ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শহরে চরম দারিদ্রের হার কমেছে

প্রকাশিত: ০১:০১, ২৮ আগস্ট ২০১৬

শহরে চরম দারিদ্রের হার কমেছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শহরে চরম দারিদ্রের হার কমে এসেছে, বস্তিতে বসবাসকারীরা এখন আর হতদরিদ্র নয়। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ক্ষুদ্র ব্যবসার মাধ্যমে তারা নিজস্ব অবস্থানের পরিবর্তন ঘটিয়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় বাড়ায় তারা এখন মধ্যবিত্তের সারিতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। জীবনমানের উন্নয়ন ঘটলেও বস্তিবাসীরা উচ্ছেদ ভয়ে চরম শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে। সরকারের কাছে তাদের দাবী স্থায়ী পুনর্বাসনের। রবিবার রাজধানীর দ্যা ডেইলি স্টার কনফারেন্স হলে দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের (ডিএসকে) সিঁড়ি প্রকল্পের লেসন লার্নিং এবং সমাপনী কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। প্রকল্পের আওতায় ডিএসকে ঢাকা নগরের কড়াইল, কামরাঙ্গীরচর, মোহাম্মদপুর, বউবাজার, ঢাকা উদ্যান, মিরপুর, কল্যাণপুর বস্তিতে বসবাসরত ৩০ হাজার অতি দরিদ্র পরিবারের সামগ্রিক জীবনমান উন্নয়নে ২০০৯ সাল থেকে কাজ করে আসছে। কর্মশালায় গবেষণালব্দ প্রতিবেদন তুলে ধরেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. বিনায়ক সেন। শহরে দরিদ্রের হার কমে এসেছে উল্লেখ করে ড. বিনায়ক সেন বলেন, শহর অঞ্চলে দরিদ্রের হার কমেছে ৭ শতাংশ। আর হতদরিদ্রের হার কমেছে প্রায় ৩ শতাংশ। দরিদ্রদের আয় বাড়ছে। ফলে তারা এখন মধ্যবিত্তের সারিতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল অর্জনে আমরা খুব বেশি দূরে নেই। বিনায়ক সেন তার গবেষণার আলোকে বলেন, দরিদ্র পরিবারগুলোর ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের জন্য অতিরিক্ত পূঁজি সংস্থান করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। প্রকল্প কতৃক গড়ে ওঠা সমিতিগুলো এ ক্ষেত্রে উপকারভোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় পূঁজি সরবরাহ করতে সক্ষম হবে বলেই আমার প্রত্যাশা। প্রধান অতিথির বক্তব্যে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. মিহির কান্তি মজুমদার বলেন, দারিদ্রের সামনে দুস্থ শব্দ লাগিয়ে তাদের অসম্মান করা হয়। বর্তমানে আর কেউ দুস্থ নয়, তারাও অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। তবে দারিদ্রকে শূণ্যের কোটায় নামিয়ে আনতে হলে ইকো সিস্টেমে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, শুধু ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। প্রযুক্তি এবং মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমেই দেশের উন্নয়ন ঘটতে পারে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সমবায় অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, রাস্তায় যারা বসবাস করে তারা স্থায়ী নয়, যারা স্থায়ীভাবে ব্যবসা করছে তাদের অবস্থান কিন্তু ভালো। তবে গার্মেন্টস কর্মীদের থাকা খাওয়ার অবস্থা অমানবিক, তারা দরিদ্র সীমার উর্ধ্বে উঠতে পেরেছে কি-না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তিনি বলেন, শহরে দরিদ্রদের বেশিরভাগ অবৈধভাবে বসবাস করেন। তাই তারা ঘনঘন স্থান পরিবর্তন করেন। ডিএসকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ঋণ) ড. মাসুদুল কাদের বলেন, বস্তিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নে এ প্রকল্প যে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছে তা ভবিষ্যতে অনেকের জন্য অনুকরণীয় হয়ে পথ দেখাবে। কড়াইল বস্তির সেতেরা বেগম বলেন, আমরা এখন আর হতদরিদ্র নয়, তবে দরিদ্রতা এখনও আমাদের নিত্য সঙ্গী। নানা ধরণের প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যবসা করে আমাদের অবস্থানের উত্তরণ ঘটেছে। কড়াইল বস্তিতে ৩ লক্ষ মানুষের বসবাস, আমরা এখানে ২৫ বছর যাবৎ বসবাস করছি। তবে বারবার বস্তি ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়, ফলে আমরা প্রতিনিয়ত শঙ্কার মধ্যে থাকি। নাগরিক অধিকার হিসেবে সরকারের কাছে আমাদের পুনবার্সন চাই। বস্তির আরেক সদস্য আনারকলি বলেন, বস্তিতে বসবাস নিয়ে আমরা এখন আতঙ্কের মধ্যে থাকি, সরকার যেন আমাদের পুনর্বাসন করে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিএসকের ভাইস-প্রেসিডেন্ট প্রফেসর মাহফুজা খানম।
×