর দিলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশে কোরবানির পশু সঙ্কট শূন্যের কোটায় নেমে আসবে। এছাড়া গো-খাদ্যের দাম কমানো, বিনা সুদে ঋণ প্রদান করলেই খামারিদের মধ্যে গরু উৎপাদনের হার বাড়বে। চট্টগ্রামের কালামিয়া বাজারের স্থানীয় জাতের গরু উৎপাদনকারী শামসুল মিয়া বলেন, চট্টগ্রামে দেশী গরুর চাহিদা বেশি। আর গরু পালন কিছুটা লাভবান হওয়ায় স্থানীয় জাতের গরু উৎপাদনের হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে গো- খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে গরুর দাম বাড়বে। গরু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি অলি আহমদ কোম্পানি জানান, ভারতের আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে প্রতি বছর প্রায় ৫০-৬০ লাখ গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করে। প্রতি বছর কোরবানির ঈদের আগে সীমান্তে গরু আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। কিন্তু চাঁদ ওঠার পর তা কিছুটা শিথিল হয়। ফলে তেমন সঙ্কট হয় না। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটবে না। তাছাড়া সরকার যদি গো-খাদ্যের দাম কমায় তাহলে গরুর দামও কমবে। চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ রেয়াজুল হক জসিম জানান, আমদানিনির্ভরতা কমাতে কৃষি ও প্রাণিসম্পদ বিভাগকে আগে থেকেই সর্তক করেছিল সরকার। ২০১৪ সালে ভারত গরু আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপের পর দেশীয় খামারি ও গরু উৎপাদনকারীরাও গরু পালনে মনোযোগী হয়েছেন। এর সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। এবার কোরবানির পশু সঙ্কট হবে না। তিনি জানান, চট্টগ্রামে নতুন আত্মীয়র বাড়িতে কোরবানির পশু উপহার দেয়া ও একাধিক কোরবানির রেওয়াজ রয়েছে। আবার প্রতি বছর কোরবানিদাতার হারও বাড়ছে। ফলে স্থানীয় উৎপাদনের সঙ্গে কোরবানির সামঞ্জস্যতা বজায় থাকে না।
×