ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীদের বাড়ির ব্যবস্থা, অস্ত্রের যোগান ও আর্থিক সহায়তা দিত তামিম

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২৮ আগস্ট ২০১৬

জঙ্গীদের বাড়ির ব্যবস্থা, অস্ত্রের যোগান ও আর্থিক সহায়তা দিত তামিম

গাফফার খান চৌধুরী ॥ গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলাকারী জঙ্গীদের বাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে আর্থিক সহায়তা এবং অস্ত্রের যোগান দেয়ার সঙ্গেও জড়িত ছিল বন্দুকযুদ্ধে নিহত মাস্টারমাইন্ড তামিম আহমেদ চৌধুরী। আর্টিজানের হামলাকারীদের সঙ্গে জঙ্গীদের একাধিকবার বৈঠক করে সার্বিক দিক নির্দেশনা দিয়েছিল সে। আর শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতে হামলার চেষ্টার সময় গ্রেফতার হয়ে পরবর্তীতে বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়া শফিউলের হাতে তামিম চৌধুরী নিজেই চাপাতি, গ্রেনেড ও পিস্তল তুলে দিয়েছিল। গুলশান ও শোলাকিয়া ছাড়াও কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল তার। এমনকি জঙ্গী আস্তানা তিনটিতে নিয়মিত যাতায়াতও করত। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, হলি আর্টিজান রেস্তুরাঁ ও বেকারিতে হামলাকারীদের জন্য অনেক আগ থেকেই বাড়ি খোঁজা হচ্ছিল। এ বিষয়ে তামিম আহমেদ চৌধুরীর যোগাযোগ হয় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজা করিমের সঙ্গে। হাসনাত করিম জঙ্গীদের নিরাপদে থাকার জন্য বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি গিয়াস উদ্দিন আহমেদের বাড়িটি পছন্দ করেন। পরে হাসনাত রেজা করিমই বাড়িটি জঙ্গীদের থাকার জন্য ঠিক করে দেন। গুলশান অভিযানে নিহত জঙ্গীদের কাছ থেকে পাওয়া নানা আলামত পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তাদের বসবাসের বাড়িটি শনাক্ত হয়। পরে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ই ব্লকের ই-৩ নম্বর বাড়িটিতে অভিযান চালিয়ে বাড়িটির কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে (৩৬) আটক করে পুলিশ। শুরু হয় জাহাঙ্গীরকে জিজ্ঞাসাবাদ। পরবর্তীতে গুলশানে হলি আর্টিজানে কমান্ডো অভিযানে নিহত জঙ্গীদের ছবি দেখানো হয় জাহাঙ্গীরকে। জাহাঙ্গীর ছবি দেখার পর তারা ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া বলে নিশ্চিত করেন। এরপর জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জাহাঙ্গীরের বরাত দিয়ে সূত্র বলছে, নিহতরা ওই বাড়িতে একমাস আগ থেকে মাসিক বিশ হাজার টাকা ভাড়ায় উঠেছিল। বাড়ি ভাড়া করার সঙ্গে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজা করিম জড়িত। তিনিই বাড়িটি ভাড়া করে দেন। তাদের কাছে নানা ধরনের লোকজন যাতায়াত করত। পরবর্তীতে ছবি দেখে তামিম আহমেদ চৌধুরীও ওই বাসায় একাধিকবার যাতায়াত ও অবস্থান করেছে বলে জাহাঙ্গীর জানায়। ভাড়াটিয়ারা যেসব তথ্য দিয়েছে, তা পরবর্তীতে ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে। গত ২৬ জুলাই কল্যাণপুরে জঙ্গী আস্তানায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় নয় জঙ্গী। পালানোর সময় গ্রেফতার হয় রাকিবুল হাসান রিগ্যান নামের এক জঙ্গী। ওই সময় ইকবাল নামের এক জঙ্গী পালিয়ে যায়। এ সংক্রান্ত মিরপুর মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলায় ইকবাল, রিগ্যান, নারায়ণগঞ্জে বন্দুকযুদ্ধে নিহত তামিম আহমেদ চৌধুরী ছাড়াও রিপন, খালিদ, মামুন, মানিক, জোনায়েদ খান, বাদল ও আজাদুল ওরফে কবিরাজকে আসামি করা হয়। আসামিরা দুর্ধর্ষ জঙ্গী বলে মামলায় উল্লেখ রয়েছে। আহত অবস্থায় গ্রেফতারকৃত রিগ্যানের বরাত দিয়ে তদন্তকারী সংস্থার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কল্যাণপুরের আস্তানাটিও গড়ে তোলা হয়েছিল ঢাকায় বড় ধরনের নাশকতা চালাতে। যা গুলশানের নাশকতাও ছাড়িয়ে যেত। জঙ্গী আস্তানার পাশেই দ্বীন কেজি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে পাকিস্তানী কায়দায় হত্যার পরিকল্পনা ছিল। এমন নাশকতার ঘটনা ঘটাতে পারলে, গুলশানের নাশকতা ছাপিয়ে যেত। সারা দুনিয়ার হৈচৈ পড়ে যেত। কল্যাণপুরের আস্তানাটিতেও তামিম চৌধুরী নিয়মিত যাতায়াত করত। আস্তানাটিতে ছাত্র শিবির পরিচালিত একটি কোচিং সেন্টারের অনেকেই নিয়মিত যাতায়াত করতেন। এ ব্যাপারে ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, বিভিন্ন সময় নানা মাধ্যমে তামিম চৌধুরী সম্পর্কে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। সেসব তথ্য যাচাইবাছাই করা হচ্ছে।
×