ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পুরো শক্তির দল নিয়েই আসবে ইংল্যান্ড

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ২৮ আগস্ট ২০১৬

পুরো শক্তির দল নিয়েই আসবে ইংল্যান্ড

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ টেস্ট অধিনায়ক এ্যালিস্টার কুক নাও আসতে পারেন। সঙ্গে পেসার স্টুয়ার্ট ব্রডকে নিয়েও ছিল শঙ্কা। সবকিছুই যে ইংল্যান্ড মিডিয়ার তৈরি, তা বুঝিয়ে দিলেন ইংল্যান্ড ক্রিকেট পরিচালক এ্যান্ড্রু স্ট্রস। নিজেই জানিয়ে দিলেন, পুরো শক্তির দল নিয়েই বাংলাদেশে আসবে ইংল্যান্ড। বাংলাদেশে পুরো শক্তির দল পাঠাতে পারবেন বলে আশাবাদী স্ট্রস। স্কাই স্পোর্টসের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে স্ট্রস তাই জানিয়েছেন। স্ট্রস বলেছেন, ‘আমরা নিশ্চিত, এটা যে এটা একটা নিরাপদ সফর, সে ব্যাপারে খেলোয়াড়দের বোঝাতে পারব। আমি নিজেও এ নিয়ে শতভাগ নিশ্চিত। রেগ ডিকাসন ও তার অভিজ্ঞতার ওপর আমার আস্থা আছে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিয়ে আমি খুবই সন্তুষ্ট। সুতরাং আমি আশাবাদী, আমরা পুরো শক্তির দল নিয়েই বাংলাদেশ যাব।’ চলতি মাসেই ইংল্যান্ড এ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা রেগ ডিকাসন, পেশাদার ক্রিকেটারদের সংগঠনের (পিসিএ) প্রধান নির্বাহী ডেভিড লেথারডেল ও ইসিবির ক্রিকেট পরিচালনা পরিচালক জন কার বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে গেছেন। চারদিনের এ সফর শেষে ইংল্যান্ডে গিয়ে তারা ইসিবিকে নিরাপত্তা নিয়ে সব জানায়। তার পরই ইংল্যান্ড সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সফরে আসার। সঙ্গে খেলোয়াড়দের স্বাধীনতাও দেয়া হয়। কোন ক্রিকেটার চাইলে এ সফর থেকে সরেও যেতে পারেন। তবে এখন পর্যন্ত কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানাননি। শুধু ব্রিটিশ মিডিয়াতেই খবর এসেছে কুক ও ব্রডের বাংলাদেশ সফরে না আসার সম্ভাবনার বিষয়টি। কিন্তু স্ট্রস যে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন, তাতে বোঝাই যাচ্ছে; বাংলাদেশ সফরে পুরো শক্তির ইংল্যান্ড দলই আসবে। তিন ওয়ানডে ও দুই টেস্ট খেলতে আসবে ইংল্যান্ড। ৩০ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখার কথা রয়েছে। নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে আসতেই স্ট্রস বলেছেন, ‘আমার অভিজ্ঞতা আছে। মুম্বাইয়ে যখন বোমা হামলা হয়েছিল, তখন নিরাপত্তা নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়ার পরই সফর হয়েছিল। কেউ যদি নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করে এবং তাতে যদি আমরা সন্তুষ্ট থাকি তাহলে সফরে না যাওয়ার কোন অর্থই নেই।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘বাংলাদেশ সফরের জন্য গ্রীষ্মকালীন খেলা শেষেই দল ঘোষণা করা হবে। পুরো শক্তির দলই পাঠানো হবে।’ এখন যদি আর কোন সমস্যা দেশে না হয়, তাহলে ইংল্যান্ড দল যে আসছে তা নিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে। অবশ্য এ নিশ্চয়তা একদিন আগেই মিলেছে। সব অনিশ্চয়তা দূর করে বৃহস্পতিবার গভীর রাতেই ইসিবি জানিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশে আসছে। টুইট বার্তায় ইসিবি যখন এমনটি জানায়, তখন থেকেই দেশের ক্রিকেটে স্বস্তির সুবাতাস বইতে শুরু করে। ইসিবি টুইটে লেখে, ‘আমরা নিশ্চিত করতে পারি ইংল্যান্ডের বাংলাদেশ সফর পরিকল্পনা মতোই এগিয়ে যাবে। আরও বিস্তারিত বিবৃতি পরে জানানো হবে।’ বাংলাদেশ সফরে আসার বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দেয়ার পর এ্যান্ড্রু স্ট্রস বলেন, ‘ইংল্যান্ডের বাংলাদেশ সফর পরিকল্পনা মতোই এগিয়ে যাবে।’ স্ট্রস এক বিবৃতিতে আরও বলেন, ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী ইংল্যান্ডের বাংলাদেশ সফর এগিয়ে যাবে। খেলোয়াড় ও দলের কর্মীদের নিরাপত্তা সব সময়ই সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেয়েছে। আমরা এই সফরের ঝুঁকি সম্ভাব্যতা সম্পর্কে একেবারে বিস্তারিত জানতে পেরেছি। বর্তমান পরিস্থিতিও বিস্তারিতভাবে জানান হয়েছে। পাশাপাশি জানান হয়েছে আমাদের কী কী নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। আমাদের যে পরামর্শ ও সমর্থন দেয়া হয়েছে তাতে ইসিবি ও পিসিএ’র (প্রফেশনাল ক্রিকেটার্স এ্যাসোসিয়েশন) পূর্ণ আস্থা আছে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমরা একেবারে উন্মুক্ত আলোচনায় খেলোয়াড় ও দলের কর্মীদের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেছি। তারা অনেক প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছেন। সামনে আরও অনেক কিছুই জানতে চাইবেন। পূর্ণ নিশ্চয়তা তারা পেতে চান এটা আমরা বুঝি।’ পূর্ণাঙ্গ এ সফরে আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলবে ইংল্যান্ড। শুরুতে ওয়ানডে দলের ক্রিকেটাররাই বাংলাদেশে আসবেন। ৭ অক্টোবর প্রথম ওয়ানডে, ৯ ও ১২ অক্টোবর যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ২০ অক্টোবর বাংলাদেশ দলের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলতে নামবে ইংল্যান্ড। ২৮ অক্টোবর দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে। এ সিরিজে আসার ব্যাপারে আগেই সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে ইসিবি। এবার স্ট্রস জানিয়ে দিলেন, পুরো শক্তির দলই আসবে। ইসিবি যখন বাংলাদেশে আসার নিশ্চয়তা দিল, এরপরই বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ইসিবিকে ধন্যবাদ জানিয়ে দিয়েছেন। শুক্রবারই বলে দিয়েছেন, ‘আমি ইংল্যান্ড দলের ক্রিকেটার আর তাদের বোর্ডকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সঙ্গে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমাদের র‌্যাব, পুলিশ আর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বাহিনীকে। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছিল ইংল্যান্ডের নিরাপত্তা প্রতিনিধি দলটিকে। অবশ্য আমরা তাদের প্রতিনিধিদলের কার্যক্রম দেখেই বুঝেছিলাম, বাংলাদেশ সফর নিয়ে তাদের কোন শঙ্কা নেই। কারণ আমরা তাদের যে প্ল্যান দিয়েছি, তারা তাতে বেশ খুশি ছিল।’ পাপন আরও জানান, ‘অতীতেও ইংল্যান্ডের দল বাংলাদেশে খেলে গেছে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের মাটিতে তাদের অনুর্ধ-১৯ দল বিশ্বকাপ খেলে গেছে। তারা আমাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে অবগত ছিল। তাই আমাদেরও বিশ্বাস ছিল তারা আসবে।’ পাপন দেশের জনগণের উদ্দেশে বলার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকেও ধন্যবাদ জানান, ‘১৬ কোটি মানুষের দোয়া বৃথা যেতে পারে না। আমি যেখানেই গিয়েছি সেখানেই সকলে আমাকে জিজ্ঞেস করতো ইংলিশদের আসা না আসা নিয়ে। সবাই বলেছিল তারা কবে আসবে? কবে এদেশের মাটিতে আরেকটি সিরিজ আয়োজিত হবে? তাদের চাওয়া, তাদের দোয়া বৃথা যায়নি। সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েই ইংল্যান্ড বাংলাদেশে আসছে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। কারণ তিনি নিজেই নিরাপত্তার বিষয়গুলো তদারকি করেন। এর আগেও দেখেছি (অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফরের ইস্যুতে) তিনি নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী সফরকারী দলটিকে নিরাপত্তা দেয়া হবে। যে কোন মূল্যে তা বাস্তবায়ন করা হবে।’ ইংল্যান্ড দলের সঙ্গে তাদের সমর্থক আর দেশটির সংবাদকর্মীদের প্রসঙ্গেও পাপন বলেন, ‘বাংলাদেশ সফরে আসা ইংলিশ সমর্থক এবং তাদের সাংবাদিকদের আমরা পূর্ণ নিরাপত্তার আশ্বাস দিচ্ছি। যে প্ল্যান তাদের প্রতিনিধি দলকে দিয়েছি, তারা চাইলে তার থেকেও বেশি নিরাপত্তা দেয়া হবে। আমরা মানসিক দিক দিয়ে সেভাবেই প্রস্তুত।’ এরপরই নিরাপত্তার বিষয়ে পূর্ণ সন্তুষ্টি জানিয়ে স্ট্রস বলে দেন, পুরো শক্তির ইংল্যান্ড দলই বাংলাদেশে আসবে।
×