ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শর্ট ফিল্ম ফোরামের ৩০ বছর পূর্তি উৎসব

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ২৭ আগস্ট ২০১৬

শর্ট ফিল্ম ফোরামের ৩০ বছর পূর্তি উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রতিষ্ঠার তিন দশক পূর্ণ করল স্বাধীন ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জাতীয় সংগঠন ‘বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরাম’। ৩০ বছর পদার্পণ উপলক্ষে বছরব্যাপী কর্মসূচী হাতে নিয়েছে ফোরাম কর্তৃপক্ষ। এ কর্মসূচীর অংশ হিসেবে শুক্রবার সকালে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে ‘মুক্ত চলচ্চিত্র, মুক্ত প্রকাশক’ স্লোগানে বিকল্প চলচ্চিত্রের ৩ দশক শীর্ষক দুই দিনের অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করা হয়। স্মৃতিচারণ, আলোচনা ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী দিয়ে সাজানো হয়েছে আয়োজন। একঝাঁক বেলুন উড়িয়ে দুই দিনব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন করেন বিকল্পধারার চলচ্চিত্রের অগ্রজ নির্মাতারা। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে স্মৃতিচারণ পর্বে অংশ নেন নির্মাতারা। এ পর্বে চলচ্চিত্রকার তানভীর মোকাম্মেল বলেন, নতুন যুগ, নতুন প্রযুক্তিÑ নতুন সব কিছু। এ সময়ে এসেও বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরাম তাদের প্রতিবাদী অবস্থান ধরে রেখেছে। এ ফোরাম শুধু চলচ্চিত্র নির্মাণ বা উৎসবের প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি একই সঙ্গে বাঙালীর একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলনও বটে। মুক্ত চলচ্চিত্র মানেই মুক্ত প্রকাশ। বিকল্পধারার চলচ্চিত্র উৎসবের নামে ‘হঠাৎ নেতা বনে যাওয়া’ কতিপয় নির্মাতার উদ্দেশে তিনি বলেন, উৎসব আয়োজনের নামে আমরা যেন কোনভাবেই কর্পোরেট পুঁজির দাস না হয়ে পড়ি, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের মধ্যেই কাউকে কাউকে দেখি পাঞ্জাবি-পাজামা পরে মন্ত্রণালয়ে ঘোরাফেরা করেন এবং উৎসব আয়োজনকে ইস্যু করে নেতা বনে যেতে চান। চলচ্চিত্র সংগঠনকে পরে রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলেন। এদের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া জরুরী। চলচ্চিত্রকার-শিক্ষক ও শর্ট ফিল্ম ফোরামের সভাপতি জাকির হোসেন রাজু বলেন, ফোরামের মাধ্যমে আমরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের আন্দোলনটি দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দিয়েছি। অসম্ভব কঠিন জেনেও পুঁজি আর প্রতিষ্ঠানের বাইরে গিয়ে নিজের মতো করে আমরা চলচ্চিত্র নির্মাণ করছি। আলোচনা পর্বে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্রকার ও শিক্ষক মানজারে হাসীন মুরাদ, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী মোরশেদুল ইসলাম ও জাহিদুর রহিম অঞ্জন, নির্মাতা দেওয়ান শামসুর রাকিবসহ চলচ্চিত্র আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্বরা। আলোচনা পর্বে বক্তারা অভিযোগ করেন, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে অবাস্তবতা ও স্থূল রুচি এতটাই প্রাধান্য পেয়েছে যে, শিল্পমাধ্যম চলচ্চিত্রের সামাজিক-নান্দনিক ভূমিকা নিয়ে দর্শকমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। মানজারে হাসীন মুরাদ বলেন, দেশীয় চলচ্চিত্রের দুরাবস্থায় শক্তিশালী ও শিল্পসম্মত চলচ্চিত্র উপহারের অঙ্গীকার নিয়ে তখন আবির্ভূত হয় শর্ট ফিল্ম ফোরাম। সে সময়ে বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী আন্দোলনও গড়ে তুলেছিল তারা। মোরশেদুল ইসলাম বলেন, আজকে যারা বিকল্পধারার চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন, তাদের অনেকেই কিন্তু শর্ট ফিল্ম ফোরামের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তবে তারা কিন্তু কোন না কোনভাবে এ আন্দোলনটি দ্বারা প্রভাবিত। আলোচনা পর্বে বক্তারা জানান, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ও আদর্শ হচ্ছে সৎ-সুস্থ ও প্রগতিশীল চলচ্চিত্র ধারাকে সমুন্নত রেখে কুরুচিপূর্ণ বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ করা। মূলধারার বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে বিরক্ত দর্শককে শিল্পবোধসম্পন্ন চলচ্চিত্রের স্বাদ এনে দিতে ১৯৮৬ সালে বিকল্পধারার চলচ্চিত্র নির্মাতারা গঠন করেন বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরাম। চলতি বিশ্বের সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক নানামুখী সমস্যা, সমাধানের অন্তরায়, আর উদ্যমী তারুণ্যর গল্প উঠে এসেছে ফোরামের সদস্য তথা বিকল্পধারার নির্মাতাদের স্বল্পদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্রে। অনুষ্ঠানের তৃতীয় পর্বে শুক্রবার বিকেলে ‘স্বাধীন ধারার চলচ্চিত্রের তিন দশক : সাফল্য, ব্যর্থতা’ শিরোনামে একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবের দ্বিতীয় দিন আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় আশির দশকে নির্মিত চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে জাতীয় চিত্রশালার সেমিনার হলে। বেলা ৩টায় দেখানো হবে নব্বই দশকে নির্মিত নির্বাচিত চলচ্চিত্র। বিকেল সাড়ে ৫টায় প্রদর্শিত সাম্প্রতিক সময়ের নির্বাচিত চলচ্চিত্র।
×