ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রামপাল আন্দোলনে কলকাঠি নেড়েছে বিএনপি জামায়াত

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২৮ আগস্ট ২০১৬

রামপাল আন্দোলনে কলকাঠি নেড়েছে বিএনপি জামায়াত

রশিদ মামুন ॥ বিএনপির ঘোষণার পর প্রশ্ন উঠেছে রামপাল আন্দোলন আসলে কার? অনুসন্ধানে দেখা গেছে এতদিন বাম দলগুলো রামপাল আন্দোলন করলেও এই আন্দোলনের কারিগর ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট। শুরুতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের জামায়াতপন্থী শিক্ষক আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরীকে দিয়ে রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্র সুন্দরবন বিধ্বংসী বলে গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করে বিএনপি-জামায়াত। এরপর বাম দলগুলো ওই গবেষণাকে ভিত্তি ধরে রামপাল আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এখন বিএনপি পেছন থেকে সামনে আসতে চাইলে বাম দলগুলো বলছে আমাদের আন্দোলন ছিনতাই করার চেষ্টা করছে বিএনপি। বিষয়টি তারা মানবে না। শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এতদিন খুঁজছিলাম আন্দোলনকারীদের খুঁটির জোর কোথায়। এখন বিএনপি নেত্রী ঘোষণা দেয়ার পর বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। রামপাল নিয়ে তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটি এককভাবে এই আন্দোলন শুরু করে। পরবর্তীতে এই আন্দোলনে যোগ দেয় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা, বেলা, টিআইবিসহ বিভিন্ন সংগঠন। এরপর সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। এই আন্দোলন কে কীভাবে করবে তা নিয়ে মতবিরোধের মধ্যেই সকলে এক প্ল্যাটফর্মে আসার সিদ্ধান্ত থেকে সুন্দর বন রক্ষা জাতীয় কমিটির জন্ম হয়। কমিটি সুন্দরবনের পাশে বিদ্যুত কেন্দ্রের বিরোধিতা করতে থাকে। তবে তাদের হাতে এ সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত ছিল না। এই সুযোগটি কাজে লাগায় বিএনপি জামায়াত জোট। তারা রাজনৈতিকভাবে অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত একজন শিক্ষককে বেছে নেন। যিনি কি না অন্য একটা ইস্যুতে স্বর্ণ পদক পেয়েছেন। তাকে দিয়ে একটি কল্পিত গবেষণাপত্র তৈরি করে কৌশলে এটি পরিবেশবাদীদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা হয়। জামায়াতে ইসলামীর একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শ রয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার জন্য নানামুখী চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে দলটি। নানা ইস্যুতে আন্দোলন জোরদার করার মধ্যে রামপালও একটি ইস্যু ছিল। সরকার সুন্দরবন ধ্বংস করছে এমন একটি ধারণা জনমনে তৈরি করলে ব্যাপক গণআন্দোলন গড়ে উঠবে বলে তারা ধারণা করেই মাঠে নামায় অধ্যাপক হারুনকে। হারুন সেই কাজে সফলও হন। তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটি কখনও বুঝতেও পারেনি এই হারুন জামায়াতপন্থী। শনিবার সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্সের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, অধ্যাপক হারুন জামায়াতপন্থী এ বিষয়ে পত্র পত্রিকায় যা লেখা হচ্ছে তা ঠিক নয়। তিনি তার অবস্থান পরিষ্কার করে বিচার প্রার্থনা করে একটি মামলা করেছেন এবং সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। প্রিন্সকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষকের রাজনৈতিক পরিচয়ের ছবিগুলো মেইল করে দেখার অনুরোধ জানানো হয়। পরে অধ্যাপক হারুন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি হারুনকে নিয়ে বক্তব্য দিতে বিব্রত বোধ করেন। তিনি বলেন, যে মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন তার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না, বা বুঝতে অসুবিধা হয় না তিনি আসলে কোনপন্থী। তবে আমরা তার সম্পর্কে আরও খোঁজ নেব। দেখব কিভাবে তিনি এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হলেন। আব্দুল্লাহ হারুন গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন ২০ অক্টোবর-২০১২ জাতীয় প্রেস ক্লাবে। পরিবেশ বাদী কয়েকটি সংগঠন এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানে হারুন কল্পিত, অসত্য তথ্যে ভরা গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। এর পর রামপাল আন্দোলন গতি পায়। পরবর্তীতে ১২ এপ্রিল ২০১৫ তে সাউথ এশিয়ান ফর হিউম্যান রাইটস (এসএএইচআর) সংবাদ সম্মেলন করে সেখানেও হারুনকে দিয়েই প্রতিষ্ঠিত করানোর চেষ্টা করা হয় রামপাল সুন্দরবনকে ধ্বংস করবে। এই সংবাদ সম্মেলনে সুলতানা কামাল বক্তব্য রাখেন। অধ্যাপক হারুনের জামায়াত সম্পৃক্ততা এবং রামপাল ইস্যুতে দেয়া উস্কানির বিষয়ে গত ৩ আগস্ট জনকণ্ঠে এক প্রতিবেদন প্রকাশের পর তিনি খুলনার একটি আদালতে ১৮ আগস্ট মামলা করেন। এরপর তিনি ২০ আগস্ট খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নিজের পক্ষে সাফাই গান। তিনি বলেন, তিনি প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি নিজে কোন সংবাদ সম্মেলন করেননি। তার গবেষণাপত্রটি অনেকে অনেকভাবে ব্যবহার করছে। দৈনিক জনকণ্ঠের হাতে থাকা তিনটি ছবিতে দেখা যায় জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে হারুন মঞ্চেই উপস্থিত রয়েছেন খুলনার বিএনপি নেতাদের সঙ্গে। অপর ছবিতে মাহমুদুর রহমানের মুক্তি আন্দোলনে মানববন্ধনে হারুনকে দেখা যায়। অন্য ছবিতে দেখা যায় খুলনার প্রগতিশীল শিক্ষকরা গত বছর বিএনপির আগুন সন্ত্রাসের প্রতিবাদে মানববন্ধন করলে হারুন ও তার দোসররা পাল্টা মানববন্ধন করেন। ওই সময় তারা বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনীতিকীকরণ করা হচ্ছে। এতে স্পষ্ট অধ্যাপক হারুনের নির্দিষ্ট মতাদর্শ রয়েছে। বিএনপিকে রামপাল আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করাই ছিল তার প্রধান উদ্দেশ্য। হারুন রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের পরিবেশগত সমীক্ষা প্রতিবেদন নিয়ে পৃথক আরও একটি গবেষণাপত্র তৈরি করেছেন। যেখানে তিনি বলার চেষ্টা করেছেন আগস্ট ২০১০ থেকে জুলাই ২০১৪ পর্যন্ত সময়ে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। বিএনপি চেয়ারপার্সনের বক্তব্যের সঙ্গে হারুনের এই গবেষণাপত্রের বিষয়ে মিল রয়েছে। তবে হারুন এখনও এই গবেষণাপত্রটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেননি। তবে জনকণ্ঠের হাতে হারুনের এই গবেষণাপত্রের একটি কপি রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন হারুনের উদ্দেশ্য ছিল বিএনপির জন্য একটি ইস্যু তৈরি করা। শনিবার সন্ধ্যায় বক্তব্য জানার জন্য অধ্যাপক হারুনের কাছে ফোন করা হলে তিনি পরিচয় শোনার পর বলেন, ‘আমি আপনার সঙ্গে কথা বলব না, ঠিক আছে?’
×