ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চাকরি দেয়ার নামে টাকা আত্মসাত ॥ জিম্মাদারের ছেলের আত্মহত্যা

প্রকাশিত: ০৮:৩৩, ২৮ আগস্ট ২০১৬

চাকরি দেয়ার নামে টাকা আত্মসাত ॥ জিম্মাদারের ছেলের আত্মহত্যা

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ২৭ আগস্ট ॥ সদর উপজেলার ছিলারচর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক রবিন হোসেন (২৪) আত্মহত্যা করেছেন। শুক্রবার রাত বারোটার দিকে তিনি শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে মারা যান। তিনি চরকালিকাপুর গ্রামের আলী নেওয়াজ ফকিরের ছেলে। পরিবারের অভিযোগ নড়িয়ার নর-কলকাতা গ্রামের সুমন শেখ নিজেকে আইজিপির চাচাত ভাই পরিচয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে জিম্মাদার আলী নেওয়াজের কাছ থেকে ১৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা নেয়। পরে চাকরি না পেয়ে প্রার্থীরা টাকা ফেরত দেয়ার জন্য চাপ দিয়ে অপমান করতে থাকে নেওয়াজের পরিবারকে। এরই জের হিসেবে টাকার জামিনদার আলী নেওয়াজের ছেলে স্কুল শিক্ষক রবিন হোসেন আত্মহত্যা করেন। পরিবারের লোকজন জানান, নর-কলকাতা গ্রামের সুমন শেখ প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে চরকালিকাপুর গ্রামের আলী নেওয়াজ ফকিরের কাছে প্রস্তাব দেয় টাকার বিনিময় পুলিশে চাকরি দেয়া হবে। আলী নেওয়াজ সুমনের খপ্পরে পড়ে তার পরিচিত ৩ ব্যক্তিকে চাকরি দেয়ার কথা বলে ১৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে সুমনের হাতে তুলে দেন। এর মধ্যে ৮ লাখ টাকা দেয়া হয় ২০১৫ সালের ২৩ জুলাই ইসলামী ব্যাংক মাদারীপুর শাখার মাধ্যমে। বাকি টাকা বিভিন্ন সময় নগদ দেয়া হয়। পুলিশের উপ-পরিদর্শক পদে চাকরির জন্য জাজিরার গোপালপুর গ্রামের ইব্রাহীম মাদবর ১১ লাখ ৮০ হাজার, কনস্টেবল পদের জন্য চরকালিকাপুরের আব্দুর রহমান ৫ লাখ ও একই গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সেকান্দার বেপারীর মেয়ে মেরিনা আক্তার ৩ লাখ টাকা দেন। দীর্ঘদিনে চাকরি না হওয়ায় তারা আলী নেওয়াজকে টাকা ফেরতের জন্য চাপ দিতে থাকে। আলী নেওয়াজ চাকরি প্রার্থীদের স্বজনদের নিয়ে আইজিপির গ্রামের বাড়িতে যান। আইজিপির ভাই নড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ঘটনাটি শুনে খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আশ^াস দেন। দীর্ঘদিনেও সুরাহা না হওয়ায় আলী নেওয়াজ দিশেহারা হয়ে পড়েন। অনন্যোপায় নেওয়াজ ছেলে রবিনকে নিয়ে ঢাকায় আইজিপির দেখা করতে ব্যর্থ হন। গত ১৭ আগস্ট স্কুল শিক্ষক রবিন হোসেন পুলিশ হেড-কোয়ার্টারে গিয়ে আইজিপি বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরমধ্যে চাকরি প্রার্থী ও তাদের স্বজনরা নেওয়াজ ও তার ছেলে রবিনকে টাকা ফেরত দেয়ার জন্য অপমান করে। লজ্জা ও অপমান সহ্য করতে না পেরে রবিন হোসেন শুক্রবার রাতে বিষপান করেন। রাত দশটার দিকে তাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বারোটার দিকে তিনি মারা যান। ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার বিকেলে তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুপুরে রবিনের স্বজনরা সদর হাসপাতাল চত্বরে প্রতারক সুমন শেখের বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন। রবিনের পিতা আলী নেওয়াজ বলেন, আমি মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। সেই সূত্রে সুমন শেখের সঙ্গে আমার পরিচয়। সে নিজেকে আইজিপির চাচত ভাই বলে পরিচয় দেয়। টাকা দিলে আইজিপির মাধ্যমে পুলিশের চাকরি হবে এমন কথা বলে। তখন আমার ৩ আত্মীয়ের কাছ থেকে ১৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে তাকে দেই। চাকরি না হলে আমি আইজিপির বাড়িতে যাই। তার ভাই ভোজেশ^র ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হক বেপারী আমাদের অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। টাকা উদ্ধারের জন্য স্থানীয়ভাবে বহু মানুষের দ্বারস্থ হয়েছি। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ আমাদের সহযোগিতা করেনি। পাওনাদারের চাপে অপমানে আমার ছেলে আত্মহত্যা করেছে। আমি আইনগত পদক্ষেপ নেব।’
×