ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘এএফসি অনুর্ধ-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্ব’, বাংলাদেশ ৩-০ ইরান

ইরানকে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ২৮ আগস্ট ২০১৬

ইরানকে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শুধু স্কোরলাইনেই বিষয়টা বুঝা যাবে না ভালমতো। স্বাগতিক বাংলাদেশ দল জিতেছে ঠিকই। কিন্তু তারা প্রতিপক্ষ ইরানের বিরুদ্ধে এত বেশি আক্রমণ করেছে আর গোলের সূবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেছে যে, একসময় মনে হচ্ছিল ম্যাচের শেষদিকে না আবার কাউন্টার এ্যাটাক থেকে গোল খেয়ে হেরে বসে তারা! না, সে আশঙ্কা শেষ পর্যন্ত আর সত্যি হয়নি। গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যারাই জিতে নিয়েছে ম্যাচ, ৩-০ গোলে। আর এ জয়ে ‘এএফসি অনুর্ধ-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্ব’ ফুটবল আসরে উদ্ভাসিত সূচনা করল বাংলাদেশের কিশোরী ফুটবলাররা। শনিবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘সি’ গ্রুপের তৃতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হয় উভয়দল। ম্যাচের প্রথমার্ধে কোন দলই গোল করতে পারেনি। অথচ ওই অর্ধে কমপক্ষে চারটি গোল করার সুযোগ নষ্ট করে বাংলাদেশ দল! দ্বিতীয়ার্ধে ভিন্ন কৌশলে খেলে প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে তারা। সার্বিকভাবে পুরো খেলাতেই সবকিছুতেই আধিপত্য বিস্তার করে স্বাগতিকরা। ইরানকে এ নিয়ে অনুর্ধ-১৪ লেবেলের মতো অনুর্ধ-১৬ দলকেও হারানোর কৃতিত্ব দেখালো বাংলাদেশ। ২০১৫ সালের ২২ এপ্রিল নেপালের কাঠমা-ুতে এএফসি অনুর্ধ-১৪ গার্লস রিজিওনাল চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৪ বালিকা ফুটবল দল টুর্নামেন্টের ফাইনালে নাম লিখিয়েছিল ইরানকে ২-০ গোলে হারিয়ে। এর আগে অনুর্ধ-১৬ লেবেলে একবার ইরানের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। সেটা ২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর, ঢাকায়। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামেই অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে আগে গোল করেও ২-১ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ (ওই আসরে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইরান এবং কোয়ালিফাই করেছিল মূলপর্বে, বাংলাদেশ হয়েছিল তৃতীয়)। ওই ম্যাচের খলনায়িকা ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান মহিলা রেফারি ক্যাথারিন মার্গারিটা জ্যাকুইস। তার ত্রুটিপূর্ণ রেফারিংয়ের কারণেই সেদিন কেঁদেছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। শনিবার হেরে এবার উল্টো কাঁদল ইরানের মেয়েরাই! ম্যাচের আগেরদিন বাংলাদেশ দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেছিলেন, ‘আমরা ইরানের মোকাবেলা করতে প্রস্তুত আছি। জয়ের জন্যই আমরা মাঠে নামব। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে ইরানকে হারানোটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ কথাকে কাজে পরিণত করলেন ছোটন। শনিবার বাংলাদেশের মেয়েরা খেলে ভয়ডরহীন ও আত্মবিশ^াসী ফুটবল। ম্যাচের ২ মিনিটে বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড স্বপ্না ডানপ্রান্ত দিয়ে আগুয়ান গোলরক্ষককে পেছনে ফেলে বল নিয়ে ঢুকেও পড়ে। কিন্তু সে এতটাই নার্ভাস ছিল যে ফাঁকা পোস্টে বলটা ঠেলে না দিয়ে বাইরে মেরে দেয়! ৭ মিনিটে ডি বক্সের মাথায় ফ্রি কিক পায় বাংলাদেশ। মারিয়া মান্দার শট প্রতিপক্ষের রক্ষণ দেয়ালে লেগে ফেরত এলে আবারও শট নেয় মারিয়া। কিন্তু বল পোস্টে লেগে চলে যায় বাইরে। ৪৫ মিনিটে আবারও গোলরক্ষককে একা পেয়ে সুযোগ হাতছাড়া করে স্বপ্না। ৪৮ মিনিটে কর্নার থেকে ডি বক্সে জটলায় বল পেয়ে শট নেয় মারিয়া। কিন্তু বল ফিস্ট করে দলকে বাঁচায় ইরানের গোলরক্ষক। বক্স থেকে ৫০ মিনিটে স্বপ্নার নেয়া শট চলে যায় পোস্ট ঘেঁষে। অসংখ্য সুযোগ নষ্ট করার পর ৬৩ মিনিটে কাক্সিক্ষত গোলের দেখা পায় স্বাগতিকরা। প্রায় মাঝমাঠ থেকে ফ্রি কিক নেয় নার্গিস। বক্সে বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হয় ইরানের রক্ষণভাগ। বক্সে বাঁ পায়ে শট নেয় মারিয়া। গোলরক্ষক বল ফিরিয়ে দিলে চমৎকার শটে ইরানের জাল কাঁপায় মারজিয়া (১-০)। মজার ব্যাপার- অনুর্ধ-১৪ লেবেলে ইরানকে যে ম্যাচে ২-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ, সে ম্যাচেও একটি গোল ছিল মারজিয়ার! ৬৬ মিনিটে অধিনায়ক কৃষ্ণার ক্রসে বক্সে বল পায় সানজিদা। তার থেকে গড়ান ক্রস পেয়ে চলতি বলেই উঁচু শটে লক্ষ্যভেদ করে মৌসুমী (২-০)। ৮৬ মিনিটে বাঁ প্রান্ত নিয়ে বদলি মিডফিল্ডার মনিকা চাকমা উঁচু ক্রস দেয় আরেক বদলি মিডফিল্ডার তহুরাকে। বক্সের ভেতর সে বল থেকে হেডে তহুরা বোকা বানায় ইরানী গোলরক্ষক মায়েদেকে (৩-০)। কিছুক্ষণ পর রেফারি খেলা শেষের বাঁশি বাজালে জয়ের আনন্দে ফেটে পড়ে বাংলাদেশ দল এবং স্টেডিয়ামে খেলা উপভোগ করতে আসা ফুটবলপ্রেমীরা।
×