ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মোদী-মুফতি বৈঠক আজ, ছররা বন্দুকের পরিবর্তে উপত্যকায় ‘পাভা শেল’?

প্রকাশিত: ২০:০৪, ২৭ আগস্ট ২০১৬

মোদী-মুফতি বৈঠক আজ, ছররা বন্দুকের পরিবর্তে উপত্যকায় ‘পাভা শেল’?

অনলাইন ডেস্ক ॥ পাল্টাচ্ছে সুর। ক’দিন আগেই বিরোধী দলগুলির সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, তাঁর সরকার কাশ্মীর নিয়ে সকলের কথা বলতে তৈরি। তবে কথা হবে সংবিধানের কাঠামোয় থেকে। বার্তা ছিল স্পষ্ট, হুরিয়তকে আলোচনা প্রক্রিয়ায় সামিল করার কোনও ইচ্ছে সরকারের নেই। কিন্তু হুরিয়ত নেতাদের আলোচনার বাইরে রেখে যে ভূস্বর্গে শান্তি ফেরানোর পথ খোলা শক্ত সেটাও হাড়ে হাড়ে বুঝছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। যে কারণে গত কালই কিছুটা নরম অবস্থান নিয়ে কাশ্মীরে শান্তি ফেরাতে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসার ইঙ্গিত দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই এ বিষয়ে কেন্দ্রের মনোভাব বুঝতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠকে বসতে চলেছেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। সূত্রের খবর, কী ভাবে হুরিয়ত নেতাদের আলোচনার টেবিলে আনা যায় মূলত তা নিয়ে কথা বলতেই আজ সন্ধেয় দিল্লি এসেছেন মেহবুবা। বৈঠক হবে কাল, কাশ্মীরে কার্ফুর ৫০তম দিনে। বিরোধী দলগুলি বারবারই হুরিয়তদের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য সরকারের উপর চাপ দিয়ে যাচ্ছিল। তাদের বক্তব্য ছিল, যে কিশোর-তরুণরা পাথর ছুড়ছে তাদের উপরে একমাত্র হুরিয়ত নেতৃত্বের প্রভাব রয়েছে। তাই ওই কিশোরদের নিরস্ত করতে গেলে সব চেয়ে আগে পাশে পাওয়া প্রয়োজন হুরিয়তকে। কাশ্মীরে শান্তি ফেরাতে কেন্দ্র যে আন্তরিক, রাজনাথ সেই বার্তা দিতে গত কালই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ছররা বন্দুকের ব্যবহার বন্ধ করতে চায় সরকারও। আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রেও দাবি করা হয়েছে, খুব দ্রুত ছররা বন্দুকের বদলে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে অন্য অস্ত্র ব্যবহার শুরু করবে আধাসেনা। এই ছররা গুলিতে আজও ১৮ বছরের এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে পুলওয়ামা জেলার রাজপুরায়। অশান্তির চলতি পর্বে ভূস্বর্গে এই নিয়ে ৬৭ জনের প্রাণ গেল। রাজপোরায় এ দিন ছররাতে জখমও হয়েছেন বেশ ক’জন বিক্ষোভকারী। ছররা বন্দুকের পরিবর্তে কী ব্যবহার করা যেতে পারে তা খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই একটি কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্র। চলতি মাসের মধ্যেই কেন্দ্রকে রিপোর্ট জমা দেবে সেই কমিটি। সূত্রের খবর, সেই কমিটি ছররার বদলে যে বিকল্পগুলি নিয়ে ভাবছে সেই তালিকায় গোড়াতেই রয়েছে ‘পাভা শেল’। আদতে লঙ্কার গুঁড়ো। আইআইটি-দিল্লি ও অর্ডিন্যান্স ফ্যাকট্রি বোির্ডের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয়েছে এই পাভা শেল। কী ভাবে কাজ করবে এটি? পেলারগনিক অ্যাসিড ভ্যানিলিল অ্যামাইড বা সংক্ষপে পাভা নামে এই যৌগটি পাওয়া যায় লঙ্কার গুঁড়োতে। পেলেট বন্দুকের ছররা যেখানে চামড়া ভেদ করে শরীরে প্রবেশ করে চোখ-সহ অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি করে, সেখানে পাভা জৈব পদার্থ হওয়ায় এতে ক্ষতি হয় অনেক কম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলছে, পাভা শেল ফাটার পরে যারা এর আওতায় আসবে তাদের শরীরে ওই যৌগ লাগা মাত্র জ্বলুনি শুরু হবে। এবং শরীরের সেই অংশ সাময়িক ভাবে অবশ হয়ে যাবে। মাত্রা বেশি হলে সাময়িক ভাবে নড়াচড়ার ক্ষমতাও। কাশ্মীরে ছররা বন্দুকের ব্যবহার হয়ে আসছে ২০১০ সাল থেকে। প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রসচিব জি কে পিল্লাইয়ের মতো আমলারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছররা বন্দুকের পক্ষে এখনও সওয়াল করলেও, যে ভাবে চলতি বিক্ষোভে মানুষ মারা গিয়েছে ও দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন তাতে পরিস্থিতি এখন কার্যত হাতের বাইরে চলে গিয়েছে বলেই মনে করছে কেন্দ্র। এই পরিস্থিতিতে তাই ঝুঁকি না নিয়ে বিরোধীদের দাবি মেনে দ্রুত ছররা বন্দুক বন্ধ করতে পক্ষে এগিয়ে এসেছে কেন্দ্র। পাভার পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে উঠে এসেছে ‘ডাই মার্কার গ্রেনেড’-এর নামও। উপত্যকায় আগেও এই অস্ত্র ব্যবহার করেছে আধাসেনা। এতে যে ডাই বা রং থাকে তা বিক্ষোভকারীর শরীরে লেগে যায়। ফলে রংয়ের মধ্যে থাকা রাসায়নিকের কারণে শুরু হয় জ্বলুনি-অস্বস্তি। রং যেখানে লাগে সাময়িক ভাবে অবশ হয়ে যায় সেই অঙ্গও। ফলে তাদের গ্রেফতার করা সুবিধে হবে বলে দাবি করেছে মন্ত্রক। আর রং সহজে ওঠে না বলে পরেও বিক্ষোভকারীদের চিহ্নিত করতে সুবিধে হবে নিরাপত্তাবাহিনীর। এ ছাড়া কাঁদানে গ্যাসের ‘স্মোক শেল’ ব্যবহারের বিষয়েও ভাবছে কেন্দ্র। যা বর্তমানের কাঁদানে গ্যাসের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী। তবে এগুলির কোনটির কারণে প্রাণহানির আশঙ্কা নেই বলে দাবি করেছে মন্ত্রক। যদিও কাশ্মীরে শান্তি কায়েমের যাবতীয় চেষ্টায় জল ঢালার চেষ্টা বন্ধ করতে রাজি নয় পাকিস্তান। কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে আজ ফের আন্তর্জাতিক স্তরে সক্রিয় হয়েছে পাকিস্তান। পি-৫ গোষ্ঠী এবং ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূতদের কাছে জম্মু-কাশ্মীরে ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ জানিয়েছে। সীমান্তপারের সন্ত্রাস নিয়ে ভারতও তার কঠোর অবস্থান থেকে সরছে না। লালকেল্লা থেকে এ বারের বক্তৃতায় মোদী বালুচিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে মুখ খুলতেই ইসলামাবাদ থেকে এসেছিল আলোচনার প্রস্তাব। তাদের দাবি ছিল, কথা বলতে হবে কাশ্মীর নিয়ে। ভারত তাৎক্ষণিক ভাবেই জানিয়ে দেয়, নয়াদিল্লি কথা বলতে তৈরি। জয়শঙ্কর চিঠি লিখে ইসলামাবাদকে জানিয়ে দেন সন্ত্রাসই কেবল আলোচনার বিষয় হতে পারে। অন্য কোনও বিষয় নয়। পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক বিষয়ক পরামর্শদাতা সরতাজ আজিজ বিদেশসচিব জয়শঙ্করের চিঠি সম্পর্কে ক্ষোভ প্রকাশ করে, কেবল সন্ত্রাস নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছেন। সাউথ ব্লকের কাছে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র আজ বলেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় দেওয়া ও মদত জোগানো, সন্ত্রাসের ভাল-মন্দ ভেদ করার ফলে গোটা এলাকায় ভয়ঙ্কর বিপদ তৈরি হয়েছে। পাকিস্তানকে এই বাস্তবতাটা বুঝতে হবে। সীমান্ত পারের সন্ত্রাস কী প্রভাব ফেলছে, সেটা অস্বীকার করে চলার পথ থেকে পাকিস্তান সরে এলে তবেই দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কে উন্নতি হওয়া সম্ভব।’’ সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×