ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রমিকের মেধাবী সন্তানকে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা বৃত্তি দেবে সরকার

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৭ আগস্ট ২০১৬

শ্রমিকের মেধাবী সন্তানকে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা বৃত্তি দেবে সরকার

মশিউর রহমান খান ॥ অসচ্ছল শ্রমিকের মেধাবী সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে বৃত্তি দেবে সরকার। এককালীন এ বৃত্তি প্রদান করা হবে। সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত এ বৃত্তির অর্থ প্রদান করা হবে। প্রাথমিকভাবে এসএসসি থেকে শুরু করে উচ্চস্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝে এ বৃত্তি প্রদান করা হবে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সরকারী শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এ বৃত্তির অর্থ প্রদান করা হবে। সম্প্রতি মন্ত্রণালয় এ তহবিল থেকে শ্রমিকদের মেধাবী সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় অনুদান দেয়ার এ উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। সরকার ঘোষিত এ ভাতা পেতে হলে শ্রমিকের সন্তানদের মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ফরমে আগামী ৩০ আগস্টের মধ্যে আবেদন করতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। সরকারের উদ্যোগে শ্রমিক ও তার পরিবারের কল্যাণে গঠিত শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে এ পর্যন্ত জমা পড়েছে ১৭২ কোটি টাকা। এ অর্থ থেকেই তাদের সন্তানদের বৃত্তি প্রদান করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিভিন্ন খাতে কর্মরত অসচ্ছল শ্রমিকদের যেসব সন্তান ২০১৫-১৬ সালে এসএসসি পরীক্ষায় সব বিষয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছে তাদের উচ্চশিক্ষার জন্য এককালীন ২৫ হাজার টাকা দেয়া হবে। এছাড়া যারা এরই মধ্যে সরকারী মেডিক্যাল কলেজ, কৃষি, প্রকৌশল, প্রযুক্তি ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে, তাদের এককালীন ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত অনুদান দেয়া হবে। আগামী সেপ্টেম্বরে এ শিক্ষা অনুদান বিতরণ করা হবে। জানা গেছে, দেশের প্রচলিত ও অপ্রচলিত সব খাতের শ্রমিকদের কল্যাণে গঠিত সরকারী শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে এরই মধ্যে ১৭২ কোটি টাকা জমা পড়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গঠিত এ ফাউন্ডেশনে জমাকৃত অর্থে অসচ্ছল ও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য এককালীন অনুদান দেয়া হয়। শ্রমিকদের অধিকতর কল্যাণে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় তহবিলের আকার বাড়াতে বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠান ও দেশের সব ব্যাংককে অন্তর্ভুক্ত করতে ইতোমধ্যেই আলোচনা শুরু করেছে। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে এখন পর্যন্ত ৭৫টি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান তাদের বার্ষিক লভ্যাংশের একটি নির্দিষ্ট অংশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জমা দিয়েছে। সম্প্রতি মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠান এবং সব সরকারী ও বেসরকারী ব্যাংককে এ ফাউন্ডেশনে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তাদের উৎসাহিত করার চেষ্টা করছে। এছাড়া শ্রমিকদের কল্যাণে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। অপরদিকে, দুর্ঘটনার শিকার শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত বিশেষ তহবিলে সর্বশেষ তথ্যমতে ১ কোটি টাকা জমা হয়েছে। তাজরীন গার্মেন্টসে অগ্নিকা-ের পর নিহত ১শ’ ৯ শ্রমিকের পরিবারকে এ ফাউন্ডেশন ১ লাখ টাকা করে অনুদান দিয়েছে। এছাড়া পোশাক খাতের সব শ্রমিককে প্রভিডেন্ট ফান্ডের আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া নির্মাণ ও মোটরযান শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফাউন্ডেশনের আওতায় পাঁচ বছর মেয়াদী গ্রুপ বীমার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এ বীমা স্কিমে বীমাকৃত অর্থের পরিমাণ ২ লাখ টাকা। উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে অসচ্ছল শ্রমিকদের আর্থিক সেবা প্রদানের উদ্যোগ নেয় সরকার। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ২০ সদস্যের পরিচালনা বোর্ড এ ফাউন্ডেশন পরিচালনা করে থাকে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অল্প সময়েই শ্রমিকদের কল্যাণে ফাউন্ডেশন কার্যকর অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। অসচ্ছল শ্রমিকদের চিকিৎসা ও তাদের সন্তানদের শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে ফাউন্ডেশন থেকে অনুদান প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমানে নির্দিষ্ট খাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হলেও ভবিষ্যতে এর পরিধি আরও বাড়বে। শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে সরকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করতে আলোচনা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে তহবিলের আকার আরও বাড়ানো সম্ভব হবে। মূলত শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের আকার বাড়াতে শ্রমিক, মালিক ও প্রতিষ্ঠান সব পক্ষকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতেই এ তহবিল গঠন করা হয়েছে। তহবিলটির আওতা সম্পর্কে জানা গেছে, কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনার শিকার হয়ে স্থায়ীভাবে পঙ্গু হওয়া শ্রমিক ও নিহত শ্রমিকের পরিবারকে এককালীন সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা অনুদান দেবে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন। মরদেহ পরিবহন ও সৎকারের জন্য দেয়া হবে ২৫ হাজার টাকা করে। দুর্ঘটনার শিকার শ্রমিকের চিকিৎসা ব্যয় হিসেবে এককালীন ৫০ হাজার ও দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসার জন্য এককালীন ১ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হবে। নারী শ্রমিকরা মাতৃত্বকালীন চিকিৎসার জন্য ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান পাবেন। কোন শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দিলে তিনি সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা অনুদান পাবেন।
×