ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অন্যের ইস্যু হাইজ্যাক করে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছেন খালেদা জিয়া

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৭ আগস্ট ২০১৬

অন্যের ইস্যু হাইজ্যাক করে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছেন খালেদা জিয়া

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কোন ইস্যু খুঁজে না পেয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটির রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্রবিরোধী আন্দোলন ছিনতাই করেছেন বলে অভিযোগ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির অভিযোগ, খালেদা জিয়া তাঁর মনগড়া বক্তব্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। অন্যের ইস্যু হাইজ্যাক করে বিএনপি এখন পরগাছা নির্ভর দলে পরিণত হয়েছে। শুক্রবার আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এবং জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত পৃথক পৃথক কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে দলটির নেতারা এসব অভিযোগ করেন। ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, কোন ইস্যু খুঁজে না পেয়ে খালেদা জিয়া এখন অন্যের ইস্যু হাইজ্যাক করে রাজনৈতিক সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছেন। পরগাছা যেমন অন্য গাছে জন্মায়, ঠিক তেমনি বিএনপি এখন অন্যের ইস্যু নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। বিএনপির প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, নতুন করে গ-গোল পাকানোর চেষ্টা করবেন না। সরকার এবং আওয়ামী লীগ সেটার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। রামপাল নিয়ে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু অতি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কখনও ভাল নয়। ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কোন বক্তব্য রাখা জাতির জন্য সঠিক নয়, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও সঠিক নয়। আপনাদের যদি কোন বক্তব্য থাকে, তাহলে দয়া করে সরকারের কাছে উপস্থাপন করুন। এমন কোন পরিবেশ তৈরি করবেন না, যারা দেশকে জঙ্গী রাষ্ট্র, ব্যর্থ রাষ্ট্রে রূপান্তর করতে চায়, তাদের হাতে হাতিয়ার তুলে দেবেন না।’ সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সুজিত রায় নন্দী ও আমিনুল ইসলাম আমিন। গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ডদের যে কোন মুহূর্তে গ্রেফতার- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার ঘটনায় জঙ্গী ছাড়াও রাজনৈতিক মদদ রয়েছে। যারা আগে জামায়াত-শিবির করত, যারা বাগমারায় বাংলা ভাইকে প্রশ্রয় দিয়েছিল, তাদেরই নেতৃত্বে এই হামলা হয়েছে। গুলশান হত্যাকা-ের মাস্টারমাইন্ডদের (মূল হোতাদের) আমরা চিহ্নিত করেছি, তাদের গ্রেফতারে পুলিশ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যেকোন সময় তাদের গ্রেফতার করা হবে। শুক্রবার রাজধানীর খামার বাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর (উত্তর) ছাত্রলীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা ও শেখ হাসিনাকে বার বার হত্যাচেষ্টা নিয়ে ‘টার্গেট আগস্ট; ধানম-ি থেকে বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ’ শীর্ষক একটি বইয়ের মোড়ক উšে§াচন করা হয়। ঢাকা উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি সৈয়দ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এনামুল হক শামীম, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সহকারী এ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর, ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি মোঃ সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন প্রমুখ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জঙ্গী হামলা ও নাশকতার ঘটনায় যাদেরই ধরা হচ্ছে তারাই স্বীকার করেছে যে, তারা অতীতে কোন সময়ে কিংবা এখনও জামায়াতে ইসলামীর ক্যাডার হিসেবে পরিচিত ছিল। তারাই একাজগুলো করছে। শুধু জামায়াতে ইসলামীই নয়, নিষিদ্ধ জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোর সদস্যও তারা। তাদের (জামায়াতের) আশ্রয়-প্রশ্রয়ে জঙ্গী হয়েছে তারা। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে। সেই ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। একই ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি অবিচল থেকে জীবনের মায়া ত্যাগ করে এসব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনায় রাজনৈতিক মদদদাতাদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘১৯৭৫ সালে যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল তারা সফল হয়নি। সেই তারাই শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। সারাদেশে যেসব জঙ্গী হামলা ঘটছে সবগুলো ওই সব পরাজিত শক্তির চক্রান্ত।’ বিএনপি নেতাদের চোখে অশ্রু মানায় না- হানিফ ॥ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বিএনপিকে ‘খুনীদের ফোরাম ও হত্যাকারীর দল’ আখ্যায়িত করে বলেছেন, বিএনপি বাঙালী জাতিকে বার বার কাঁদিয়েছে। তাই তাদের নেতাদের চোখে অশ্রু মানায় না। সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি এখন রামপাল ইস্যুতে জাতিকে বিভ্রান্ত করার কাজে নেমেছে। কিন্তু তাদের অতীতের সব চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র যেমন ব্যর্থ হয়েছে, এ ইস্যুতেও তারা ব্যর্থ হবে। শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু গবেষণা ও শিক্ষা পরিষদ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সহ-সভাপতি প্রবীণ আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সরকারী কর্মকমিশনের সদস্য অধ্যাপক এসএম আনোয়ারা বেগম, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শাহিনুর রহমান প্রমুখ। বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কঠোর সমালোচনা করার পাশাপাশি তাঁকে উদ্দেশ্য করে হানিফ বলেন, ‘আপনাদের যেসব কর্মী ঢাকায় পালিয়ে আছেন, তারা পেট্রোলবোমা মেরেছিল। আপনার উচিত ছিল একজন দায়িত্ববান রাজনীতিবিদ হিসেবে তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করা। কিন্তু তা আপনারা করেননি। হত্যাকারীদের চোখে অশ্রু মানায় না মির্জা ফখরুল সাহেব।’ বিএনপি-জামায়াত জোটের টানা তিন মাসের অবরোধ-হরতালের নামে নির্বিচারে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার কথা উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন করেন, সে সময় পেট্রোলবোমায় মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় বিএনপি নেতাদের কোন অনুভূতি কী কাজ করেছিল? খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, জঙ্গীদের পৃষ্ঠপোষক জামায়াতের সঙ্গে থাকলে বিএনপি নেতা-কর্মীদের কাঁদতেই হবে। ১৯৭১, ১৯৭৫ ও ২০০৪ সালের হত্যাকা- একই সূত্রে গাঁথা। ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলায় যদি শেখ হাসিনা নিহত হতেন, তবে ওই দিনটিতে তারেক জিয়াও জন্মদিন পালন করতেন। তিনি বলেন, বিএনপিতে অনেক মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন, অনেক ভাল মানুষও আছেন। কিন্তু এই দলের মূল নেতৃত্বে রয়েছেন আইএসআইয়ের এজেন্টরা। এদের থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এই নেতৃত্বকে ছুড়ে ফেলতে হবে। তবেই আপনাদের কান্না বন্ধ হবে।
×