ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গোপসাগরে চীনের প্রভাব ঠেকাতে ঢাকাকে বার্তা দেবেন কেরি

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২৮ আগস্ট ২০১৬

বঙ্গোপসাগরে চীনের প্রভাব ঠেকাতে ঢাকাকে বার্তা দেবেন কেরি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে চীনের প্রভাব ঠেকাতে ঢাকার কাছে নতুন বার্তা দেবে ওয়াশিংটন। এশিয়া অঞ্চলে বেজিংয়ের প্রভাব নিয়ে ঢাকার মনোভাবও বুঝতে চাইছে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে বাংলাদেশকেও এখন বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে চলেছে দেশটি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির আসন্ন ঢাকা সফরের সময় চীন নিয়ে নতুন বার্তা দেয়া হবে। একাধিক কূটনৈতিক সূত্র এ তথ্য জানায়। সূত্র জানায়, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে চীনের প্রভাব ধীরে ধীরে বাড়ছে বলে মনে করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে একাধিক প্রকল্পে সহযোগিতা করে আসছে চীন। ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে এই অঞ্চলে প্রভাব বাড়িয়ে চলেছে চীন। এখানে চীনের প্রভাবকে ভালভাবে নিচ্ছে না ওয়াশিংটন। ওমাবা প্রশাসনের শেষ সময়ে এসে চীন প্রশ্নে বাংলাদেশের মনোভাবও যাচাই করতে চাইছে ওয়াশিংটন। সে কারণে জন কেরির চীনের বিষয়েও নজর থাকবে। আর চীনের বিষয়ে তিনি ঢাকার কাছেই নতুন বার্তা দেবেন বলে জানা গেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির ঢাকা-দিল্লী সফরে যেসব বিষয়ে ওয়াশিংটনের নজর রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম এশিয়া অঞ্চলে চীনা প্রভাব পর্যবেক্ষণ। বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ঠা-া লড়াই চলছে। এছাড়া বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে চীনের প্রভাব নিয়ে অনেকটা দুশ্চিন্তায় রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে ২০১১ সালে জাপান, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একযোগে চীনা বিরোধী ত্রিদেশীয় জোট গঠন করে। এই জোট এখনও সক্রিয় রয়েছে। সে কারণে চীনের বিষয়ে ভারতের মনোভাব নিয়ে আপাতত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোন দুশ্চিন্তা নেই। এদিকে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আগামী ১০ অক্টোবর ঢাকায় আসছেন। এই সফর ঘিরে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ প্রস্তুতি নিয়ে চলছে। সেই সফরের সময় বেশ কয়েকটি চুক্তিরও প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। এছাড়া বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ধীরে ধীরে সামরিক সহযোগিতাও বাড়ছে। সে কারণে আগামী অক্টোবরের শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফর নিয়েও নজর রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে চীনা বলয় যেন প্রভাব বিস্তার করতে না পারে সেটাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম লক্ষ্য। সে কারণে ইতোমধ্যেই ভারতের সঙ্গে দেশটি ঐকমত্যে পৌঁছেছে। এছাড়া ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। চীন প্রশ্নে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন একই মনোভাব পোষণ করে চলেছে। এদিকে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও নিরাপত্তায় বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলেও মনে করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর ভূ-কৌশলগত কারণে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশের জন্যই বাংলদেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন বিষয়ে চীনের কাছ থেকেও সহযোগিতা নিয়েও চলেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে সমুদ্র সংক্রান্ত বিষয়ে চীন-বাংলাদেশের পারস্পরিক সহযোগিতা চলছে। যদিও মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের রাজনৈতিক ও সামরিক বিষয়ক ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত সহকারী মন্ত্রী টম কেলি জানিয়েছেন, বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে যে সমুদ্র সহযোগিতা নিয়ে চলেছে, এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সমুদ্র নিরাপত্তা সহযোগিতায় কোন প্রভাব পড়বে না। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একাধিকবার জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে তাদের ঘাঁটি করার কোন পরিকল্পনাও নেই। গত বছর ঢাকা-ওয়াশিংটন নিরাপত্তা সংলাপে বাংলাদেশের সমুদ্র নিরাপত্তার বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী ইতোমধ্যেই দুই দেশ যৌথভাবে সমুদ্র নিরাপত্তার বিষয়ে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমুদ্র নিরাপত্তায় আরও সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে। আগামী নবেম্বরে ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে নিরাপত্তা সংলাপের প্রস্তুতি চলছে। এই সংলাপের প্রস্তুতি নিয়েও আলোচনা করবেন জন কেরি। ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করতে আগামী সোমবার ঢাকায় আসছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। ঢাকা থেকে ওইদিনই তিনি দিল্লী যাবেন। যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে, কেরির এই সফরে গণতন্ত্র, উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও মানবাধিকার বিষয়ে আলোচনা প্রাধান্য পাবে। বিভিন্ন বৈশ্বিক বিষয়ে দুই দেশের ক্রমবর্ধমান সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেরি বাংলাদেশের সরকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন। এছাড়াও গণতন্ত্র, উন্নয়ন, নিরাপত্তা এবং মানবাধিকার বিষয়ে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী দ্বিপক্ষীয় অংশীদারিত্ব আরও শক্তিশালী করার ওপরেও তিনি জোর দেবেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এখন সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অবস্থান করছেন। সেখানে তিনি রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতীয় উপদেষ্টা শেখ তাহনুন বিন জায়েদ বিন নাহিয়ানের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকে সিরিয়া ও লিবিয়া পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন। সেখান থেকেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা আসবেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে জন কেরির এটি প্রথম ঢাকা সফর। এছাড়া বিগত পাঁচ বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এটি দ্বিতীয় ঢাকা সফর। এর আগে ২০১২ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন। সে সময় হিলারি বাংলাদেশ সফর শেষে ভারতেও গিয়েছিলেন।
×