ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নৌ শ্রমিক ধর্মঘট লঞ্চ চললেও পণ্যবাহী যান চলছে না

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৭ আগস্ট ২০১৬

নৌ শ্রমিক ধর্মঘট লঞ্চ চললেও পণ্যবাহী যান চলছে  না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরাদেশে লঞ্চ চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও পণ্যবাহী নৌযান চলাচল না করায় দুই সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ধর্মঘট প্রত্যাহারে বৈঠক হলেও এতে কোন সুরাহা হয়নি। নতুন করে আবারও মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা থাকলেও ওই সময় এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। ফলে ধর্মঘট প্রত্যাহার নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। মাসিক ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা মজুরি, কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ পুনঃনির্ধারণ, নৌপথে সন্ত্রাসী-ডাকাতি-চাঁদাবাজি বন্ধ ও নদীর নাব্য রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়ার দাবিতে মঙ্গলবার থেকে দেশের সবগুলো নদীবন্দরে ধর্মঘটের ডাক দেয় নৌযান শ্রমিকরা। তবে এর মধ্যে সব থেকে বড় দাবি মজুরি। শ্রমিক এবং মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে মালিকপক্ষ বাড়তি বেতন দিতে অস্বীকৃতি জানায়। অন্যদিকে শ্রমিকরা সাফ জানিয়ে দেয় ন্যুনতম ১০ হাজার টাকা না দিলে তারা কাজে যোগ দেবে না। ধর্মঘটের মধ্যেও সারাদেশের লঞ্চ যোগাযোগ একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়নি। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিটিএ) বলছে, শুক্রবার সকাল এবং সন্ধ্যায় সদরঘাট থেকে লঞ্চ ছেড়ে গেছে, যা মোটামুটি স্বাভাবিক। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠনো খবর অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন রুটের ছোট লঞ্চগুলোও চলাচল শুরু করেছে। এতে দুর্ভোগ কমেছে সাধারণ যাত্রীদের। আবার কোন কোন ঘাটে নৌ-পুলিশের প্রহরায় যাত্রী চলাচল করছে। শৃঙ্খলা বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কায় এ ব্যবস্থা বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। বিআইডব্লিটিএ বলছে, বৃহস্পতিবার ৬৩টি লঞ্চ গন্তব্যের উদ্দেশে সদরঘাট ছেড়ে গেছে। অন্যদিকে সদরঘাটে ভিড়েছে ৪৪টি লঞ্চ। অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিবহন সংস্থা বলছে, শুক্রবার দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সদরঘাটে ৪৯টি লঞ্চ ভিড়েছে। স্টাফ রিপোর্টার বরিশাল থেকে জানান, নৌযান শ্রমিকদের ডাকা নৌ ধর্মঘট উপেক্ষা করে বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটে মালিক সমিতির হস্তক্ষেপে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। শুক্রবার দুপুর দুটোর দিকে সুরভী নামের একটি লঞ্চ বরিশাল নদীবন্দর থেকে শ্রীপুর হয়ে ভোলার ভেদুরিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। পরে বিকেল চারটায় গ্রীন ওয়াটার-৫ নামের আরও একটি লঞ্চ যাত্রী নিয়ে পাতারহাট হয়ে মজু চৌধুরীর হাটের উদ্দেশে যাত্রা করে। লঞ্চ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি শেখ মোঃ আব্দুর রহিম জানান, সম্পূর্ণ অবৈধভাবে মালিকদের জিম্মি করে লঞ্চ ধর্মঘটের ডাক দেয় শ্রমিকরা। যারা ধর্মঘট ডেকেছে তারা লঞ্চের বৈধ শ্রমিক নয়। এটাকে নস্যাৎ করে দেয়া হয়েছে। শুক্রবার দুপুর থেকে বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটে লঞ্চ চলাচল শুরু করা হয়েছে। নৌ শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের বরিশালের আহ্বায়ক গিয়াস উদ্দিন বলেন, ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে ভাড়াটে লোকের মাধ্যমে জোর-জুলুম করে লঞ্চ চলাচলের ব্যবস্থা করেছে মালিকরা। অপরদিকে নৌ-পুলিশের এএসপি আব্দুল মোতালেব বলেন, নদীবন্দরে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে তারা কাজ করছেন। কেউ অরাজকতার সৃষ্টি করলে তাদের প্রতিহত করা হবে। লঞ্চ ও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া সকাল থেকে বরিশাল নৌবন্দরে পাঁচটি লঞ্চ থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লঞ্চ শ্রমিকরা ঘাটে থাকা কীর্তনখোলা-২, সুরভী-৮, সুন্দরবন-১০ লঞ্চগুলোকে ঘাট থেকে সরিয়ে দেয়। তবে সেগুলো সন্ধ্যা নাগাদ পুনরায় ঘাটে এসে যাত্রী তুলে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। মংলা থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, মংলা বন্দরে পণ্য বোঝাই-খালাস ও পরিবহন কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। বন্দরে আসা ১৩টি জাহাজ থেকে মালামাল ওঠা-নামা করার জন্য কোন লাইটারেজ যায়নি। এমনকি পোর্ট জেটিতেও কোন কাজ হচ্ছে না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত নৌযান শ্রমিকদের এ কর্মবিরতি অনির্দিষ্টকালের জন্য অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন নৌ শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক ওয়েজুল ইসলাম বুলবুল। স্টাফ রিপোর্টার চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, নৌ ধর্মঘটের প্রভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ভোগ্যপণ্যের বাজারে। বিদেশ থেকে আমদানি করা যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল, ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যসহ যেসব সামগ্রী কন্টেনারে আসে সেগুলো নিয়ে কোন সমস্যা নেই। নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটের সরাসরি প্রভাব পড়েছে খাদ্যদ্রব্য, সিমেন্ট ক্লিংকার, সারসহ যেসব পণ্য খোলা আকারে আসে। সুতরাং এ ধর্মঘট অব্যাহত থাকায় খাদ্যপণ্যের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। গুদামে থাকা পণ্য স্থলপথে পরিবাহিত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু গুদামজাত হচ্ছে না নতুন আমদানির পণ্য। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, সামনে ঈদ-উল-আযহা। এ অবস্থা চলতে থাকলে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। সর্বশেষ শ্রম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে মালিকদের বৈঠকে কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তারা চান ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সুরাহা হোক। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, বহিঃনোঙরে বড় জাহাজগুলো অলস ভেসে আছে। পণ্য লাইটারিং সম্পন্ন বন্ধ। এ কর্মসূচী দীর্ঘায়িত হলে পণ্যবোঝাই জাহাজের সারিও দীর্ঘ হবে। এতে জাহাজজটের আশঙ্কাও সৃষ্টি হয়েছে। তবে অয়েল ট্যাঙ্কারগুলো স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে। জাহাজ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কোস্টার ভ্যাসেল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের এক নেতা বলেন, আমরাও চাই দ্রুত এ অচলাবস্থার অবসান হোক। শ্রম পরিদফতরের কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনায় সিদ্ধান্ত না হলেও মালিক-শ্রমিক আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, সবকিছুর দাম যেহেতু বেড়েছে, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিও অযৌক্তিক নয়। তবে তারা সর্বনিম্ন যে মজুরি চাচ্ছেন তা মানতে গেলে জাহাজের পরিচালন ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। সেক্ষেত্রে মাঝামাঝি একটা কিছু হতে পারে। তবে তিনি এ কথাও বলেন, জাহাজ মালিকদের একটি অংশ শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে কিছুটা নমনীয় হলেও অপর একটি অংশ অনড়। এদিকে, ধর্মঘটের চতুর্থ দিন শুক্রবারও চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর ষোলোটি ঘাটে কোন কাজ হয়নি। তবে চার দফা দাবিতে যথারীতি মিছিল-সমাবেশ হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক ছয় শতাধিক লাইটারেজ জাহাজ অলস অবস্থান করছে ঘাটগুলোর অদূরে।
×