ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নাম ভাঁড়িয়ে এক মাস আগে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয় জঙ্গীরা

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২৮ আগস্ট ২০১৬

নাম ভাঁড়িয়ে এক মাস আগে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয় জঙ্গীরা

স্টাফ রিপোর্টার/ নিজস্ব সংবাদদাতা, নারায়ণগঞ্জ থেকে ॥ গত জুলাই মাসে নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়া বড় কবরস্থানের পাশের তিনতলা ভবনের তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয় গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড পলাতক তামিম চৌধুরীসহ তিন জঙ্গী। রানা ও মুরাদ পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া নেয় তারা। তারা একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করত বলে জানিয়েছিল। তিন তলা ওই ভবনটির মালিক নুরুদ্দিন দেওয়ান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। স্থানীয়রা জানান, ওই বাসার বাসিন্দারা দিনের বেলায় খুব একটা বেশি বাইরে বের হতো না। অনেক সময় সন্ধ্যার পর তাদের রাস্তায় দেখা যেত। অন্যদিকে অভিযানের সময় ‘আল্লাহু-আকবার’ বলে সেøাগান দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়ে জঙ্গীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জনকণ্ঠকে এ কথা জানিয়েছেন। তারা বলেন, ভোর থেকেই পুলিশ অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় একাধিকবার জঙ্গীদের আত্মসমর্পণ করতে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়। তবে জঙ্গীরা আত্মসমর্পণ না করে পাল্টা হামলা চালায়। শনিবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে সন্দেহভাজন জঙ্গী আস্তানায় ‘হিট স্ট্র্রম টোয়েন্টি সেভেন’ নামে অভিযান চালায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ইউনিটের সদস্যরা। পাইকপাড়ায় নুরউদ্দিন দেওয়ানের মালিকানাধীন ৪১০/১, শাহসুজা রোডের বাড়িটি শনিবার ভোর থেকেই ঘিরে ফেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। প্রতক্ষ্যদর্শী ওই বাড়ির প্রথম তলার ভাড়াটিয়া পরিবহন শ্রমিক মোক্তার হোসেন জানান, সকাল বেলা প্রচ- গোলাগুলির শব্দে ঘুম থেকে উঠে যাই। ফ্ল্যাটের দরজায় যেতেই দেখি প্রচ- গুলির শব্দ। সেই সঙ্গে বোমার শব্দ। এ সময় বাড়ির বাইরে যেতে চাইলে পুলিশ ও র‌্যাব বাধা দেয়। তখন আমার পরিবারের সদস্যরা তীব্র আতঙ্কের মধ্যে থাকে। বাইরে থেকেও বৃষ্টির মতো গুলি হচ্ছে আবার বাড়ির তিন তলা থেকেও বোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এই বাড়ির মূল গেটের ভেতরে টিনশেডের আরও তিনটি বাড়ি রয়েছে। ওই ভাড়াটিয়ারাও এ সময় আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন। বাড়ির তিন তলা থেকে দুটি বোমা মারলে তা বিস্ফোরিত না হয়ে টিনের চালে পড়ে। জঙ্গীদের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে মোক্তার হোসেন জানান, তারা গত মাসে এই বাড়ির তিনতলা ভাড়া নেয়। আমরা সারাদিন কাজকর্মে থাকি, তাই তাদের ভালমতো লক্ষ্য করার সুযোগ ছিল না। বৃহস্পতিবার তাদের একজনকে দেখেছি, দেখতে অনেকটা চায়নিজদের মতো। এরা এলাকায় খুব একটা বের হতো না। কারো সঙ্গে কখনও কথা বলতে কিংবা পাড়ার কোন হোটেলে চা খেতেও দেখা যায়নি। এদিকে পাইকপাড়ার এই অভিযানে তিন জঙ্গী নিহত হওয়ার ঘটনায় স্থানীয়রা সন্তোষ প্রকাশ করেছে। তারা বলেন, আল্লাহ আমাদের রক্ষা করেছেন। এদের শেষ না করতে পারলে হয়তো আমাদের ওপরই একদিন হামলা চালাত। বাড়ির মালিক নুরুদ্দিন দেওয়ান জানান, তিনি আগে জাপানে থাকতেন। সেখান থেকে দেশে ফিরে প্রায় ১৫ বছর আগে তিনতলা বাড়িটি করেন। এর দ্বিতীয় তলার পুরোটা নিয়ে তিনি থাকেন। তৃতীয় তলায় উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে মোট দুটি ফ্ল্যাট আছে। এর মধ্যে উত্তর দিকের ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয় জঙ্গীরা। তিনি আরও জানান, জুলাই মাসে জঙ্গীরা মুরাদ ও রানা নামে বাসাটি ভাড়া নেয়। তারা নিজেদের পরিচয় দেয় ওষুধ কোম্পানির চাকরিজীবী হিসেবে। বাড়িওয়ালা বলেন, ‘ভাড়া দেয়ার পর আমি একাধিকবার ওই বাসায় গেছি। গিয়ে দেখেছি, তারা কেউ রান্না করছে, কেউ শুয়ে আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত দেড় মাসে তাদের সন্দেহজনক কিছু আমার চোখে পড়েনি। তবে তারা বাসা থেকে খুব কম বের হতো।’ এ বিষয়ে বড় পাইকপাড়া কবরস্থানের খাদেম সাইদুর রহমান বলেন, সকাল ৭টার সময় করবস্থান কমপ্লেক্সে এসেছি। এসে দেখি আইনশৃঙ্খলা বাড়ির সদস্যরা বাড়িটি ঘিরে রেখেছে। পৌনে ৯টার দিকে গোলাগুলি শুরু হয়। এ সময় প্রায় দুই ঘণ্টা পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলি হয়েছে। তিনি আরও জানান, পাইকপাড়া এলাকায় জঙ্গীদের আস্তানা মানুষের চিন্তার বাইরে। তিনি বলেন, এ ঘটনাটি অলৌলিক ঘটনার মতো মনে হয়। বাড়িটির মালিকও ভাল মানুষ। আমরা কেউ জানতাম না যে ওই বাড়িতে জঙ্গী বসবাস করে। একই এলাকার বাসিন্দা মিলন মিয়া জানায়, নারায়ণগঞ্জে জঙ্গী আস্তায় আমরা বিস্মিত হয়েছি। উল্লেখ্য, কবরস্থানের পূর্বপাশে এই তিন তলা ভবনটি অবস্থিত।
×