ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

৭৭ কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে ডিএসসিসি

রাজধানীর ১৯ পার্ক সাজানো হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ২৭ আগস্ট ২০১৬

রাজধানীর ১৯ পার্ক সাজানো হচ্ছে

মশিউর রহমান খান ॥ নতুন করে ১৯টি পার্ককে সাজিয়ে নাগরিকদের ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তুলবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। নাগরিকদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে সংস্থাটির আওতাধীন সীমানায় অবস্থিত এসব পার্ককে পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তোলার চিন্তা করা হচ্ছে। প্রতিটি পার্কে থাকবে খাবার পানির ব্যবস্থা। শরীরচর্চা বা হাঁটাচলা শেষে বিশ্রামের পর হালকা খাবারের জন্য পার্কের ভেতরে বা নির্দিষ্ট স্থানে ক্ষুদ্র আকৃতির দোকান বসানোর অনুমতি দেয়ারও চিন্তা করছে সংস্থাটি। এছাড়া এসব পার্কে সন্ধ্যার পর যাতায়াতকারীদের নির্বিঘেœ চলাচলের জন্য পার্কের ভেতর বিদ্যুতের আলোর ব্যবস্থা করা হবে। পার্কে প্রবেশ ও বাহিরের জন্য নির্দিষ্ট সময় দেয়া থাকবে। নিরাপত্তার স্বার্থে ও সুরক্ষার কথা ভেবে রাত ৯টার পর কেউ এসব পার্ক ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। সবসময় সংরক্ষিত রাখার জন্য সার্বক্ষণিক গেট লাগানো থাকবে। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় এসব পার্কের রক্ষণাবেক্ষণ করার চিন্তা করছে সংস্থাটি। পার্ক ব্যবহারকারীদের স্বার্থে প্রতিটি পার্কের কয়েকটি স্থানে পার্কের নাম উল্লেখসহ পার্কে প্রবেশ ও বাহিরের সময়সহ পার্ক ব্যবহারের নিয়মাবলী লাগানো থাকবে। সরকার ও সংস্থাটির যৌথ অর্থায়নে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে একটি প্রকল্পও হাতে নিয়েছে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের ৩০ ভাগ অর্থ ব্যয় করবে ডিএসসিসি আর ৭০ ভাগ অর্থ দেবে সরকার। দীর্ঘদিন ধরে অযতেœ অবহেলায় পরে থাকা ১৯টি পার্ক প্রথমবারের মতো সংস্কারের মাধ্যমে ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে। দুই বছর মেয়াদী এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৭৭ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গড়ে প্রতিটি পার্ক নতুন করে সাজাতে ব্যয় হবে প্রায় ৪ কোটি টাকা। তবে পার্কের আয়তন বুঝে কমবেশি ব্যয় করা হবে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় পুরান ঢাকায় বসবাসরত নাগরিকদের শিশু সন্তানদের কথা চিন্তা করে ধুপখোলা মাঠের একটি অংশের বর্তমান মাঠটির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জমিতে একটি আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন শিশুপার্ক তৈরি করা হবে। পার্কগুলো সাজানোর জন্য নেয়া প্রকল্পের অতি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ নাগরিক সেবাদানকারী এ সংস্থাটি। ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের মধ্যেই প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগ করা হবে। প্রাথমিকভাবে ব্যয় কম ধরা হলেও নক্সা প্রণয়নের পর তা আরও বাড়বে বলে জানা গেছে। যে ১৯টি পার্ক সংস্কার ও সুসজ্জিতকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছেÑ কাওরানবাজারের সার্ক ফোয়ারা সংলগ্ন পান্থকুঞ্জ পার্ক, ফিনিক্স রোডে অবস্থিত ডিএসসিসির সবচেয়ে বড় পার্ক ওসমানী উদ্যান, যাত্রাবাড়ীর চৌরাস্তা পার্ক, ধুপখোলা ৪৫নং ওয়ার্ডের শরাফতগঞ্জ কমিউনিটি সেন্টারসংলগ্ন পার্ক, ওয়াটার ওয়ার্কস রোডের বশির উদ্দিন পার্ক, আউটফল স্টাফ কোয়ার্টার শিশুপার্ক, মতিঝিল পার্ক, ধানম-ি ৩নং গেট, হাজারীবাগের গজমহল পার্ক, বকশীবাজার পার্ক ও রসুলবাগ শিশুপার্ক, ডিআইটি এ্যাভিনিউয়ের গুলিস্তান পার্ক, জিন্দাবাজারের সিরাজউদ্দৌলা পার্ক, জগন্নাথ শাহ রোড পার্ক, হাজারীবাগ পার্ক, নবাবগঞ্জ পার্ক, মাজেদ সরদার রোডের সিক্কাটুলি পার্ক, ইংলিশ রোডের মালিটোলা পার্ক, বংশাল পুরাতন চৌরাস্তার ত্রিকোণাকৃতি পার্ক। ডিএসসিসি সূত্র জানায়, কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পার্কগুলোর কৃত্রিম লেক, পুকুর, সিøপার ও দোলনা সংস্কার করা হবে। খেলার মাঠ থেকে বর্তমানে যত্রতত্র জমানো ময়লা-আবর্জনা সরানো হবে। নতুন করে বেশকিছু পশুপাখির মূর্তি বসানো হবে এবং দর্শনার্থীদের বসার জায়গা তৈরি করা হবে। পার্কের চারপাশের সীমানা প্রাচীর বর্তমানের তুলনায় আরও মজবুত করা হবে। এছাড়া বিশুদ্ধ খাবার পানি ও বিদ্যুতের সুব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হবে। পার্কের ভেতরে অবস্থিত বর্তমানের সকল পুরনো স্থায়ী স্থাপনার সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য নতুন করে রং করা হবে। প্রয়োজনে আরও বসার বেঞ্চ তৈরি করা হবে। মূলত অযতœ ও অবহেলায় ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে আর নেশাখোর, ছিঁচকে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে রাজধানীর এসব পার্ক। বাংলামটরসংলগ্ন পান্থকুঞ্জ পার্কে শিশু-কিশোরদের বিনোদনের কোন উপকরণই নেই। পার্কের ভেতরের জমিতেই ডিএসসিসি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন নির্মাণ করতে উদ্যোগ নেয়। কিন্তু স্থানীয় লোকজনের বাধার মুখে এটি বাস্তবায়ন করতে পিছু হঠে ডিএসসিসি। এ পার্কে কয়েকটি দোলনা রয়েছে কিন্তু এসব দোলনা ব্যবহার উপযোগী নয়। এছাড়া পার্কটির সীমানা প্রাচীরও অনেক স্থানে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। মতিঝিল পার্কটি প্রায় ৩৫ শতাংশ জমিতে অবস্থিত। মতিঝিল বিআরটিসি ভবনের বিপরীতে অবস্থিত এ পার্কটি বর্তমানে ব্যবহার অনুপযোগী। পার্কের সীমানা গ্রিল ভেঙ্গে একাধিক প্রবেশপথ করা হয়েছে। পার্কের ভেতরে ১০ থেকে ১২টি দোকান বসানো হয়েছে। এছাড়া মাঠজুড়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘লেডি বাগান’ হিসেবে পরিচিত। বংশালের পুরাতন চৌরাস্তা এলাকায় মাত্র ২ শতাংশ জায়গাজুড়ে বিস্তৃত বংশাল ত্রিকোণাকৃতি পার্ক। এ পার্কের চারদিকে অবৈধভাবে বসানো হয়েছে চা, পান, ফল ও সিগারেটের দোকান। এ পার্কটির সামনে একটি ডাস্টবিন সবসময়ই পড়ে থাকে। দুর্গন্ধের কারণে এ পার্কটিতে স্থানীয় কেউ এসে বসতে চান না। বকশীবাজার নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশে যে পার্কটি রয়েছে সেটির আয়তন প্রায় ২৭ শতাংশ। পার্কটি এখন স্থানীয় ভ্যানচালকদের দখলে রয়েছে। রাজধানীর পুলিশ হেডকোয়ার্টার ও ডিএসসিসির প্রধান কার্যালয় সংলগ্ন ২৩ একরেরও বেশি জায়গাজুড়ে অবস্থিত ওসমানী উদ্যান এখন অপরাধীদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বাউন্ডারি দিয়ে পার্কটি ঘেরা থাকলেও খোদ নগর ভবনের সামনেই গ্রিল ভেঙ্গে অবৈধভাবে পার্কের ভেতরে-বাইরে অসংখ্য দোকানপাট বসানো হয়েছে। সন্ধ্যার পর পার্ক দিয়ে নিরাপদে চলাচল করাও দুষ্কর। তবে ডিএসসিসি সূত্র জানায়, তারা এ উদ্যানটির স্বাভাবিক স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ ঠিক রেখে আধুনিকায়ন করবে। এ উদ্যানটিকে প্রকল্পে অতিগুরুত্ব দিয়েছে ডিএসসিসি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল জনকণ্ঠকে বলেন, রাজধানীতে বসবাসকারীদের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে ডিএসসিসির অন্তর্গত ১৯টি পার্ককে নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ধুপখোলা মাঠের একাংশে পুরান ঢাকার নাগরিকদের শিশু সন্তানদের কথা ভেবে আধুনিক একটি শিশুপার্ক তৈরির পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৭৭ কোটি টাকা। এটি একটি মেগা প্রকল্প, যার আওতায় আমরা এসব পার্ক নতুন করে সাজাব। পার্কের ভেতরে নাগরিকদের সুবিধার্থে বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা থাকবে। পার্কে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় থাকবে। রাতে কেউ এসব পার্কে অবস্থান করতে পারবেন না। সন্ধ্যার পর হাঁটাচলার জন্য বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হবে। স্থানীয় নাগরিকদের তত্ত্বাবধানে এসব পার্ককে পরিচালনা করা হবে। প্রকল্পটির ৭০ ভাগ অর্থ সরকার দেবে আর বাকি ৩০ ভাগ অর্থ দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ব্যয় করা হবে। প্রকল্পটি অতি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সকল প্রকার প্রস্তুতি শুরু করা হয়েছে। আশা করি অতি দ্রুত পরামর্শক নিয়োগের মাধ্যমে নক্সা প্রণয়নের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে। শরীরচর্চা বা হাঁটাচলা শেষে বিশ্রামের পর হালকা খাবারের জন্য প্রয়োজনে পার্কের ভেতরে বা নির্দিষ্ট স্থানে ক্ষুদ্র আকৃতির দোকান বসানোর অনুমতি দেয়া হবে। মূলত পার্কগুলোকে চলার উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে।
×