ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাইবার ক্রাইম

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ২৭ আগস্ট ২০১৬

সাইবার ক্রাইম

শ্যপট এক ॥ তামান্না মৌ। কাজ করেন একটি বেসরকারী মোবাইল কোম্পানিতে। যেখানে পরিচয় হয় সহকর্মী রিদমের সঙ্গে। একপর্যায়ে রিদম প্রেমের প্রস্তাব দেয় মৌকে। মৌ তাতে সাড়া দেয়নি। ঝামেলা হতে পারে ভেবে মৌ ওই চাকরি ছেড়ে দেয়। কিন্তু থেমে থাকেনি রিদম। নিয়মিত মোবাইলে বিরক্তি এমনকি হুমকিও দিত মৌকে। এক সময় দেখা গেল আরেক ভয়াবহ ঘটনা। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ল মৌয়ের বিভিন্ন রকম ছবি। যেগুলো গ্রাফিক্সের মাধ্যমে তৈরি করা। বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ল মৌ ও তার পরিবার। দৃশ্যপট দুই ॥ পেনশনের টাকাটা ক’দিন হলো পেয়েছেন বদরুল সাহেব। খুশিতে বুকটা ভরে ওঠে তার। এই টাকা দিয়েই বাড়ির বাকি কাজটা শেষ করবেন বলে ঠিক করেছেন। এদিকে এই টাকার দিকে চোখ বসিয়েছে একই মহল্লার পিন্টু মিয়া। তার দাবি দুই লাখ টাকা চাদা না দিলে বাড়ির কোন কাজ করতে দেয়া হবে না। মোবাইলে এমন হুমকি পেয়ে বেশ ভড়কে গিয়েছেন বদরুল সাহেব। কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না বদরুল। এ দুটি ঘটনার জন্য আছে আলাদা-আলাদা প্রতিকার ও আইন। প্রথমেই প্রথম দৃশ্যপট দিয়ে কথা বলা যাক- এ ব্যাপারে তথ্য ও প্রযুক্তি আইন ও পর্নোগ্রাফি আইনে কি আছে দেখা যাক। ২০০৬ সালের তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক মাধ্যমে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করে ১. যা মিথ্যা ও অশ্লীল ২. কেউ তা পড়লে, দেখলে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে পারে ৩. যার দ্বারা মানহানি ঘটে ৪. আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে ৫. রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয় ও ৬. কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে। এমন ধরনের তথ্যের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করা হলে তিনি সর্বোচ্চ ১৪ বছর এবং কমপক্ষে ৭ বছর কারাদ-ে দ-িত হবেন। সেই সঙ্গে এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানাও হতে পারে (ধারা ৫৭-এর উপধারা-১) আবার এদিকে ২০১২ সালের পর্নোগ্রাফি আইনে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি ইন্টারনেট বা ওয়েবসাইট বা মোবাইল ফোন বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি সরবরাহ করলে তিনি এ ধরনের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদ- এবং দুই লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদ-ে দ-িত হবেন। ভুয়া ফেসবুক বা টুইটার আইডি খুলে হয়রানি ভুয়া ফেসবুক বা টুইটার আইডি খুলে বিব্রত করা খারাপ মন্তব্য করা কিংবা সম্মানহানিকর কিছু পোস্ট করা অহরহ ঘটছে। পুলিশ ও এ রকম অনেক কেস হ্যান্ডেল করছে এবং অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসছে প্রতিনিয়ত। ফলে বর্তমানে এ প্রবণতা বেশ কমেছে। এভাবে যদি কোন ব্যক্তি ফেসবুকের মাধ্যমে কোন ব্যক্তিকে বিব্রত বা হয়রানি করে এবং এর ফলে যদি ওই ব্যক্তি সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যাবে। এক্ষেত্রে থানায় গিয়ে জিডি করুন। সমস্যাটি গুরুতর হলে প্রয়োজনে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে কিংবা পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করতে পারেন। প্রমাণস্বরূপ স্ক্রিন শর্ট নিন ও সংশ্লিষ্ট পেজটি সেভ করে রাখুন যাতে পরবর্তীতে এটি আপনার অভিযোগের ভিতকে শক্ত করে। আর সম্প্রতি চালু হওয়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ঐবষষড় ঈঞ এ্যাপস গিয়ে আপনার সমস্যার কথা লিখে পাঠাতে পারেন। দ্বিতীয় দৃশ্যপটের মোবাইলে হুমকি পাওয়া বদরুল সাহেব যেভাবে প্রতিকার পেতে পারেন। মোবাইলে হুমকি দিলে কী প্রতিকার কেউ মোবাইলে হুমকি, ভয়ভীতি প্রভৃতি দেখালে বা কোন ব্যক্তির কারণে পরিবারিক বা সামাজিক শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্ট হলে বা মারামারি কলহ বিবাদ তৈরির আশঙ্কা থাকলে আপনি ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭ ধারার আশ্রয় নিতে পারেন। ১০৭ ধারায় এ ধরনের মামলা করলে সেটিকে শান্তি রক্ষার মুচলেকার মামলা বলে। এ ধারায় মামলা হলে যে আপনাকে হয়রানি করছে বা হুমকি দিচ্ছে তাকে এ ধরনের কর্মকা- থেকে নিবৃত্ত করার জন্য বন্ড বা মুচলেকা নেয়া হয়। এ ধরনের মামলা সাধারণত করা হয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। মামলার আরজিতে মূল অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম, ঠিকানাসহ, কেন এবং কী কারণে আপনাকে হুমকি দিচ্ছে বা শান্তি বিনষ্ট করছে তা অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। ১০৭ ধারা একটি জামিনযোগ্য ধারা। এ ধারা মামলা করা হয় মূলত দায়ী বা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মুচলেকা সম্পাদানের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির জীবনের নিরাপত্তা প্রদান করা। হাফিজুর রহমান রিয়েল সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি মিডিয়া উইং)
×