ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দ্রোহ প্রেম মানবতা আর সাম্যের কবিকে গান কবিতা বক্তৃতায় স্মরণ

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২৮ আগস্ট ২০১৬

দ্রোহ প্রেম মানবতা আর সাম্যের কবিকে গান কবিতা বক্তৃতায় স্মরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গাহি সাম্যের গান/যেখানে আসিয়া থেমে গেছে সব বাধা-ব্যবধান/ যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-ক্রীশ্চান-এভাবেই মানুষে মানুষে সমতার স্বপ্ন জাগিয়েছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। সৃষ্টির আলোয় ধারণ করেছিলেন প্রেম ও মানবতাকে। কবিতার ছন্দে কিংবা গানের সুরে মিলিয়ে দিয়েছিলেন বিভেদের সীমারেখা। অন্যায় কিংবা শোষণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে বিদ্রোহী কবির কলম। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামল কিংবা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও অনন্ত অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে ধরা দিয়েছে তাঁর সৃষ্টিসমগ্র। এভাবেই দ্রোহ, প্রেম, সাম্য ও মানবতার কবি হিসেবে ঠাঁই করে নেন বাংলা সাহিত্য ও শিল্পের অনুরাগীদের মননে। তাই তো সংকট কিংবা দুঃসময়ে আজও তিনি বাঙালীর আলোর দিশারী। শনিবার ছিল গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াকু কবি নজরুলের ৪০তম প্রয়াণবার্ষিকী। জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকীর আনুষ্ঠানিকতায় গান, কবিতা বক্তৃতায় বারবার উচ্চারিত হয়েছে সাম্যের চেতনা। ধর্মের বিভেদ পেরিয়ে সম্প্রীতির আবাহনে পালিত হলো কবির প্রয়াণবর্ষিকী। অনুরাগীদের হৃদয় উৎসারিত ভালবাসার সঙ্গে কবির অসাম্প্রদায়িক ও মানবতাবাদী চেতনার অনুরণন ছিল গোটা জাতির অন্তরে। ধর্মান্ধতার আস্ফালনের সংকটময় সময়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় দেশ গড়ার শপথ নিয়ে পালিত হলো তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী। কবির সমাধিতে পুষ্পাঞ্জলি নিবেদনের পাশাপাশি নানা আয়োজনে গান-কবিতা ও কথায় শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় কবিকে। জাতীয় পত্রিকাগুলোয় গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হয়েছে নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর সংবাদ। সরকারী-বেসরকারী টেলিভিশন ও বেতারে প্রচারিত হয়েছে নজরুলকে নিবেদিত গান-কবিতায় সাজানো অনুষ্ঠানমালা। এছাড়া নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কবিকে স্মরণ করেছে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। শ্রদ্ধা-ভালবাসায় সিক্ত সমাধি ॥ পুব আকাশে সূর্যের রক্তিম আভার দেখা মিলতেই সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবির সমাধিতে পুষ্পাঞ্জলি নিবেদনের মাধ্যমে শুরু হয় জাতীয় কবিকে স্মরণে দিবসের কর্মসূচী। কিছুক্ষণের মধ্যেই সর্বস্তরের মানুষসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নিবেদিত ফুলে ফুলে আচ্ছাদিত হয়ে যায় সমাধিসৌধ। সর্বসাধারণের সঙ্গে সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কবির নাতনি খিলখিল কাজী। এসময় খিলখিল কাজী বলেন, কবি নজরুল শুধু আমাদের পরিবার নয়, পুরো দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর সম্পদ। তাই তাঁর শিক্ষায় দীক্ষিত হওয়াই হতে পারে বিদ্রোহী কবির প্রতি আমাদের সবচেয়ে বড় সম্মান প্রদর্শন। অসাম্প্রদায়িক ও মানবতার চেতনা বাস্তবায়িত হলেই নজরুলের বিদেহী আত্মা শান্তি পাবে। প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংগঠনিকভাবে কবির সমাধিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় জাদুঘর, নজরুল ইনস্টিটিউট, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, নজরুল একাডেমি, আন্তর্জাতিক নজরুল চর্চা কেন্দ্র, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন। নিবেদিত নানা অনুষ্ঠানমালা ॥ কথা, কবিতা ও গানের সুরে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নজরুল ইনস্টিটিউটের দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শেষ দিন ছিল শনিবার। শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে নৃত্যনাট্য, কবিতা আবৃত্তি, আলোচনা ও সঙ্গীত পরিবেশনা বহুমাত্রিক অনুষ্ঠান। নজরুল ইনস্টিটিউট ॥ কবির প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার থেকে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে নজরুল ইনস্টিটিউট। জাতীয় জাদুঘরের প্রয়াণ মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের শেষ দিন ছিল শনিবার। এদিন বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে আলোচনা, নজরুল পুরস্কার প্রদান এবং গান ও কবিতায় সাজানো সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় স্মরণ করা হয় কবিকে। শিল্পকলা একাডেমি ॥ কবির প্রয়াণ দিবসে আলোচনার সঙ্গে গান, কবিতা ও নৃত্যনাট্যে সাজানো বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। সান্ধ্যকালীন এ আয়োজনে আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব আক্তারী মমতাজ। নজরুল একাডেমী ॥ কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে নজরুল একাডেমি। শনিবার শেষ দিনের আয়োজনে নজরুল একাডেমি শাখাসমূহ কর্তৃক ফুটপাথ, বাস স্ট্যান্ড, রেল স্টেশন, লঞ্চ-ফেরি ঘাট, স্কুল-কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়, হাট-বাজার, শপিংমল ইত্যাদি স্থানে সাধারণ মানুষের কাছে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও মূল্যায়ন তুলে ধরা হয়।
×