ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সার কারখানায় বিস্ফোরণ

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ২৭ আগস্ট ২০১৬

সার কারখানায় বিস্ফোরণ

সোমবার রাতে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ডাই-এ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সার কারখানার তরল এ্যামোনিয়া গ্যাসের একটি ট্যাঙ্ক বিস্ফোরণের পর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে সেখানকার প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর। গাছপালা, লতা-গুল্ম, জলজ ও ডাঙ্গার প্রাণিকুলের করুণ চিত্র মানুষকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। সবুজ গাছ-গাছালি এ্যামোনিয়ার প্রভাবে ইতোমধ্যে বিবর্ণ হয়ে গেছে। পুকুর-নালায় হাজার হাজার মৃত মাছ ভেসে উঠেছে। প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে মাছ চাষীরা বিপুল ক্ষতির শিকার হয়েছেন এটা অস্বীকার করা যাবে না। কারখানার আশপাশের এলাকার মৌসুমী শাক-সবজি প্রায়ই নষ্ট হয়ে গেছে। ট্যাঙ্ক বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে দুটি তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। বুধবার শিল্পমন্ত্রী দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আমরা আশা করছি বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ জানা যাবে। ২০০৬ সালে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় কারখানাটি। এর দুটি ইউনিট রয়েছে। প্রতিটি ইউনিট ২৪ ঘণ্টায় ৮০০ মেট্রিক টন করে সার উৎপাদন করার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য ছিল। কিন্তু প্রথম থেকেই ওই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। সম্প্রতি দুটি ইউনিট ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০০ টন উৎপাদন করে আসছিল। গ্যাসের অভাবসহ যান্ত্রিক বিভিন্ন গোলযোগের কারণেই লক্ষ্যমাত্রার অনেক নিচে সার উৎপাদন হচ্ছিল। এর পরও এই দুই ইউনিট থেকে উৎপাদিত ডিএপি দেশের চাহিদা মিটিয়ে আসছিল। যে কারণে বিদেশ থেকে ডিএপি আমদানি করার প্রয়োজন হতো না। এত বড় গ্যাস দুর্ঘটনা বাংলাদেশে প্রথম; কয়েক বছর আগে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে দুটি কারখানায় এ্যামোনিয়া ট্যাঙ্কারে বিস্ফোরণ ঘটলেও বড়জোর ৪০ থেকে ৫০ লিটার গ্যাস ছড়িয়ে পড়েছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাতাসে এ্যামোনিয়া গ্যাস থাকলে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে ঢুকে পড়ে। পরিমাণে কম হলে জীবনের ঝুঁকি যদিও থাকে না, তবে শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে পারে। লক্ষণীয় যে, কারখানাটির অবস্থান কর্ণফুলী নদীতীরের যে অঞ্চলে তার উভয় পাশে ঘনবসতি ও গুরুত্বপূর্ণ বহু স্থাপনা রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ত্বরিত পদক্ষেপ, সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা ও জনসচেতনতার ফলে ডিএপি কারখানার গ্যাস দূষণ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটাতে পারেনি। তবে এটি দেশের সব কেমিক্যাল কারখানার জন্য সতর্ক সঙ্কেত। বিপদ এড়াতে দীর্ঘমেয়াদী সতর্কতার কোন বিকল্প নেই। আমাদের শিল্পখাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা আধুনিক তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সঙ্গত কারণেই অনেক শিল্প-প্রতিষ্ঠান কাঁচামাল হিসেবে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে থাকে। তাই কারখানার সুরক্ষা এবং উদ্ভূত বিপজ্জনক পরিস্থিতি মোকাবেলার সার্বিক সক্ষমতা অবশ্যই থাকতে হবে। কিছু ঘটলে কারখানার ভেতরে ও বাইরে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বরাবরই থেকে যায়। দুঃখজনক হলেও সত্য, নিরাপত্তার ব্যাপারে সর্বক্ষণিক সচেতনতার উদাহরণ খুব বেশি একটা দেখা যায় না। ট্যাঙ্ক বিস্ফোরণকে নিছক ‘দুর্ঘটনা’ বলে চালিয়ে দিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা মোটেই নীতিসম্মত হবে না। বরং ভবিষ্যতে এ জাতীয় ক্ষতির আশঙ্কা রোধের জন্য সমীচীন হবে যান্ত্রিক অনুষঙ্গের নিয়মিত তদারকি এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ। এক্ষেত্রে কোন ধরনের গাফিলতি কাম্য নয়। ডিএপি সার কারখানার ঘটনায় ক্ষতির দায় কার সেটি শনাক্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হোক।
×