ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মোস্তাফা জব্বার

একুশ শতক ॥ ডিজিটাল যুগে বিলুপ্তির চ্যালেঞ্জে বাংলা

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ২৮ আগস্ট ২০১৬

একুশ শতক ॥ ডিজিটাল যুগে বিলুপ্তির চ্যালেঞ্জে বাংলা

শিরোনামটি কাউকে চমকে দিতে পারে। এমনকি এটি যে কারও জন্য বিস্ময়কর ও দুঃখজনক মনে হতে পারে। কারণ বাংলা ভাষার নামে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রে সেই ভাষারই এখন চরম দুর্দিন বিরাজ করছে। এমনকি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে? যদি আমাদের এটি ভাবতে হয় যে, আমরা যতই ডিজিটাল হচ্ছি বাংলা ভাষার দুর্দিন ততই বাড়ছে, তবে কেমন লাগবে একজন বাংলাভাষী হিসেবে। সাম্প্রতিককালে এই দুর্দশাটি ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। চারদিকে তাকিয়ে কেবল বাংলা ভাষা ও লিপির দুর্দিনই দেখতে পাচ্ছি। কোন মহলই এই চরম সঙ্কট থেকে বাংলাকে উদ্ধারের কোন চেষ্টা দেখছি না। বরং একদল মানুষ জেনে না জেনে বাংলা ভাষাকে বিপন্ন করার জন্য সকল শক্তি দিয়ে উঠেপড়ে লেগেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আমরা ডিজিটাল যুগের বাসিন্দা থাকব বটে-তবে বাংলা ভাষার সঠিক (বা কোন প্রকারের) ব্যবহার থাকবে না। আমি বাংলা লিপির বিলুপ্তিরও আশঙ্কা করছি। যদিও আমি এটিও বিশ্বাস করি যে, ৩৫ কোটি লোকের ব্যবহৃত একটি লিপি কোনভাবেই বিলুপ্তির স্তরে যেতে পারে না, তবুও ডিজিটাল রূপান্তরের নামে বিশেষত বাংলাদেশে যেসব কাজ হচ্ছে তাতে আশঙ্কার বীজ অঙ্কুরিত হচ্ছেই। চিন্তা করে দেখুন, এটি কি ভাবা যায় যে, রক্ত দিয়ে ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছে যে জাতি সেই জাতির হাতেই তার মাতৃভাষা বা তার রক্তমাখানো বর্ণমালা হারিয়ে যাবে? এটি কি দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করা যায় যে, সেই পথেই পা বাড়িয়েছি আমরা। কেউ কি এটি ভাবতেও পারেন যে, আমাদের সরকারের দুর্বলতার জন্য বাংলা ভাষাকে এখনও দেবনাগরী কোড ব্যবহার করতে হয়। এটি আমরা বছরের পর বছর ধরে মেনে চলেছি এবং সেটি সরকারী পৃষ্ঠপোষকতাও পাচ্ছে। কেউ কি ভাবতে পারেন যে, কম্পিউটারে বাংলা ভাষা প্রয়োগের জন্য যেসব মান প্রণয়ন করার কথা সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে। কেউ কি ভাবতে পারেন যে, খোদ সরকার কীবোর্ড পাইরেসির দায় ঘাড়ে নিয়ে বছরের পর বছর নীরবতা পালন করছে। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বাংলা ভাষার উন্নয়নের জন্য যেসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হবার কথা তার অগ্রগতি মোটেই সন্তোষজনক নয় বা এসব কাজ করার ক্ষেত্রে সরকারের নিজের মাঝেই তেমন কোন সমন্বয় নেই। আপনারা কি ফেসবুক বা টুইটারে দেখেন আমাদের বঙ্গ-সন্তানরা কি সুন্দর বাংলা লেখেন? এটি ভাবতে পারেন যে, ফেসবুকের মতো ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলিশ, অশুদ্ধ ও শুদ্ধ মিলিয়ে শতকরা মাত্র ৮ ভাগ মানুষ বাংলা ব্যবহার করে। কেউ কি এটি ভাবতে পারেন যে, রোমান হরফে বাংলা লেখার প্রশিক্ষণ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই এবং রোমান হরফে বাংলা লেখার উৎসাহদাতা বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল নামক দুটি সরকারী প্রতিষ্ঠান। যার সন্দেহ আছে তার জন্য এটুআই কর্তৃক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেবার জন্য কোন বাংলা ব্যবহার করছে? তাদের নির্দেশে হাজার হাজার শিক্ষক ও সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী এখন তাই রোমান হরফে বাংলা লেখে। সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ৫০ হাজার ল্যাপটপ কেনার স্পেসিফিকেশনে রোমান হরফে বাংলা লেখার ব্যবস্থা সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের পরামর্শক। সকলেই সরকারের এসএমএসগুলো কি দেখেন? কি চমৎকারভাবে রোমান হরফ দিয়ে ভুল বাংলায় এসএমএস লেখা হয়। কেউ কি এটি কল্পনা করতে পারেন যে, সরকার নিজেই তার প্রণীত মান মানেন না? এটিও হয়তো কেউ ভাবেননি যে যতই দিন যাচ্ছে ততই সরকারী কাজে বাংলা ভাষার ব্যবহার কমছে এবং তার একমাত্র অজুহাত হচ্ছে ডিজিটাইজেশন। অন্যদিকে এটি মনে করিয়ে দিতে চাই যে দেশের বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের নিজস্ব কাজে বাংলা ব্যবহার করে না। উচ্চ আদালতে বাংলা ব্যবহার হয় না। এমনকি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শতকরা ৫টিও বাংলা পড়ায় না। বাস্তব অবস্থাটি আমার ওপরের বর্ণনার চাইতেও ভয়াবহ। আরও ভয়াবহ যে এই বিষয় নিয়ে সরকার তো কথা বলেই না, দেশের সুশীল সমাজও কথা বলেন না। বাংলা ভাষার জন্য যারা কথায় কথায় জীবন দিয়ে ফেলেন তারাও কথা বলেন না। বাংলাদেশে বাংলা ভাষা এখন এতিমের মতো অযতেœ অবহেলায় বেড়ে উঠছে। ১. প্রমিতকরণের সংকট : বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল কম্পিউটারে বাংলা ভাষার নীতিগত, প্রমিতকরণ ও প্রায়োগিক বিষয়গুলোর কাজ সম্পন্ন করার। ২০০৩ সালে এক নির্বাহী আদেশে প্রমিতকরণের কাজটি বিএসটিআই থেকে কম্পিউটার কাউন্সিলে নিয়ে আসা হয়। মূলত বিজয় কীবোর্ড যাতে প্রমিত না হতে পারে কাজটি করা হয়েছিল সেজন্য। তৎকালে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি সবুর খান তখনকার মন্ত্রী আবদুল মইন খান ও কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক আব্দুস সালামের সহায়তায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়াকে দিয়ে এই কাজটি করান। এরপর কম্পিউটার কাউন্সিল বিজয় কীবোর্ডকে নকল করে একটি কীবোর্ড প্রণয়ন করে ও কপিরাইট গ্রহণ করে। তারা বিএসটিআই থেকে এর অনুমোদনও গ্রহণ করে। বেগম জিয়ার আমলে সেই কীবোর্ড সম্পর্কে আপত্তি করা হলেও সেটি কম্পিউটার কাউন্সিল আমলে নেয়নি। এমনকি ২০১৬ সালেও কপিরাইট বোর্ড এই বিষয়ক আপত্তির নিষ্পত্তি করেনি। এর মানে এখনও এই বিষয়টি কপিরাইট বোর্ড ও কম্পিউটার কাউন্সিলে ঝুলে আছে। তবে কাউন্সিল এখন অফিসিয়ালি জাতীয় কীবোর্ড আছে বলে দাবি করে না। শেখ হাসিনার সরকার ২০০৯ সালেই উপলব্ধি করে যে, কারও সম্পদ নকল করে প্রমিত করা সঠিক কাজ নয়। এজন্য প্রমিত কীবোর্ড প্রসঙ্গটি নিয়ে টানা হেঁচড়া না করে কম্পিউটারের জন্য এনকোডিং প্রমিত করার কাজটি সম্পন্ন করা হয়। কম্পিউটার কাউন্সিলের আওতাধীন একটি কমিটির নেতৃত্বে বাংলা ও সিআর, টেক্সট টু স্পিচ, স্পিচ টু টেক্সট, সর্টিং অর্ডার ইত্যাদির কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এক্ষেত্রে কাজের কাজ বলতে গেলে কিছুই হয়নি। উল্লেখ করা যেতে পারে, সরকার এরই মাঝে জাতীয় কীবোর্ড নিয়ে জটিলতায় জড়িত থাকার পর স্মার্ট ফোনের কোয়ার্টি কীবোর্ড কি হবে সেটি নিয়েও আর সামনে যাচ্ছে না। ফলে স্মার্ট ফোনের জন্য কোন প্রমিত কীবোর্ড সহসাই পাওয়া যাবে না। খুব সঙ্গত কারণেই স্মার্ট ফোনে নানা ধরনের কীবোর্ড প্রচলিত হতে থাকবে। কোন এক সময়ে আমরা কীবোর্ডের জঙ্গলে বাস করব। কম্পিউটারে বাংলা ভাষার সবচেয়ে জটিল জায়গাটি রয়ে গেছে এর এনকোডিং প্রসঙ্গটি। এটি আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমিতকরণ ইস্যু। সরকার বিডিএস ১৫২০ : ২০১১ নামের একটি প্রমিত এনকোডিং অনুমোদন করে নিজেরাই ইউনিকোড এনকোডিং অনুসরণ করছে। সরকার নিজেই বোঝে না যে বিডিএস ১৫২০ : ২০১১ এবং ইউনিকোড এক জিনিস নয়। এটি বোধহয় দুনিয়াতে বিরল যে, সরকার তার নিজের প্রমিতকরণ মানে না। এটুআই ও কম্পিউটার কাউন্সিল থেকে সরকারের সকল তথ্য ইউনিকোডে সংরক্ষণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জাতীয় ভোটার তালিকা থেকে শুরু করে সরকারের সকল ডাটা ইউনিকোডে সংরক্ষণ করা হয়েছে। অথচ সরকারের উচিত ছিল বিডিএস ১৫২০ : ২০১১ প্রমিত মানে সকল ডাটা সংরক্ষণ করা। এই বিষয়টির প্রতি আমি শত শত বার দৃষ্টি আকর্ষণ করেও সরকারের টনক নড়াতে পারছি না। এর ফলে বাংলা ভাষা কোড ইন্টারচেঞ্জের ক্ষেত্রে চরম জটিলতায় পড়েছে। সম্প্রতি ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামের কারিগরি কমিটির সভায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল যোগ দিয়ে জানতে পারে যে, বাংলাদেশ সরকারের প্রমিতকরণ এই কনসোর্টিয়াম মানছে না। তারা দেবনাগরী থেকে দুটি কোড এনে বাংলা ভাষার সঙ্গে যেভাবে যুক্ত করে রেখেছে তা তারা পরিবর্তন করতে চায় না। দীর্ঘদিন যাবত ইউনিকোডের সঙ্গে যোগাযোগ না করায় বা আইএসওতে কোন প্রস্তাব না পাঠানোতে আমরা এখনও দেবনাগরী কোডকেই বাংলা কোড হিসেবে ব্যবহার করছি। দুঃখজনকভাবে সরকার ইউনিকোড ব্যবহারের নামে সেই দেবনাগরী কোডকেই পৃষ্ঠপোষকতা করছে। এই জটিলতার নিরসন না করা হলে আমরা ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য এক চরম জটিল পরিস্থিতি তৈরি করে রেখে যাব। এ বিষয়ে এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। যদি আমরা ইউনিকোডকে মেনে নিই তবে আমাদের জাতীয় মান সংশোধন করা উচিত। নইলে সকল ডাটা আমাদের জাতীয় মানে সংরক্ষণ করে সকলকে জাতীয় মান অনুসরণ করতে বাধ্য করা উচিত। ২. বাংলা ভাষার উন্নয়নের সঙ্কট : আমি মনে করেছিলাম যে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বাংলা ভাষার সঙ্কট দূরীভূত হবে। কিন্তু সেটি হয়নি। বরং এই সরকারের সাড়ে সাত বছর পার হবার পরও ডিজিটাল যুগে বাংলা ভাষার চরম দুর্দিন বিরাজ করছে। আমরা সর্বশেষ যেটি জানতে পেরেছি সেটি হলো তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় একটি বড় প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। এই বড় প্রকল্পের মাঝে আছে অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিডার, টেক্সট ও টু স্পিচ, স্পিচ টু টেক্ট, বাংলা করপাস, কীবোর্ড ইত্যাদি। ২০০৯ সাল থেকেই এই প্রকল্পগুলোর কথা বলা হয়েছে। আমি নিজে এই খাতে টাকা বরাদ্দ করার জন্য অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথাও বলেছি। তিনি আমাকে স্পষ্ট করে বলেছিলেন, এজন্য টাকার অভাব হবে না। প্রকল্প দিতে বল। কিন্তু সর্বশেষ খবর হচ্ছে, এটি এতদিন পরও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে সুখনিদ্রায় রয়েছে। অন্যদিকে ও.সি.আর বানানোর জন্য সরকারের একাধিক উদ্যোগ ভেস্তে গেছে। এটুআই ইউনাইটেড বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়ে এই কাজটি সম্পন্ন করে। সেই ওসিআর আলোর মুখ দেখেনি। টিম ইঞ্জিন নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান বেসরকারীভাবে ওসিআর ডেভেলপ করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এদেরকে দিয়ে কাজ করানোর আন অফিসিয়াল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বলে সংশ্লিষ্ট মহল জানিয়েছে। এর আগে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় আইডিআরসির টাকায় ওসিআর নিয়ে কাজ করেছে। এমনকি শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ও ওসিআর নিয়ে কাজ করেছে বলে জানা গেছে। সরকার স্টিম ইঞ্জিনের ওসিআর বিপুল টাকা দিয়ে কিনেছে। এর উদ্বোধনও হয়েছে। আমি ছিলাম সেই অনুষ্ঠানে। কিন্তু একটি মানুষকেও এতসব ওসিআর-এর কোনটিই ব্যবহার করতে দেখছি না। বাকিগুলো প্রকল্প আলোর মুখই দেখেনি। এটুআই টকিং বুকস নামক আরও একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে যেটি মন্ত্রণালয়ের টেক্সট টু স্পিচ প্রকল্পের মতোই ফলাফল দিতে পারে। যতদূর জানি প্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু বই তৈরি হয়েছে। তবে এর সঙ্গে টেক্সট টু স্পিচ বা স্পিচ টু টেক্সট প্রকল্পের কোন সম্পর্ক নেই। এসব তথ্য জানতে গিয়ে এটি বোঝা গেছে যে, সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং এটুআই-এর মাঝে সমন্বয় না থাকার ফলে বছরের পর বছর ধরে কম্পিউটারে বাংলা ভাষার উন্নয়ন কাজ আটকে আছে। যদি আইসিটি বিভাগের বাংলা ভাষার প্রকল্পটি অবশেষে বাস্তবায়িত হয় তবে এখানে একটু আশার আলো দেখতে পাব। ৩. রোমান হরফে বাংলা : ডিজিটাল যুগে বাংলা ভাষার সবচেয়ে বড় সঙ্কটের নাম রোমান হরফে বাংলা লেখার প্রবণতা। আমরা মোবাইলে এসএমএস পাঠাতে গিয়ে রোমান হরফ ব্যবহার করি অনেক ক্ষেত্রেই প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার জন্য। অথচ বিটিআরসির সিদ্ধান্ত অনুসারে বাংলা সমর্থন করে না এমন মোবাইল সেট বাংলাদেশে আসার কথা নয়। বিটিআরসি নির্দেশ দিলেও সেটি বাস্তবায়নের কোন উদ্যোগ নেয়নি। এর ফলে প্রধানমন্ত্রীর বাণী বা সরকারী বক্তব্য এখনও রোমান হরফেই প্রচার করা হয়। ব্যক্তিগত প্রবণতা এমন যে কেবল মোবাইল নয়, ফেসবুক-টুইটার বা অন্য সকল ডিজিটাল মাধ্যমে বেশিরভাগ বাংলাভাষী রোমান হরফে বাংলা লেখেন। অথচ ইন্টারনেটে বাংলা লেখা মোটেই সমস্যার নয়। এখনকার মোবাইল সেট বা ব্রাউজার কোথাও বাংলার সীমাবদ্ধতা নেই। তবে সর্বনাশের বড় কাজটি করেছে সরকার নিজেই। তারা বাংলা লেখার জন্য রোমান হরফ দিয়ে লেখার প্রক্রিয়াকে সরকারীভাবে নির্দেশ দিয়ে সকলকে বাধ্য করছে যাতে রোমান হরফ দিয়ে বাংলা লেখা হয়। ওরা নিজেরা রোমান হরফে বাংলা লেখে এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করে যাতে রোমান হরফ দিয়ে বাংলা লেখা হয়। এই চরম ঘৃণিত কাজটি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় লালিত পালিত হবার ফলে বাংলা লিপি কোন একদিন বিলুপ্তই হয়ে যাবে। ৪. ডিজিটাল মানেই বাংলার বিদায় : কারও কারও স্মৃতিতে থাকতে পারে যে বঙ্গবন্ধুর সরকারের নির্দেশনা অনুসারে সরকারী অফিস-আদালত-ব্যাংক ইত্যাদিতে বাংলা ব্যবহৃত হতো। এখন এসব কর্মকা- ডিজিটাল করা হচ্ছে। কষ্ট পেলেও সত্য যে ডিজিটাল যখনই করা হয় তখনই সেখান থেকে বাংলা ভাষাকে উচ্ছেদ করা হয়। আমরা সবাই জানি উচ্চ আদালতের মতো উচ্চশিক্ষায় বাংলা ভাষার অস্তিত্বই নেই। বঙ্গবন্ধু যে শিক্ষাকে বাংলায় প্রচলন করেছিলেন সেটি এখন ইংরেজী মাধ্যমের শিক্ষায় বদলে যাচ্ছে। আমি ডিজিটাল যুগে বাংলা ভাষার মাত্র কয়েকটি জরুরী বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। বাংলা ভাষার সঙ্কটের চাইতেও গভীরে। জাতিগতভাবে আমরা দিনে দিনে বাংলা ভাষা বিমুখ হচ্ছি এবং সময় সুযোগ পেলেই বিশ্বায়ন বা আন্তর্জাতিকতার নামে রোমান হরফের দাসে পরিণত হচ্ছি। রাষ্ট্র এর পৃষ্ঠপোষকতা করছে। শেখ হাসিনার সরকারও যদি এই পতন রোধ না করে তবে কার কাছে জাতির প্রত্যাশা বড় হবে। আমাদের এখন তাই বাধ্য হয়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি তুলে ধরতে হচ্ছে। আসুন উচ্চস্বরে বলি, বাংলাদেশ রাষ্ট্রে রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। ঢাকা, ২৬ আগস্ট, ২০১৬ লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যারের জনক ॥ [email protected] w.bijoyekushe.net, ww w.bijoydigital.com
×