ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফারাক্কা খুলে দেওয়ায় বাড়ছে পদ্মার পানি

প্রকাশিত: ২৩:৪০, ২৬ আগস্ট ২০১৬

ফারাক্কা খুলে দেওয়ায় বাড়ছে পদ্মার পানি

অনলাইন ডেস্ক ॥ বিহারের বন্যার কারণে ভারত ফারাক্কা বাঁধের সবগুলো গেইট খুলে দেওয়ায় বিপদজনক গতিতে পানি বাড়ছে বাংলাদেশের পদ্মায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, এই গতিতে পানির উচ্চতা বাড়তে থাকলে পদ্মার বিভিন্ন পয়েন্টে ২৪ থেকে ২৮ ঘণ্টার মধ্যে তা বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মীর মোশাররফ হোসেন জানান, গঙ্গার পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে ভারত ফারাক্কা বাঁধের ১০৬টি গেইটের সবগুলোই খুলে দিয়েছে। এ কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে রাজশাহী পয়েন্টে পদ্মার পানির উচ্চতা প্রতিদিন প্রায় ১২ থেকে ১৩ সেন্টিমিটার করে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান তিনি। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে এটাও জানা গেছে, যে দ্রুত গতিতে পানি বাড়ছে তাতে শনিবার রাতেই পানি বিপদসীমা স্পর্শ করতে পারে। হঠাৎ করেই পানি বাড়তে থাকায় নগরীর মানুষের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। শুক্রবার নগরীর কুমারপাড়া, বড়কুঠি, পুলিশ লাইন্স ও জিয়ানগর এলাকায় দেখা গেছে, পদ্মার পানি প্রবল বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। মধ্যচরের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। সামান্য কিছু কাঁশবনের মাথা উচু করে জানান দিচ্ছে এখানে এক সপ্তাহ আগেও মধ্যচর বলে কিছু ভূমি ছিল। গত শুস্ক মৌসুমে মধ্যচরে যেসব বাড়ি করে দেয়া হয়েছিলো সেগুলোর চালা ছাড়া সবই ডুবে গেছে পানিতে। শহররক্ষা বাঁধের প্রায় সমান উচ্চতা নিয়েই পানি বয়ে যাচ্ছে। এতে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে শহরের বুলনপুর পুলিশ লাইন্স, সোনাইকান্দি, বেড়পাড়া, নবগঙ্গা এলাকা। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার থেকে পদ্মার পানি বাড়তে থাকে। গত সোমবার পানির উচ্চতা ছিলো ১৭ দশমিক ৭৬ মিটার। এর পরদিন গত মঙ্গলবার ১৭ দশমিক ৯৪ মিটার, বুধবার ১৮ দশমিক ১০ মিটার, বৃহস্পতিবার পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয় ১৮ দশমিক ১৭ মিটার। শুক্রবার আরো ৯ সেন্টিমিটার বেড়ে পানির উচ্চতা হয় ১৮ দশমিক ২৬ মিটার। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়েবসাইট ফ্লাড ফোরকাস্টিং অ্যান্ড ওয়ারনিং সেন্টার (এফএফডব্লুইসি) পূর্বাভাস বলছে, শনিবার সকাল ৬ টায় পানির উচ্চতা থাকবে ১৮ দশমিক ৩৭ মিটার, রবিবার ১৮ দশমিক ৪৬ এবং সোমবার বিপদসীমা ছাড়িয়ে পানি প্রবাহিত হবে ১৮ দশমিক ৫৪ মিটারের উপর দিয়ে। তবে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি বিজ্ঞান প্রকৌশল বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী এসএম আলী মর্ত্তুজা বলেন, ‘পানি যে গতিতে বাড়ছে তাতে মনে হচ্ছে শনিবার রাতেই বিপদসীমা স্পর্শ করবে। সেক্ষেত্রে যদি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা বাঁধে কোনো গর্ত থাকে তখন শহরে পানি প্রবেশ করতে পারে। তবে যমুনায় পানি কম থাকায় ভয়ের কিছু নেই। আশা করা হচ্ছে খুব শিগগিরই পানি কমে যাবে।’ রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্র জানিয়েছে, ভাঙ্গনের বিষয়টি নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। যেখানে ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে সেখানেই মেরামত করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বন্য পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া আছে। নদীর পাড় রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা চলছে। হিমালয় থেকে উৎপন্ন গঙ্গা নদীর প্রধান শাখা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, সেখান থেকে নদীটির নাম হয়েছে পদ্মা। ভাটির দিকে ২৫৮ কিলোমিটার এগিয়ে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দে এসে যমুনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে পদ্মা। সেই মিলিত প্রবাহ পদ্মা নামে আরও ১২০ কিলোমিটার এগিয়ে চাঁদপুরে এসে মেঘনার সঙ্গে মিলেছে। পদ্মা-মেঘনার মিলিত প্রবাহ মেঘনা নামে পৌঁছেছে বঙ্গোপসাগরে। গঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের আগে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলায় ভারতের ফারাক্কা বাঁধ; যা চার দশক ধরে নানা ধরনের পরিবেশ বিপর্যয় ডেকে আনছে বাংলাদেশের জন্য।
×