ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শৈশবে বঙ্গবন্ধু

ছিলেন ফুটবল টিমের ক্যাপ্টেন

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ২৭ আগস্ট ২০১৬

ছিলেন ফুটবল  টিমের ক্যাপ্টেন

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ, বাংলা ১৩২৬ সনের ৩ চৈত্র মঙ্গলবার, গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে। তাঁর বাবার নাম শেখ লুৎফর রহমান ও মা সাহেরা খাতুন। ছোট বেলায় শেখ মুজিবকে তাঁর পরিবারের লোকজন খোকা বলে ডাকত। সহপাঠীরা ডাকত মুজিব বলে। শেখ লুৎফর রহমান সরকারী চাকরি করতেন। টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশবের সোনালী দিনের অনেকটা সময় কেটেছে মাদারীপুরে। শেখ মুজিবের নানা স্মৃতি বিজড়িত মাদারীপুরের জনপদ। ১৯৩৪ থেকে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত তিনি মাদারীপুর ইসলামিয়া হাইস্কুলের ৪র্থ থেকে ৭ম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। এর মধ্যে একবার মাদারীপুর হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। প্রথম জীবনে তৎকালীন সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারগুলোর মতো তিনিও আট বছর বয়স পর্যন্ত নিজ বাড়িতে পারিবারিক পরিবেশে লেখাপড়া করেছেন। পরে ১৯২৯ সালে শেখ মুজিবকে গোপালগঞ্জ ‘মথুরানাথ একাডেমি’তে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি করা হয়। অসুস্থতার কারণে বারবার তাঁর লেখাপড়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ১৯৩৪ সালে শেখ লুৎফর রহমান গোপালগঞ্জ মহকুমা দেওয়ানী আদালত থেকে বদলি হয়ে মাদারীপুর মহকুমা মুন্সেফ কোর্টে যোগদান করেন। তিনি ছিলেন মুন্সেফ কোর্টের সেরেস্তাদার। শেখ লুৎফর রহমান ছেলের ভবিষ্যত চিন্তা করে শেখ মুজিবকে মাদারীপুর এনে ইসলামিয়া হাইস্কুলে ৪র্থ শ্রেণীতে ভর্তি করেন। মাদারীপুরে লেখাপড়া করার সময় তিনি মাঝে মধ্যেই অসুস্থ থাকতেন। এ জন্য তাঁর লেখাপড়ায়ও বিঘœ ঘটেছে। তাঁর অসুস্থতার কারণে শেখ লুৎফর রহমান স্ত্রী সাহেরা খাতুনকে মাদারীপুরে নিয়ে আসেন এবং আদি শহর বর্তমান রাস্তি ইউনিয়নের লক্ষ্মীগঞ্জে সপরিবারে বসবাস করতেন। ১৯৩৭-৩৮ সালের দিকে আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙ্গনে মূল শহর বিলীন হয়ে যায়। ইসলামিয়া হাইস্কুলে লেখাপড়া করার সময় শিশু মুজিব বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হন। অসুস্থতার জন্য তাঁর লেখাপড়া বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকে। ১৯৩৬ সালে তিনি মাদারীপুর হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। এ সময় তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তাঁর চোখে গ্লুকোমা রোগ ধরা পড়ে। ডাক্তারের পরামর্শে শেখ লুৎফর রহমান চিকিৎসার জন্য তাঁকে কলকাতা নিয়ে যান। চিকিৎসা শেষে তিনি ফের মাদারীপুর আসেন। মাদারীপুরে তখন স্বদেশী আন্দোলনের জোয়ার বইছে। কলকাতা থেকে ফিরে চোখের কারণে তাকে এক বছর বিশ্রাম নিতে হয়। যে কারণে সপ্তম শ্রেণীতে ১৯৩৭ সালে তিনি লেখাপড়া করতে পারেননি। এ সময়টা তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকা-ে ও সভা-সমাবেশে যোগদান করে তাদের নজরে আসেন। ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত তিনি মাদারীপুর- গোপালগঞ্জ যাতায়াত করতেন। শেখ লুৎফর রহমান মাদারীপুর থেকে বদলি হয়ে গোপালগঞ্জ চলে যান। ১৯৩৮ সালে কিশোর মুজিবকে গোপালগঞ্জ মিশনারী স্কুলে ৮ম শ্রেণীতে ভর্তি করেন। মাদারীপুরে লেখাপড়া করার সময় বঙ্গবন্ধু ফুটবল খেলায় পারদর্শী ছিলেন। ১৯৩৬ সালে বঙ্গবন্ধুর চোখে গ্লুকোমা রোগ ধরা পড়ার আগে তিনি স্কুলে ছাত্রদের নিয়ে ফুটবল টিম গঠন করেন। ফুটবল টিমের ক্যাপ্টেন ছিলেন তিনি। মৌসুমে ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে অর্জন করেন বহু শিল্ড, কাপ ও মেডেল। খেলাধুলার নেতৃত্ব দেয়ার জন্য কিশোর মুজিবের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। স্কুলে লেখাপড়া করার সময় অন্যায় ও অনিয়মের প্রতিবাদ করে তিনি ছোটবেলা থেকেই সাহসী হয়ে ওঠেন। পরিদর্শকরা স্কুল পরিদর্শনে এসে তাঁর বাচনভঙ্গি প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ও সাহস দেখে অবাক হয়ে যেতেন। বঙ্গবন্ধু মাদারীপুর থাকাকালীন পাঁচখোলা গ্রামের গগণ বেপারীর কাছে সাঁতার শিখেছেন। সেই গগণ বেপারী বেঁচে নেইÑ বেঁচে নেই তাঁর ফুটবল দলের কোন খেলোয়াড়। ১৯৫০ সালে মাদারীপুর হাইস্কুল ও মাদারীপুর ইসলামিয়া হাইস্কুল একীভূত করে ইউনাইটেড ইসলামিয়া হাইস্কুল নামকরণ হয়। ১৯৫৪ সালে বঙ্গবন্ধু মন্ত্রী হয়ে যখন মাদারীপুরে আসেন, তখন তাঁর সাঁতার গুরু সেই গগণ বেপারীকে চিনতে পেরে বুকে জড়িয়ে ধরেন। Ñসুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর থেকে
×