ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাসুকুর রহমান

রাজুর বন্ধু

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ২৭ আগস্ট ২০১৬

রাজুর বন্ধু

বুঝেছ রাজুর মা, এলাকায় আজকাল চুরি খুব বেড়ে গিয়েছে। খাবার টেবিলে বসে বললেন আমিনুল সাহেব। ‘আমিও তাই শুনলাম। সেদিন নাকি আমিনাদের বাসায়ও চোর এসেছিলÑ ‘বললেন রাজুর মা। এতক্ষণ বাবা-মা এর কথা শুনছিল রাজু। চুরির ঘটনা সেও জানে। আমিনা আপুর ছোট ভাই হাবিব তার সঙ্গেই পড়ে। সে-ই রাজুকে সব বলেছে। ‘এবার মনে হচ্ছে বাড়িতে একটা দারোয়ান রাখতেই হবে। ‘অন্যমনস্ক হয়ে বললেন আমিনুল সাহেব।’ রাজুর খাওয়া শেষ। সে উঠে গেল। রাজুর মা বললেন, ‘শুনছো, সামনে তো ছেলের জন্মদিন। ওর তো আবার পশু-পাখির খুব শখ। তোমার মনে আছে ওকে একবার একজোড়া কবুতর কিনে দিয়েছিলাম? সেগুলো উড়ে যাওয়ায় ওর সে কি কান্না! তো এবার ওর জন্মদিনে ও একটা কুকুর চেয়েছে। বাড়িতে একটা কুকুর থাকলে দারোয়ানও লাগবে না। দারোয়ানের চেয়ে কুকুরের খরচও কম হবে আবার ছেলেও খুশি হবে। ‘কথাটা খারাপ বলোনি। তাছাড়া আজকাল বিশ্বস্ত দারোয়ান পাওয়াও কঠিন। আমি ভেবে দেখব। ‘রাজুর বাবা চেয়ার থেকে উঠে ঘরের দিকে চলে গেলেন। রাতের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন ছেলেকে কুকুর উপহার দেবেন। কিন্তু আগেই কাউকে জানালেন না। তিনদিন পরে এল সেই মহেন্দ্রক্ষণ। রাজুর জন্মদিন। তবুও আমিনুল সাহেব অফিস থেকে ছুটি পেলেন না। এই নিয়ে রাজুর কিছুটা মন খারাপ। সন্ধ্যায় আসার সময় আমিনুল সাহেব নিয়ে আসলেন সেই সারপ্রাইজ গিফট্। কালো রঙের একটি হাউন্ড। রাজু আর তার মা দুজনেই অবাক! তবে রাজু ঠিক ততটাই খুশি। মা বললেন, ‘ওর তো একটা নাম রাখতে হবে। ‘রাজু বলল, ‘আজ থেকে ওর নাম লাল্টু।’ শুরু হলো রাজু আর লাল্টুর বন্ধুত্ব। লাল্টুকে খেতে দেয়, বাগানে ওর সঙ্গে খেলে, আবার মাঝেমাঝে পাশের পার্কেও নিয়ে যায়। এভাবেই কাটতে থাকল রাজুর দিন। হঠাৎ একদিন, স্কুল থেকে ফিরে রাজু লাল্টুকে তার ঘরে দেখতে পেল না। ড্রইংরুম, বাগান কোথাও লাল্টু নেই। রাজুর যখন প্রায় কাঁদো কাঁদো অবস্থা তখন আমিনুল সাহেব লাল্টুকে পার্কে আবিষ্কার করলেন। রাজু যেন আবার নিজের জীবন ফিরে পেল। কিছুদিন পওে এক রাতে রাজুরদের বাসায় চোর এল। স্বভাবতই লাল্টু টের পেয়ে গেল। তার চিৎকারে বাড়ির সবাইও তা জেনে গেল। আমিনুল সাহেব বাড়ির সব লাইট জ্বালাতে গিয়ে চোরকে দেখে ফেললেন। চোরের তখন ‘ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা। সে জানালা দিয়ে বের হয়ে দিল দৌঁড়। চোরের পিছু পিছু ছুটল লাল্টুও। সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। ওদিকে প্রধান সড়কে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হলো লাল্টু । গাড়ির মালিক তাকে চাপা দেবার পর একবার ফিরেও তাকায়নি। সবাই বসে রইল লাল্টুর ফিরে আসার অপেক্ষায়। কিন্তু সে আর ফিরল না। পাড়ি জমালো না ফেরার দেশে। মোহাম্মদপুর মডেল হাই স্কুল এ্যান্ড কলেজ ৯ম শ্রেণী, বিজ্ঞান বিভাগ
×