ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সম্পাদনায় মাসিক ‘ছোট গল্প’ প্রকাশিত হয়

কামাল বিন মাহতাবের

প্রকাশিত: ০৭:০১, ২৬ আগস্ট ২০১৬

কামাল বিন মাহতাবের

সময়টা ১৯৬৯-৭০ সাল। তখনও বাংলাদেশ হয়নি, কিন্তু ভেতরে ভেতরে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ বাঙালীদের চেতনায় দানা বেঁধেছে, যে কোন সময় বিস্ফোরণ হতে পারে। ঠিক এইরকম এক এলোমেলো সময়ে ঢাকার জনসনরোড থেকে ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) কামাল বিন মাহতাবের সম্পাদনায় মাসিক ‘ছোটগল্প’ প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটি ছিমছাম এবং সুসম্পাদিত। প্রথম সংখ্যায় জহির রায়হান, রাহাত খান, সৈয়দ শামসুল হক, শওকত আলী, কায়েস আহমদ প্রমুখ লেখকরা তাদের শ্রেষ্ঠ গল্পটি ছাপাতে দেন। প্রথম সংখ্যায় একটি সাক্ষাৎকার, বই এর আলোচনা, বইয়ের খবর এবং আরো অনেক আকর্ষণীয় বিভাগ ছিল। একই সময়ে কবি আনওয়ার আহমেদ সম্পাদিত ‘কিছুধ্বনী’ গল্পপত্র এবং ‘কিছুধ্বনী কবিতাপত্র’ প্রকাশিত হতে শুরু করে। তিনি চাকরি করতেন কাস্টমসে, পত্রিকা প্রকাশ ও কবিতা ছিল তার ধ্যান ধারণা, তার একমাত্র প্রেম। ‘ছোটগল্প’ পত্রিকাটি প্রকাশনা সৌকর্যে এবং গল্প নির্বাচনে বেশ অভিনবত্ব দেখাতে পেরেছিল। এখনও যাদের কাছে ‘ছোটগল্প’ এর পুরনো কপি আছে, তারা নিশ্চয়ই উপলব্ধি করতে পারবেন কতটুকু শ্রম, মেধা ও ভালবাসা এর পেছনে থাকলে এরকম একটি গল্পপত্র প্রকাশ করা সম্ভব। কামাল বিন মাহতাব তার চাচার সঙ্গে মিলে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা গড়ে তুলেছিলেন। দোসরী ফিল্মের সব বিজ্ঞাপন, ব্যানার একচেটিয়া পেতেন। তার একটি ভক্সওয়াগন গাড়িও ছিল। ‘ছোটগল্প’ পত্রিকাকে কেন্দ্র করে গল্প আন্দোলন গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। তার সঙ্গে সহযোগী ছিলেন কায়েস আহমেদ, শাকের চৌধুরী এবং আলমগীর রহমান। বেশ কয়েক বছর পত্রিকাটি চালিয়ে ছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দোসানীরা পাকিস্তানে চলে গেলেন। কামাল বিন মাহতাব ও তার চাচার ব্যবসাও দিন দিন প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে শুরু করেছে, তখন আগে ছিল একচেটিয়া মনপোলি ব্যবসা, এখন অসংখ্য প্রতিযোগী। কামাল বিন মাহতাবের সঙ্গে শেষ দেখা ১৯৮৫ সালে বিদেশ থেকে অধ্যাপনার চাকরি শেষ করে আসার পর। তখন তার স্বাস্থ্য এবং ব্যবসা দুটোই খারাপ হয়ে গেছে। এক সময় তিনি ‘ছোটগল্প’ পত্রিকা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হলেন, কারণ এছাড়া দ্বিতীয় কোন বিকল্প ছিল না। একটা নেশাগ্রস্ত মানুষের মতো পত্রিকার পেছনে অনেক টাকা, শ্রম ও ভালোবাসা তিনি বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু বিনিময়ে তিনি কী পেলেন? বাংলাদেশের পাঠক এবং যারা লেখালেখির সাথে জড়িত কামাল বিন মাহতাব কিংবা আনোয়ার আহমেদকে তারা কি মনে রেখেছেন? কামাল বিন মাহতাব এবং তার সহযোগী যোদ্ধারা কেউ আজ বেঁচে নেই। শুধু আলমগীর রহমান বেঁচে আছেন। বাঙালীরা খুব দ্রুত সবকিছু ভুলে যায়। আমরাও তাদের ভুলে গেছি। এই প্রজন্ম তাদের সম্পর্কে কিছুই জানে না।
×