ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নুরুল করিম নাসিম

জার্নাল

প্রকাশিত: ০৭:০০, ২৬ আগস্ট ২০১৬

জার্নাল

শওকত আলী এখন চোখে প্রায় দেখতে পান না তখন পুরনো ঢাকার শরৎগুপ্ত রোডে থাকতাম। প্রায়ই শওকত আলী এবং আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ভাইয়ের সাথে দেখা তাদের টিকাটুলি বাসায় হতো। সময়টা ১৯৭২ সাল। শওকত আলী তখন শাহাদত চৌধুরী সম্পাদিত ‘বিচিত্রা’ রম্য সাপ্তাহিকের ঈদ সংখ্যায় নিয়মিত উপন্যাস লিখতেন। বিকেলটা বাসায় থাকতেন, কোথায়ও তেমন একটা যেতেন না। দু’জনই তখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে বাংলা সাহিত্য পড়ান। আমি অনেক দিন সেখানেও তাদের সাথে আড্ডা মারতে গেছি। সেখানে দেখা হতো আব্দুল মান্নান সৈয়দ এবং বিখ্যাত ‘বেড়াল’ গল্পের দেখক শহিদুর রহমানের সাথে। সাহিত্যের খুঁটিনাটি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দীর্ঘ আলাপচারিতা আজো মনে পড়ে। গত বছর (২০১৫) এক সাহিত্য মাসিকের সম্পাদক এক বন্ধুর অনুরোধে টিকাটুলির শওকত আলীর বাসায় গিয়েছিলাম। সেটাও ছিল এক ধরনের আলাপচারিতা। প্রথমে বাসাটি খুঁজে পাইনি। ১৯৭২ সালে প্রথম তার বাসায় যাই। তখন টিকাটুলির কে.এম. দাস লেন ফাঁকা ও নির্জন ছিল। এত মানুষ, এত গাড়ি ছিল না। এত হাইরাইজ বিল্ডিংও চোখে পড়তো না। চল্লিশ বছরের ব্যবধানে সবটুকু প্রেক্ষাপট বদলে গেছে। শওকত আলী এখন চোখে দেখতে পান না, শরীর স্বাস্থ্য অনেকটা ভেঙ্গে পড়েছে, বেশ ক’বছর আগে তার স্ত্রী মারা গেছেন। ছেলেরাও আলাদা থাকেন। তিনি বললেন ‘তোমাদের আমি চা খাওয়াতে পারবো না। আমার বউ নেই, কাজের লোকও নেই।’ আমি বললাম, সেসব নিয়ে আপনি ভাববেন না। আমি কিছু কথা জানতে চাই, ঠিক তথাকথিক সাক্ষাৎকার নয়, অন্তরঙ্গ আলাপচারিতা। লক্ষ্য করলাম, তিনি কথা বলতে বলতে থেমে যাচ্ছেন। সবকিছু ঠিকঠাক মনেও করতে পারছেন না। মাঝে মাঝে নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য থামছেন। তার এরকম অবস্থা দেখে আমার খুব কষ্ট হলো। সময় কী নির্মম, সময় কী ক্ষমাহীন। অথচ একদিন সেই ’৭২-৭৩ সালে তার এই হাত দিয়ে ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’, উত্তরের ক্ষেপ বেরিয়েছিল। শেষের উপন্যাসটির চলচ্চিত্রায়ন করেছেন শাজাহান চৌধুরী।
×