ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে ৮ মাসেও বাড়তি ফি ফেরত দেয়নি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ২৮ আগস্ট ২০১৬

চট্টগ্রামে ৮ মাসেও বাড়তি ফি ফেরত দেয়নি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নানা অনিয়ম চলে এলেও শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে ভর্তিতে অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ পুনঃভর্তি ও দ্বিগুণ বেতন বৃদ্ধি করেও পার পেয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ক্ষমতা খর্ব করার কারণে জেলা প্রশাসনের তদন্তে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও বাতিলের ঘোষণা দিয়েও চুপসে গেছে। এমনকি সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট ফি আদায়ের আদেশ দেয়া হলেও দুয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যতীত কেউই এ আদেশ কার্যকর করেনি। পরবর্তীতে ওই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডকে দায়িত্ব দেয়া হলেও অর্থ বাণিজ্যের কারণে তা ফাইলবন্দী হয়ে আছে। দীর্ঘ আট মাস পরও সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় উল্টো এসব প্রতিষ্ঠান প্রশ্রয় পেয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা। এদিকে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আয়োজিত বৈঠকে যে সতেরটি প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল এর মধ্যে শুধু বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ ২০১৬ শিক্ষা বর্ষে সরকারী নির্দেশনা মেনে চলেছে। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একচেটিয়াভাবে অতিরিক্ত ফি আদায়ে অতিষ্ঠ হয়ে অভিভাবকরা জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন। এ অভিযোগের ভিত্তিতে ওই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও তাদের নিয়োজিত প্রতিনিধিকে তলব করা হয়। গত ২০ জানুয়ারি জেলা প্রশাসনের সভা কক্ষে আয়োজিত বৈঠকে বেসরকারী ওই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বেতন ও ভর্তির নামে বাড়তি অর্থ আদায়ের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। সে সঙ্গে সরকার নির্ধারিত সেশন ফি চট্টগ্রামের জন্য ৩ হাজার ও ঢাকার জন্য ৫ হাজার নির্ধারণ করা হয় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের এ আদেশ মানেনি চট্টগ্রামের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করার পর বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ বর্ধিত ফি এক হাজার টাকা না নেয়ার ঘোষণা দেয়। তবে জেলা প্রশাসনের নোটিসের আগে এক হাজার টাকা অতিরিক্ত ফি আদায় করা হয়েছিল তা পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের বেতনের সঙ্গে সমন্বয় করে দিয়েছে। এক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে নোটিস জারি করা হয়। এ নোটিসে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন, পরীক্ষার ফি এবং ভর্তি ফি এর কোনটিই বর্ধিত করা হয়নি। যে সকল শিক্ষার্থীর অভিভাবক ব্যাংকে অতিরিক্ত এক হাজার টাকা জমা দিয়েছিলেন ওই অর্থ সমন্বয় করার ঘোষণা দেয়া হয়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ারা বেগম জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভর্তি ফি, পুনঃভর্তি ও বেতন কার্যকর করা হয়েছে। এ ছাড়াও অতিরিক্ত ফি আদায় করা হলেও তা পরবর্তীতে সরকারী নির্দেশনা আসায় ফেরত দেয়া হয়েছে। কোনভাবেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা জেলা প্রশাসনের নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটেনি। শুধু তাই নয়, সুষ্ঠু পরিবেশে পড়ালেখার মান রক্ষা করতে মানসম্মত শিক্ষকসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছিল ওই সকল প্রতিষ্ঠানকে নোটিস করা হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কঠোর কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় ফাইলবন্দী রয়েছে অভিযুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইস্যুকৃত নোটিসের প্রদানের ক্ষমতা খর্ব করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডকে দেয়ায় এ ধরনের স্থবিরতা এসেছে।
×