ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের যাত্রা শুরু ১ সেপ্টেম্বর

প্রকাশিত: ০৪:০১, ২৯ আগস্ট ২০১৬

বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের যাত্রা শুরু ১ সেপ্টেম্বর

রহিম শেখ ॥ বিনিয়োগের পরিধি বাড়াতে অবশেষে আলোর মুখ দেখছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নিজস্ব ভবনে এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে আগামী ১ সেপ্টেম্বর। শনিবার ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৬’ কার্যকরের এ ঘোষণা দিয়ে গেজেট জারি করেছে সরকার। এর আগেই প্রাইভেটাইজেশন কমিশন এবং বিনিয়োগ বোর্ডের বিলুপ্তি ঘোষণা করা হবে। সরকারের নতুন এই প্রতিষ্ঠানটি দেশ-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। এই কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগে ওয়ানস্টপ সার্ভিস এক ছাদের নিচে সব সেবা দেয়া গেলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় গন্তব্য হবে বাংলাদেশ। প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের অধীনে থাকা জমি ব্যবহারে আগামী ২ বছরের মধ্যে ৫ হাজার কোটি টাকার নতুন বিনিয়োগ আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, বেসরকারীকরণ কমিশন গত ৫ বছরে পাট, বস্ত্র এবং চিনি ও খাদ্যশিল্প কর্পোরেশনের অধীনে লোকসানি ৩৯টি প্রতিষ্ঠানের এক হাজার ৫১৬ একর জমি অব্যবহৃত বলে চিহ্নিত করে। এই সময়ে এক একর জমিও বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় ছেড়ে দিতে পারেনি কমিশন। অথচ একই সময়ে শুধু জমির অভাবে ফেরত গেছে স্যামসাং, সনি, এ্যাডিডাসসহ আরও কয়েকটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ। এদিকে বেসরকারী বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিনিয়োগ বোর্ড কাজ করলেও আশানরূপ বাড়েনি বেসরকারী বিনিয়োগ। অন্যদিকে বন্ধ কিংবা অলাভজনক সরকারী কল-কারখানা বেসরকারী খাতে ছেড়ে উৎপাদনে নিয়ে আসার জন্য কাজ করলেও প্রাইভেটাইজেশন কমিশন তাদের সফলতা দেখাতে পারেনি। এমন বাস্তবতায় ২০১৪ সালের ১ এপ্রিল বেসরকারীকরণ কমিশন এবং বিনিয়োগ বোর্ডকে একীভূত করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় আইন ও সাংগঠনিক কাঠামোর যাচাই-বাছাই শেষে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তপক্ষ আইন-২০১৫’র খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। বিডাকে শক্তিশালী আইনী ভিত্তি দেয়ার উদ্দেশ্যে ‘বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৬’ প্রণয়ন করা হয়। সর্বশেষ গত ৩১ জুলাই জাতীয় সংসদে আইনটি পাস হয়। মূলত বিনিয়োগে কাক্সিক্ষত গতি আনতে প্রাইভেটাইজেশন কমিশন ও বিনিয়োগ বোর্ড একীভূত করে বিডা গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর গভর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রী, সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর, এফবিসিসিআইর সভাপতিসহ বিশেষায়িত দুটি চেম্বারের প্রতিনিধিও থাকবেন কমিটিতে। বেসরকারী খাতে বিনিয়োগে উৎসাহ দেয়া, শিল্প স্থাপনে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করাই হবে বিডার প্রধান কাজ। এছাড়া সরকারী শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অব্যবহৃত জমিকে উৎপাদনে ব্যবহার করতে সহায়তা করবে বিডা। উল্লেখযোগ্য অন্য কাজের মধ্যে রয়েছে, শিল্প প্রকল্প অনুমোদন ও নিবন্ধন দেয়া, বেসরকারী খাতে শিল্পে পুঁজি বিনিয়োগ সংক্রান্ত সরকারের নীতি বাস্তবায়ন, বেসরকারী বিনিয়োগের জন্য তফসিল প্রণয়ন এবং এলাকা নির্বাচন ও সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সহায়তা দেয়া। বিডার একটি শাখা বিনিয়োগ নিবন্ধন নিয়ে কাজ করবে। জমি ও গ্যাস-বিদ্যুতসহ অন্য বিষয়গুলো দেখভাল করবে আরেক শাখা। একটি কার্যকর ওয়ানস্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে সবধরনের সেবার ক্ষেত্রে সহনীয় একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হবে। এ সময়ের মধ্যেই সেবা পাবেন উদ্যোক্তারা। কমিটিতে বিনিয়োগ বোর্ডের প্রতিনিধি ও সংস্থার যুগ্ম-সচিব তৌহিদুর রহমান খান বলেন, আগামী ১ সেপ্টেম্বর আগারগাঁওয়ের নিজস্ব ভবনে বিডার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। ভবনের নির্মাণ কাজ এখনও শেষ হয়নি। তবে যতটুকু সম্ভব ব্যবহার উপযোগী করে আপাতত কাজ শুরু হবে। তার আগেই যে কোন দিন প্রাইভেটাইজেশন কমিশন ও বিনিয়োগ বোর্ডকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে। আইন অনুযায়ী একজন নির্বাহী চেয়ারম্যান হবেন কর্তৃপক্ষের প্রধান। বিডা নিয়ে উদ্যোক্তাদের মনোভাব জানতে চাইলে এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী জনকণ্ঠকে বলেন, বিনিয়োগে গতি ফেরাতে বিডার মতো প্রতিষ্ঠানকে স্বাগত জানান তারা। সত্যিকারের ওয়ানস্টপ সেবা দিয়ে সহজ প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে এ প্রতিষ্ঠান। তবে অন্যান্য সরকারী প্রতিষ্ঠানের মতো এটিও যেন শেষ পর্যন্ত আমলাতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত না হয়, সে বিষয়ে বিশেষ নজর রাখতে হবে। বিনিয়োগে বিদ্যমান প্রতিকূলতা চিহ্নিত করে সমাধানে জুতসই কৌশল নিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বর্তমানে বিশ্বের ৬৬টিরও বেশি দেশ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে। এরমধ্যে অন্তত ২০টির মতো দেশ রয়েছে যাদের বিনিয়োগ আরও বাড়াতে চায় দেশগুলো। গার্মেন্টস খাতে বিনিয়োগ করতে বিদেশী উদ্যোক্তারা এখন বাংলাদেশমুখী। চীন, জাপান, ভারত, পাকিস্তান, জার্মানি, ডেনমার্ক এবং কানাডার উদ্যোক্তারা এখন ছুটে আসছেন বাংলাদেশে। বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হলে ‘গ্রিন গার্মেন্টস’ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন বিদেশী উদ্যোক্তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বর্তমানে কৃষি, ম্যানুফ্যাকচারিং, টেক্সটাইল, ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ ও অবকাঠামো, ব্যাংকিং, টেলিকমিউনিকেশনসহ আরও অনেক খাতে বিদেশী বিনিয়োগ আসছে। বিনিয়োগ বোর্ডের তথ্য মতে, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) স্থানীয় বিনিয়োগ প্রস্তাব প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় প্রায় ৭ শতাংশ কমলেও বিদেশী ও যৌথ মালিকানার বিনিয়োগ প্রস্তাব প্রায় সাড়ে তিন শ’ শতাংশ বেড়েছে। বিদেশী বিনিয়োগ প্রস্তাবের এমন প্রবৃদ্ধিতে প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) তুলনায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশে সার্বিক বিনিয়োগ প্রস্তাবনা ১৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেড়েছে।
×