ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এবার মেজর জিয়া ও তিন সহযোগীকে ধরতে অভিযান

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৭ আগস্ট ২০১৬

এবার মেজর জিয়া ও তিন সহযোগীকে ধরতে  অভিযান

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ বিশ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষিত বহুল আলোচিত মেজর জিয়ার পাশাপাশি তার তিন সহযোগীর সন্ধান চলছে। ওই তিন সহযোগী আনসার ইসলামের শূরা কমিটির সদস্য। তাদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ব্লগার, লেখক, প্রকাশক, পুরোহিত, বিদেশী, ধর্মযাজক হত্যার ঘটনা ঘটছে। আর এই মানুষদের হত্যার সঙ্গে জড়িতদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে মেজর জিয়া। তার প্রশিক্ষণের পরেই একেকটি হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যায় রিমান্ডে থাকা মঈনুল হাসান ওরফে সিফাতকে জিজ্ঞাসাবাদেও বেরিয়ে আসছে এমন তথ্য। গত বছরের ৩১ অক্টোবর আজিজ সুপার মার্কেটে প্রকাশনার মালিক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে হত্যা করে জঙ্গীরা। ওই দিনই একই সময়ে ঢাকার মোহাম্মদপুরে শুদ্ধস্বর প্রকাশনা কার্যালয়ে হামলা করে জঙ্গীরা কুপিয়ে ও গুলি চালিয়ে প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুল (৫০), লেখক এবং ব্লগার প্রকৌশলী তারেক রহিম (৪২) ও রণদীপম বসুকে (৪০) হত্যাচেষ্টা করে। গত ১৫ জুন শুদ্ধস্বরে হামলায় জড়িত পুরস্কার ঘোষিত জঙ্গী সুমন হোসেন ওরফে শাকিব ওরফে শিহাব ওরফে সাইফুল গ্রেফতার হয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। তার দেয়া তথ্যের সূত্র ধরে গত ২৩ আগস্ট দীপন হত্যায় সরাসরি অংশ নেয়া মঈনুল হাসান ওরফে শামীম ওরফে সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান গ্রেফতার হয়ে ছয় দিনের রিমান্ডে রয়েছে। শিহাব ও সিফাতকে ধরিয়ে দিতে পুলিশের তরফ থেকে ২ লাখ টাকা করে ৪ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। দীপন হত্যার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, শিহাবের তথ্যমতে গত ২৬ জুন গ্রেফতার হয় রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানাধীন ফরিদাবাদ মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা মোঃ নাইম ওরফে সাইফুল ইসলাম ওরফে সাদ এবং ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থানাধীন আল আরাফাহ ইসলামিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক সোহেল আহম্মেদ ওরফে সোভেল। এই দুই শিক্ষক আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দাওয়াতি সেলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে নৃশংস হত্যাকা-ের আগের নানান প্রক্রিয়া সম্পর্কিত চাঞ্চল্যকর তথ্য। উর্ধতন এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে বলেছেন, কয়েকটি ধাপ পার হওয়ার পর একজনকে আত্মঘাতী জঙ্গী বানানো হয়। এরপর কয়েক আত্মঘাতী জঙ্গী দিয়ে হত্যাকা- ঘটানো হয়। জঙ্গী সংগঠনগুলোর কার্যক্রমের প্রথম ধাপ দাওয়াত দেয়া। শিক্ষক সাদ নরসিংদীতে আর সোহেল খুলনায় প্রথম আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দাওয়াতি সেলের টার্গেটে পড়েন। নামাজের পর বয়ান শোনার জন্য তাদের দাওয়াত দেয়া হয়। সেই দাওয়াতে অংশ নেয়ার পর থেকেই শুরু হয় দুই শিক্ষকের জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ার ইতিহাস। তারা পুরোপুরি ইসলামের জন্য কাজ করতে রাজি হলে তাদের বিভিন্ন বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের মগজধোলাই চলে। কয়েক দফায় পরীক্ষা হয় তাদের। চূড়ান্ত পরীক্ষায় তারা অপারেশনাল কার্যক্রম ও প্রক্ষিশণ কার্যক্রম চালানোর জন্য অযোগ্য বিবেচিত হয়। তবে তারা দাওয়াতি কার্যক্রমের জন্য উপযুক্ত বলে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। এরপর থেকেই তাদের জঙ্গী সংগঠনটির দাওয়াতি কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। তারা দাওয়াতি সেলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা হিসেবে বিভিন্ন মসজিদে ঘুরে ঘুরে নামাজের পর পবিত্র কোরান-হাদিসের আলোকে বয়ান শোনার জন্য দাওয়াত দিয়ে আসছিলেন। তাদের টার্গেট ছিল ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সী যুবকরা। পরবর্তীতে টার্গেটকৃত যুবকদের মসজিদের ভেতরেই হাত ধরে ইসলামের জন্য কাজ করার ওয়াদা করানো হয়। এরপর তাদের নিয়ে যাওয়া হয় জঙ্গীদের বিভিন্ন আস্তানায়। সেখানে তাদের দফায় দফায় মগজধোলাই চলে। এর মধ্যে যারা ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে রাজি হয়, তাদের আলাদা তালিকাভুক্ত করা হয়। আর যারা অযোগ্য বিবেচিত হয়, তাদের দিয়ে অন্যান্য সাংগঠনিক কাজ চালানো হয়। জঙ্গী সংগঠনটির বহু সেল রয়েছে। প্রতিটি সেল কাটআউট পদ্ধতিতে কাজ করে। এর মধ্যে রয়েছে দাওয়াতি সেল। এ সেলটি শুধু সদস্য সংগ্রহ করে। সংগৃহীত সদস্যদের নির্দিষ্ট মারকাজে (নিরাপদ আস্তানা) পাঠানো হয়। সেখানে মগজধোলাই করার জন্য একটি গ্রুপ রয়েছে। মারকাজে কয়েক দফায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে উত্তীর্ণদের পাঠানো হয় বিভিন্ন ট্রেনিং সেন্টারে। ট্রেনিং সেন্টারে পাঠানোর আগে নতুন সদস্যদের নাম পরিবর্তন করে সাংগঠনিক নাম দেয়া হয়। একটি সেল টার্গেটকৃত ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। টার্গেট করার আগে জঙ্গী সংগঠনটির শূরা কমিটি ওই ব্যক্তিকে হত্যার চূড়ান্ত নির্দেশ দেয়। আরেকটি সেল অস্ত্র-গোলাবারুদ সংগ্রহ করে। তা স্থানান্তর করার জন্য একটি সেল রয়েছে। চূড়ান্ত হত্যার আগে মিলিটারি শাখা ৫-৬ জনকে নিয়ে সিøপার সেল গঠন করে। সেই সিøপার সেলই টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে হত্যা করে। পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলছেন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নিষিদ্ধ হওয়ার পর আনসার আল ইসলামের নামে কার্যক্রম চালাচ্ছে জঙ্গী সংগঠনটি। জঙ্গী সংগঠনটিতে তিনজন শূরা সদস্য রয়েছে। তাদের নির্দেশের পর হত্যাকা- হয়। আর হত্যা করতে সামরিক শাখার প্রধান হিসেবে সার্বিক কর্মকা- পরিচালনা করে মেজর জিয়া। এ চারজনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হলে ব্লগার, প্রকাশক, লেখক, বিদেশী ধর্মযাজক থেকে শুরু করে বহু চাঞ্চল্যকর হত্যার রহস্য উদ্ঘাটিত হবে। এ ব্যাপারে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের উপকমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ জনকণ্ঠকে বলেন, শুদ্ধস্বর প্রকাশনীতে হামলায় জড়িত শিহাব ও সর্বশেষ দীপন হত্যায় রিমান্ডে থাকা সিফাতের কাছ থেকে বহু অজানা তথ্য পাওয়া গেছে। সেসব তথ্য মোতাবেক অভিযান চলছে। মেজর জিয়াসহ তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের গ্রেফতার করতে তৎপরতা অব্যাহত আছে।
×