ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নারায়ণগঞ্জের বাড়িটি অপারেশনের কমান্ড সেন্টার করতে চেয়েছিল তামিম

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৮ আগস্ট ২০১৬

নারায়ণগঞ্জের বাড়িটি অপারেশনের কমান্ড সেন্টার করতে চেয়েছিল তামিম

স্টাফ রিপোর্টার/নিজস্ব সংবাদদাতা, নারায়ণগঞ্জ থেকে ॥ নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার নুরুদ্দিন দেওয়ানের বাড়িটিকে আত্মগোপনের আস্তানা নয়, বরং অপারেশনের কমান্ড সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী। তারা শীঘ্রই বড় কোন হামলার পরিকল্পনা করছিল। এমনটাই মনে করেন কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের প্রধান সানোয়ার হোসেন। কল্যাণপুর থেকে পলাতক এক জঙ্গীও নিহতদের মধ্যে রয়েছে বলে ভিন্ন একটি সূত্র জানিয়েছে। এদিকে, কল্যাণপুর জঙ্গী আস্তানায় ‘অপারেশন স্টর্ম-২৬’ পরিচালনার আগে সেখানে মিটিং করতে গিয়েছিল নারায়ণগঞ্জে নিহত জঙ্গী মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী। জানা গেছে, কল্যাণপুরের অভিযানের এক পর্যায়ে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গীদের একজনের নামও ইকবাল। এদিকে, শনিবার নারায়ণগঞ্জে নিহত তিন জঙ্গী যে ছবি পাওয়া গেছে তার এক জনের নাম ইকবাল বলে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট জানিয়েছে। এই অভিযানে নিহত তিন জনের আরেকজন মানিকের সম্পূর্ণ পরিচয় না জানাতে পারলেও ইকবাল কল্যাণপুরের ঘটনায় পালিয়ে যাওয়া জঙ্গী বলে দাবি করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সানোয়ার হোসেন বলেন, অভিযানের পর ওই বাসায় গিয়ে দেখা যায় জঙ্গীরা তাদের ব্যবহৃত ল্যাপটপ, মোবাইলসহ বিভিন্ন কাগজপত্র পুড়িয়ে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, তারা যেভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে এবং তাদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্র পর্যবেক্ষণ করে বোঝা যায়, তারা বড় হামলার পরিকল্পনা করছিল। পাইকপাড়ার জঙ্গী আস্তানা থেকে একে টু-টু বোরের ১টি রাইফেল, ১টি পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে বলে সানোয়ার জানান। এছাড়া ওই আস্তানা থেকে চারটি গ্রেনেড উদ্ধার করার পর পরে তা নিষ্ক্রিয় করা হয় এবং আরও দুটি গ্রেনেড আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয়েছে বলে তিনি জানান। সানোয়ার হোসেন জানান, পাইকপাড়ার ‘বড় কবরস্থান’-এর পাশের ওই বাড়ির তৃতীয় তলায় ভাড়া থাকত জঙ্গীরা। তিনি বলেন, আমরা রাত আড়াইটায় নিশ্চিত হই নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় তামিম চৌধুরী অবস্থান করছে। এর পর আমরা অভিযানের প্রস্তুতি নেই। সকাল ৬টায় আমরা নারায়ণগঞ্জে আসি। পৌঁনে ৭টায় আমরা ওই বাড়িতে পৌঁছি। সকাল পৌঁনে ৯টায় সোয়াট মূল অভিযান শুরু করে। প্রায় ৪৫-৬০ মিনিটের মতো অভিযান চলে। তিনি আরও জানান, শনিবার সকালে অভিযানের শুরুতে কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ইউনিটের সোয়াট বাহিনী তৃতীয় তলা অবরুদ্ধ করে রাখে। আরেকটি দল বাড়ির মালিকের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হন, তিন তলায় কারা-কারা অবস্থান করছে। জঙ্গীরা অবস্থান করছে, এমন তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর হ্যান্ড-মাইকের মাধ্যমে জঙ্গীদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। কিন্তু জঙ্গীরা তাতে সাড়া না দিয়ে উল্টো গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ অবস্থায় সকাল পৌনে ৯টার দিকে অপারেশন ‘হিট স্টর্ম টোয়েন্টি সেভেন’ পরিচালনা করা হয়। তিনি আরও জানান, ঢাকা মহানগর পুলিশের ব্যাপক তৎপরতায় রাজধানী ঢাকায় জঙ্গী আস্তানা গড়ে তোলা সমস্যা হয়ে গেছে। বিশেষ করে কল্যাণপুরে অভিযানের পর জঙ্গীরা ঢাকা ছাড়ছে। এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, জঙ্গীরা ঢাকার আশপাশে এমন সব জায়গায় আস্তানা গড়ার চেষ্টা করছে যেখানে সহজেই বাসা ভাড়া পাওয়া যায়। এখান থেকেই তারা বড় হামলার পরিকল্পনা করছে। এই বাসাটিও এমনই একটি আস্তানা ছিল বলে পুলিশের ধারণা। সানোয়ার হোসেন আরও জানান, সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাড়িটি ঘিরে ফেলে। তামিম চৌধুরীর কাছে গ্রেনেড ছিল। বাকি দুজনের কাছে অস্ত্র ছিল। সেগুলো কল্যাণপুরে জঙ্গীদের কাছ থেকে উদ্ধার করা ও গুলশানে হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রের মতোই। এগুলো সীমান্ত পার হয়ে অবৈধ পথে আসা অস্ত্রের মতো দেখতে।
×