ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নির্ভয়া কাণ্ডের পর দিল্লিতে ধর্ষণ বেড়ে তিন গুণ! বলছে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২০:৫৯, ২৬ আগস্ট ২০১৬

নির্ভয়া কাণ্ডের পর দিল্লিতে ধর্ষণ বেড়ে তিন গুণ! বলছে রিপোর্ট

অনলাইন ডেস্ক ॥ দিল্লি আছে দিল্লিতেই। গত কয়েক বছরে অপরাধের নিরিখে তার অবস্থান এক চুলও পরিবর্তিত হয়নি। বিশেষ করে নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা তো লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আর এমন তথ্য খাস পুলিশেরই এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে। ২০১২-র ডিসেম্বরে দিল্লিতে নির্ভয়া-কাণ্ডের মতো ভয়ানক ঘটনা ঘটে। গোটা দুনিয়ার টনক নড়ে যায়। পুলিশের এই সমীক্ষা সেই বছরের পরিসংখ্যান নিয়েই শুরু হয়েছে। ওই ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দুনিয়াকে। অথচ তার পরেও দিল্লির পরিস্থিতি এতটুকু বদলায়নি। যার প্রমাণ এই সমীক্ষা। সেখানে দেখা যাচ্ছে, দিল্লিতে এক লাফে গত কয়েক বছরে ধর্ষণের মতো ঘটনা বেড়ে গিয়েছে প্রায় তিন গুণ! ব্যুরো অফ পুলিশ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিপিআরডি) ওই সমীক্ষা চালায়। সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসা ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, শুধু ধর্ষণই নয়, সার্বিক ভাবে মহিলাদের উপরে যে কোনও ধরনের অপরাধের সংখ্যাই আগের থেকে অনেক বেড়েছে দিল্লিতে। দিল্লি পুলিশের ওই সমীক্ষা জানাচ্ছে, ২০১২ সালে মোট ৭০৬টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল। ২০১৫ সালে যা বাড়তে বাড়তে ২১৯৯টিতে গিয়ে দাঁড়ায়। অর্থাৎ মাত্র তিন বছরে এক লাফে তিন গুণ বেড়ে গিয়েছিল ধর্ষণের মতো অপরাধ। তবে শুধু ধর্ষণই নয়, একই ভাবে বেড়েছে মহিলাদের উপরে হওয়া অন্যান্য অপরাধও। ওই সমীক্ষা বলছে, ২০১২ সালে নথিভুক্ত শ্লীলতাহানির সংখ্যা ছিল ৭২৭। ২০১৫ সালে যে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৫৩৬৭-তে। কিন্তু, এই পরিসংখ্যানের বাইরেও অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। যা পুলিশের কাছে নথিভুক্তই হয়নি। বিপিআরডি-র মতে, বিভিন্ন কারণে অভিযোগ জানাতে চাইছেন না নির্যাতিতারা। অনেকে আবার পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও দু’পা পিছিয়ে গিয়ে তা তুলে নিচ্ছেন। ওই সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১৪-য় ৮৪ জন মহিলা অভিযোগ করেও তা পরে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। আবার ২০১৫ সালে এমন ভাবেই অভিযোগ জানানোর পর তা তুলে নিয়েছেন ১০৪ জন নির্যাতিতা। ফলে, এক দিকে অভিযোগ নথিভুক্ত না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে কোনও তদন্ত করতে পারছে না পুলিশ। অন্য দিকে, কোনও রকম অভিযোগ না হওয়ায় দোষীরা একই কাজ করার সাহস পেয়ে যাচ্ছে। অপরাধের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পিছনে এটাকেও কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে ওই সমীক্ষায়। কেন অভিযোগ জানাতে চাইছেন না নির্যাতিতারা? আর জানালেও কেন তা পরে তুলে নিচ্ছেন? সমীক্ষা বলছে, বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারিয়েছেন নির্যাতিতাদের অনেকেই। তার পরেও যাঁরা অভিযোগ জানাতে পুলিশের কাছে আসছেন, তদন্তের সময় তাঁদের অনেককেই হেনস্থার মুখোমুখি হতে হয়। কী রকম? ধরা যাক, ধর্ষণের ঘটনার পর পরই থানায় অভিযোগ জানাতে গেলেন কেউ। তাঁকে অনেক সময়েই মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা রক্তমাখা জামা পরিয়ে বসিয়ে রাখা হয়। এমনকী, কোনও ট্রমা কাউন্সেলিংয়েরও ব্যবস্থা থাকে না বেশির ভাগ থানায়। আর তার সঙ্গে তো পুলিশ কর্মীদের একাংশের দুর্ব্যবহার রয়েইছে। এখানেই শেষ নয়। ঘটনার বিবরণ নথিভুক্ত করার নামে বিভিন্ন অস্বস্তিকর প্রশ্ন করা হয় অভিযোগকারিণীদের। যা এড়াতে থানায় গিয়েও অনেকেই পিছিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন। আর এখানেই প্রশ্ন তুলছেন মানবাধিকার কর্মীরা। তাঁদের মতে, এ সব সমস্যার কথা জেনে আরও অনেক বেশি সতর্ক হওয়া উচিত ছিল দিল্লি পুলিশের। বিশেষ করে নির্ভয়া-কাণ্ডের পরে। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তো নির্যাতিতাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত তাদেরই! ন্যায় বিচারের আশ্বাসও এই সমাজ আশা করে পুলিশের কাছ থেকে। শুধু তাই নয়, অপরাধ আরও কড়া হাতে দমন করার কথা তাদের। কিন্তু, বাস্তবে এর উল্টো ছবিই দেখা যায়। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×