ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘বিরোধিতাকারীদের বক্তব্য ৬০ দশকের, বিশ্ব বদলে গেছে এটা তারা জানেন না’

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২৮ আগস্ট ২০১৬

‘বিরোধিতাকারীদের বক্তব্য ৬০ দশকের, বিশ্ব বদলে গেছে এটা তারা জানেন না’

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ প্রসঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বিভিন্ন অভিযোগের জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খালেদা জিয়া তাঁর পুরো বক্তব্যে ‘উদ্ভট, বানোয়াট এবং অসত্য’ উপাত্ত পরিবেশন করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছেন এমন দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রীর বক্তব্য অনেকটা ‘মায়ের চেয়ে মাসীর দরদ বেশি’-এর মতো। এতদিন অন্তরালে থেকে ইন্ধন যোগালেও খালেদা জিয়া প্রেস কনফারেন্স করে এই অপপ্রচারে প্রকাশ্যে শামিল হয়েছেন। আসলে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চাকাকে টেনে ধরতেই এসব বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। উনি (খালেদা জিয়া) হয়ত ভুলে গেছেন, ১৯৯৭ সালে আমাদের সরকারের উদ্যোগেই সুন্দরবনকে ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করি। শনিবার গণভবনে জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে খালেদা জিয়ার অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। খালেদা জিয়া তাঁর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই বিদ্যুত কেন্দ্র লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা ধ্বংস করবে। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, এ কথা মোটেই সত্য নয়। বরং, এটি নির্মিত হলে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল মানুষের চুরি করে গাছ কাটার প্রয়োজন আর হবে না। কোম্পানি থেকে বছরে ৩০ কোটি টাকা সিএসআর ফান্ডে জমা হবে। তা দিয়ে এলাকার জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কাজ করা হবে। লাখ লাখ মানুষ উপকৃত হবে। ‘১ হাজার ৮৩৪ একর জমির ওপর বিদ্যুত কেন্দ্রটি স্থাপিত হবে’ মর্মে খালেদা জিয়ার অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, আসলে বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য জায়গা নেয়া হয়েছে ৯১৫ একর। এর মধ্যে ৪৬৫ একরে মূল বিদ্যুত কেন্দ্র থাকবে। বাদবাকি জায়গায় সোলার প্যানেল বসবে এবং সবুজায়ন করা হবে। ‘যে স্থানে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে সেখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩৮২ জন। আট হাজারের বেশি মানুষকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। জমি তিন ফসলী মর্মে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকৃতপক্ষে এলাকাটিতে মানুষের কোন স্থায়ী বসতি ছিল না। কোন বসতি উচ্ছেদ করা হয়নি। নিচু, পতিত জমি মাটি ভরাট করে উঁচু করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার অভিযোগ রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য পশুর নদী থেকে প্রতি ঘণ্টায় ১৪৪ কিউসেক পানি নেয়া হবে। ব্যবহারের পর সেই পানি নাকি পরিবেশ দূষণ করবে। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, পশুর নদীর পানিতে লবণ আছে। সেই পানি শোধন করে বিদ্যুত কেন্দ্রে ব্যবহার করা হবে। ব্যবহƒত পানি শীতল করে পুনরায় বিদ্যুত কেন্দ্রে ব্যবহার করা হবে। কোন দূষিত বা গরম পানি পশুর নদীতে ফেলা হবে না। যে পরিমাণ পানি উত্তোলন করা হবে তা অত্যন্ত নগণ্য। শুষ্ক মওসুমে পশুর নদীর প্রবাহের মাত্র দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ অর্থাৎ ২ হাজার ভাগের এক ভাগ পানির প্রয়োজন হবে। এই পশুর নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত ড্রেজিং করা হবে। পানি চলাচল বাড়বে। নাব্যতা বৃদ্ধি পেলে মংলাবন্দরে নৌযান চলাচল বৃদ্ধি পাবে। আয় অনেকগুণ বৃদ্ধি পাবে। কয়লা পরিবহনের সময় সুন্দরবন এলাকায় শব্দ দূষণ ও আলো দূষণ হবে। খালেদা জিয়ার এ অভিযোগের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শব্দ ও আলো দূষণ সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখার জন্য আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। গভীর সমুদ্র হতে কাভার্ড বার্জে কয়লা পরিবহন করা হবে। বার্জে ব্যবহƒত হবে ঢাকনাযুক্ত কম শব্দযুক্ত ইঞ্জিন। ফলে পরিবেশ দূষণের কোন সম্ভাবনা নেই। রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা থাকবে। ১৪ কিলোমিটার দূরে শব্দ যাবে না। ২০০ মিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে একটি কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ করার অভিযোগের জবাবে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, কত সংখ্যক কয়লাভিত্তিক প্ল্যান্ট যুক্তরাষ্ট্রে চালু আছে, তা কি তাঁর (খালেদা জিয়া) জানা আছে? যুক্তরাষ্ট্রের মোট বিদ্যুত উৎপাদনের প্রায় ৪০ শতাংশ আসে কয়লা থেকে। সেখানে ৭ হাজারের বেশি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র চালু আছে। রামপালে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম আট দশমিক ৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে ‘সম্পূর্ণ অসত্যকথন’ আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা বলেন, এ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম নির্ধারিত হবে কয়লার দামের উপর ভিত্তি করে। তিনি জানান, ভারতের এনটিপিসি এবং আমাদের পিডিবির সমান অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ভারত মৈত্রী বিদ্যুত কোম্পানি গঠন করা হয়েছে। উভয় সংস্থা ১৫ শতাংশ বিনিয়োগ করবে। বাকি ৭০ শতাংশ দেবে ভারতের এক্সিম ব্যাংক। এই ৭০ শতাংশ অর্থায়নের ব্যাংক গ্যারান্টি থাকবে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, অজ্ঞাতবশত কেউ কেউ এটাকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছেন। গ্যারান্টার হওয়া মানে তো বিনিয়োগ করা নয়। কোন কারণ যদি কোম্পানি ব্যর্থ হয়, তখন ক্ষতিপূরণের প্রশ্ন আসবে। সে রকম হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। একটা ব্যক্তিগত লোন নিতে গেলেও তো গ্যারান্টার লাগে। আর স্থাপনা যেহেতু বাংলাদেশে, গ্যারান্টার হতে তো কোন দোষ দেখি না। বাংলাদেশের স্থাপনায় ভারত কেন গ্যারান্টার হতে যাবে? তিনি বলেন, রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ মান বজায় রাখার জন্য আমরা বিশ্বের প্রথিতযশা ফার্ম জার্মানির ফিশনার গ্রুপকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছি। কাজেই কাজের মান নিয়ে কোন প্রশ্নের অবকাশ নেই। আমরা এ বিষয়ে কোন আপোস করব না। যারা নিজেদের পরিবেশবাদী হিসেবে জাহির করেন, তাদের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণে একটা গাছ লাগিয়েছেন জীবনে? নিজের বিবেককে বিজ্ঞাসা করুন, যা করছেন সেগুলো কি মানুষের মঙ্গল বয়ে আনবে? ভুল, মনগড়া, মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন না। আপনারা যেসব তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করেছেন সেগুলো ৬০’র দশকের। বিশ্ব অনেক বদলে গেছে। প্রযুক্তির উন্নয়ন হয়েছে। এসব মান্ধাতা আমলের তথ্য দিয়ে জনগণকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করবেন না।
×