ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হোসেন রাহাত

মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর রেডিয়েশনের মধ্যে ব্যবহারকারীরা

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ২৭ আগস্ট ২০১৬

মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর রেডিয়েশনের মধ্যে ব্যবহারকারীরা

মোবাইলের রেডিয়েশন কিভাবে কাজ করে ॥ মৌলিক কিছু কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করার প্রয়োজনে প্রতিটি মোবাইল ফোনকেই কিছু পরিমাণে বিদ্যুতচৌম্বকীয় তেজষ্ক্রিয়তা তথা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন নির্গত হয়। মোবাইল ফোন রেডিও ওয়েভ বা বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে সিগনাল প্রেরণ করে। এই রেডিও ওয়েভ আছে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি এনার্জি, যা আসলে এক ধরনের বিদ্যুতচৌম্বকিয় তেজষ্ক্রিয়তা। রেডিয়েশন বা তেজষ্ক্রিয়তার উৎস ॥ আমরা যখন মোবাইল ফোনে কথা বলি তখন ফোনের ট্রান্সমিটারটি আমাদের মুখ থেকে নির্গত শব্দকে গ্রহণ করে সেটিকে ধারাবাহিক সাইন ওয়েভে সঙ্কেতায়িত করে। সাইন ওয়েভ হচ্ছে এক ধরনের অনির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট তরঙ্গ যেটি ফোনের এন্টেনা থেকে নির্গত হয়ে ইথারে প্রবাহিত হয়। সাইন ওয়েভকে মাপা হয় ফ্রিকোয়েন্সি দিয়ে। ফ্রিকোয়েন্সি হচ্ছে একটি তরঙ্গ কত বার উঠা নামা করে তারই হিসাব। আমাদের মুখ থেকে নিঃসৃত শব্দকে সাইন ওয়েভে রাখা হয়, তখনই ট্রান্সমিটার ঐ সিগনাল বা সঙ্কেতকে এন্টেনার কাছে প্রেরণ করে, এন্টেনা আবার এই সিগনালকে অন্য প্রান্তে পাঠিয়ে দেয়। রেডিয়েশন বা তেজষ্ক্রিয়তার কিছু কথা ॥ মোবাইল ফোনের মধ্যে যে ট্রান্সমিটার থাকে সেগুলো বেশ কম শক্তির হয়ে থাকে। সেলফোন ০.৭৫ থেকে ১ ওয়াট শক্তিতেই দিব্যি চলতে পারে। ফোনের নির্মাতাভেদে এর ভেতরে ট্রান্সমিটারের অবস্থান বিভিন্ন জায়গায় হতে পারে; তবে সাধারণত এটি ফোনের এন্টেনার খুব কাছাকাছি থাকে।সঙ্কেতায়িত সিগনালকে প্রেরণ করার দায়িত্ব যে বেতার তরঙ্গের, সে তরঙ্গ গঠিত হয় এন্টেনা থেকে নির্গত বিদ্যুতচৌম্বকীয় তেজষ্ক্রিয়তা বা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন দিয়ে। এন্টেনার কাজ হচ্ছে বেতার তরঙ্গকে শূন্যে ছড়িয়ে দেয়া। মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে এসব তরঙ্গকে গ্রহণ করা বা রিসিভ করার দায়িত্ব হচ্ছে মোবাইল ফোনের টাওয়ারে স্থাপিত একটি রিসিভারের। মোবাইল ফোনে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে মত-বিমত ॥ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ফুড এ্যান্ড ড্রাগ আডমিনিস্ট্রেশন নানাভাবে গবেষণা করার পর ঘোষণা করে ‘মোবাইল ফোন থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে এর তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।’ এর মানে এই না যে মোবাইল ফোন থেকে স্বাস্থ্য হানি বা শারীরিক ক্ষতির সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অতিমাত্রায় রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি রেডিয়েশনের কারণে মানব দেহের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এতে কোন সন্দেহ নেই। মাইক্রোওয়েভ ওভেন যেমন খাবারকে গরম করে ঠিক একইভাবে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি রেডিয়েশন মানুষের দেহকোষকে উত্তপ্ত করে। কারণ মানুষের দেহ অতিমাত্রায় উত্তাপ সহ্য করারমতো করে তৈরি হয়নি। বিশেষ করে রক্ত প্রবাহের স্বল্পতার কারণে আমাদের চোখের আশপাশের এলাকা এই উত্তাপ থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।মোবাইল ফোন আয়োনাইজিং রেডিয়েশন ও নন- আয়োনাইজিং রেডিয়েশন দুই ধরনের হতে পারে। আয়োনাইজিং রেডিয়েশনের চেয়ে নন- আয়োনাইজিং রেডিয়েশনে ক্ষতির মাত্রও অনেক কম হলেও দীর্ঘ দিন ধরে এই রেডিয়েশন ঘটলে কি হয় বলা মুশকিল। মানুষ বর্তমানে যে হারে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে তাতে স্বাস্থ্যহানি হওয়াটা স্বাভাবিক। মোবাইল রেডিয়েশনের সম্ভাব্য রোগসমূহ ॥ ক্যান্সার,ব্রেইন টিউমার, আলঝেইমার’স, পারকিনসনস , ক্লান্তি , মাথা ব্যথা। মোবাইল ফোনের সঙ্গে জড়িত যত রোগের কথা এ পর্যন্ত উঠেছে তার মধ্যে ক্যান্সার ও ব্রেইন টিউমারই প্রধান। তবে এ ব্যাপারে অনেক গবেষণা চালিয়েও গবেষকরা এ পর্যন্ত কোন স্থির সিদ্ধান্তে উপনিত হতে পারেনি। বিভিন্ন গবেষণা ॥ ডনমার্কের একদল প্রায় ২০ বছর ধরে ৪ লাখ ২০ হাজার ১৯ নাগরিকের ওপর গবেষণা চালানোর পর ২০০৬ সালে তারা ফল প্রকাশ করেÑ তাদের গবেষণায় মোবাইল ফোন ও কান্সারের কোন সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। আমরা জানি মোবাইল ফোন দেশ ও মহাদেশভিত্তিক তৈরি হয়। তার মধ্যে ধরা হয় ইউরোপ মহাদেশের জন্য যে মোবাইল ফোনগুলো তৈরি হয় তার গুণাগুণ সবচেয়ে ভাল। তাই ডেনমার্কের গবেষকদের তথ্য সকলের জন্য নির্ভরযোগ্য নয়। ২০০৫ সালের সুইডিশ গবেষকদের একটি গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, মোবাইল ফোন ব্যবহারে মস্তিষ্কের টিউমার হতে পারে এমন কোন তথ্য প্রমাণ পায়নি গবেষকরা। তবে দশ বছরের বেশি সময় ব্যবহার করলে কোন মস্তিষ্কের টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা সে ব্যাপারে সন্দিহান তারা। সুইডেনের ক্যারিলিওনস্কা ইন্সিটিউটের গবেষকরা মোবাইল ফোনের সঙ্গে ব্রেইন টিউমারের সম্পর্ক আছে কিনা তা নিয়ে গবেষণা চালান। গবেষণা শেষে তারা মন্তব্য করেনÑ দশ বছর বা তার বেশি রীতিমতো মোবাইল ব্যবহার করলে অপড়ঁংঃরপ ঘবঁৎড়সধ নামক ব্রেইন টিউমারের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। তবে ১০ বছরের কম সময় মোবাইল ব্যবহারকারীদের মধ্যে এই টিউমার হওয়ার কোন লক্ষণ দেখা যায়নি। ২০০৭ সালে উৎ. খবহধৎঃ ঐধৎফবষ নামক এক সুইডিশ গবেষক তার গবেষণা রিপোর্টে বলেনÑ অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারকারীদের মধ্যে ক্ষতিকর তথা গধষরমহধহঃ ঞঁসড়ৎ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এ ছাড়াও মানুষ মাথার যে পাশে ফোন ধরে কথা বলে সেপাশে টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে বলে জানান উৎ. ঐধৎফবষ শুধু তাই নয় টানা ১০ বছর ধরে প্রতিদিন এক ঘণ্টার বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে টিউমারের আশঙ্কা অনেক বেডয়ে যায় বলে অভিমত দেন তিনি। এখনও বিভিন্ন দেশে এই নিয়ে গবেষণা চলছে। যেভাবে নিরাপদ থাকতে হবে ॥ মোবাইল একটি খুব প্রয়োজনীয় ডিভাইস তাই এটা ব্যবহার করতেই হবে। তাই নিরাপদ থাকার জন্য কিছু নিয়ম মানতে হবে। অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি এবং সুইডেন ইত্যাদি দেশের তেজষ্ক্রিয়তা সংক্রান্ত জাতীয় উপদেষ্টা কর্তৃপক্ষ মোবাইল ফোনের রেডিয়েশন থেকে নিরাপদ থাকার জন্য তাদের নাগরিকদের কিছু পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে রয়েছেÑ হ্যান্ডস-ফি মোবাইল ব্যবহার করতে হবে। মোবাইল ফোনকে যতটা সম্ভব শরীর থেকে দূরে রাখতে হবে। এক্সটারনাল এন্টেনা ছাড়া গাড়িতে মোবাইল ব্যবহার করা উচিত নয়। ঘুমানোর সময় মোবাইল মাথা থেকে দূরে রাখতে হবে। এক টানা দীর্ঘ সময় মোবাইলে কথা বলা উচিত নয়। বিল্ডিংয়ের ভেতরে যথা সম্ভব ফোনে কোন কথা বলা। যতটুকু সম্ভব বাইরে বসে ফোনে কথা বলা ভাল। মোবাইল যতটা সম্ভব শিশুদের থেকে দূরে রাখা ভাল।
×