ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জিয়া হায়দার

এলেবেলে

প্রকাশিত: ০৭:০০, ২৬ আগস্ট ২০১৬

এলেবেলে

চরিত্র নির্দেশক (বয়স ৩০) কাঞ্চু (একই বয়সের) ছেলে (বয়স ২২ থেকে ২৫) মেয়ে (বয়স ১৮ থেকে ২০) পুরুষ (ছেলের বয়সের) মহিলা (মেয়ের বয়সের) প্রথম ওয়েটার (বয়স ৩০ থেকে ৩৫) দ্বিতীয় ওয়েটার (একই বয়সের) স্বামী (বয়স ৪৫ থেকে ৫০) স্ত্রী (বয়স ৪০ থেকে ৪৫) প্রথম অংক প্রথম দৃশ্য সময় বিকেল। নাটক শুরুর নির্ধারিত সময়ের পাঁচ মিনিট আগে পর্দা উঠবে (যদি প্রোসেনিয়াম মঞ্চে নাটকটি করা হয়)। নাটক শুরুর আগে থেকেই সঙ্গীত শোনা যাবে। অভিজাত রেস্টুরেন্টের জন্য মানানসই কোন বিদেশি যন্ত্রসঙ্গীত। আলোÑ মঞ্চে ঝুলন্ত ডোম বা ঝাড়বাতিগুলো জ্বলছে। অভিজাত রেস্টুরেন্টে যেমন বৈচিত্র্যময় আলোয় সজ্জা, তেমনই। তবে অবছা। মূল নাটক শুরুর আগে মঞ্চে ঝাড়বাতিগুলো, কাউন্টার টেবিল ও কাস্টমারদের টেবিলগুলোর ওপর আলো জ্বলতে থাকবে। মঞ্চÑ মধ্যমঞ্চে দেড়/দু’ফুট উঁচু চৌকোণো প্ল্যাটফর্ম। তার ওপরে টেবিল ও পাশাপাশি দুটি চেয়ার। টেবিলে একটি এ্যাস্ট্রে। তার পেছনে একপাশে গীটারিস্টের জন্য টুল। মধ্যমঞ্চের একপাশে কাউন্টার টেবিল। সম্মুখমঞ্চের একদিকে নির্দেশকের রিভলভিং চেয়ার। অপরদিকে দুটি চেয়ারসহ একটি টেবিল খালি থাকবে। (দ্বিতীয় অংকে পুরুষ ও মহিলার জন্য) মঞ্চের তিনপাশে কাস্টমারদের চেয়ার টেবিল। প্ল্যাটফর্মের কাছাকাছি একটি টেবিল খালি থাকবে দ্বিতীয় অংকে স্বামী স্ত্রীর জন্য। কাউন্টার টেবিলে নিরাসক্ত মনে বসে আছে কাঞ্চু ম-ল। কানের ভেতর কাঠি দিয়ে চুলকানো তার অভ্যাস। দুজন ওয়েটার কাস্টমারদের কাছ থেকে অর্ডার নিচ্ছে ও খাবার পরিবেশন করছে। পাঁচ মিনিট অতিবাহিত হবার পর মঞ্চে প্রোডাকশন লাইট জ্বলবে। পর মুহূর্তেই প্রবেশ করে নির্দেশক। (তার আসন যেদিকে সেই দিক থেকে।) সে ঘুরে ঘুরে রেস্টুরেন্টের এদিক ওদিক থেকে মঞ্চের আলোগুলো দেখে নেয়। চোখে মুখে সন্তোষের ভাব। অতঃপর এগিয়ে আসে সম্মুখ মঞ্চের মধ্যখানে। নির্দেশক : সমাগত সুধী দর্শকবৃন্দ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। (বাও করে) রেস্টুরেন্টের ভেতরে নাটক। এই যে ব্যাপারটা, মানে রেস্টেুরেন্টে ড্রামা, এ দেশে নতুন। বিদেশে অবশ্য পুরোনো। আমি যদিও দেখিনি। শুনেছি। আর শুনেই (অহঙ্কার মিশ্রিত হাসিতে) আমার ইনটুইশন তো প্রখর আর ক্রিয়েটিভ ফ্যাকাল্টিও প্রচুরÑ অতএব শুনেই আমি এ ধরনের নাট্যকর্ম চালু করার আয়োজন করেছি। আপনারা যারা এখানে এই সময়ে এসেছেন। এদিকে চাÑটাও খাবেন, আর ওদিকে ফাও হিসেবে নাটকও দেখবেনÑ বেশ মজার; উপরি পাওনা কিন্তু। এখন একটি ব্যাপার আমাদের দেশে যুগান্তকারী, আমাদের দেশের নাট্য আন্দোলনে বিপ্লব। (বেশ জোর দিয়ে) আমি বলতে চাই, এ বিপ্লবের সূচনা আমারি হাতে। কাঞ্চু : বললেই হলো আর যেসব নাট্যদল আছে, তারা শুনলে তো খেপে যাবে। নির্দেশক : (কাঞ্চুর দিকে তাকিয়ে) খেপবে না ছাই। আর ক’দিন পর যখন ওরা আমাকে ফলো করবে তখন দেখিস। (কাঞ্চুর প্রতি আর কোনো গুরুত্ব না দিয়ে) যে যাই বলুক, এর সমস্ত ক্রেডিট আমার। এর জন্য নাট্য আন্দোলনের ইতিহাসে আমার নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে, থাকতেই হবে। (হাসি হাসি মুখে গলার টাই নাড়া চাড়া করে) আজকে শুভ উদ্বোধন। আপনার তো জানেনই, রেস্টেুরেন্টের নাম ‘এলেবেলে’। এলেবেলে রেস্টুরেন্টের প্রথম নাট্যানুষ্ঠান বলেই নাটকটির নামও দেয়া হয়েছে ‘এলেবেলে’। নাটকটি আমারি লেখা, আমারি পরিচালনা। পরিচালনা শব্দটা এখন পুরোনো হয়ে গেছে। সেজন্য আর সবাই নির্দেশক কথাটি ব্যবহার করে। আর তাই আমিও... এভাবে বলাটাই ভালো; রচনা ও নির্দেশনা আবু আলি মিরধা, বিএ হনস, এমএ থার্ড ক্লাস, ঢাক, মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়Ñ অর্থাৎ আমার। আর কিনা, এই রেস্টুরেন্টের অপর অংশীদার, যদিও সে এখন পর্যন্ত একটি পয়সাও দেয়নি, বরং চান্স পেলেই দু’পয়সা খসিয়ে নিচ্ছেÑ (কাঞ্চুর দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে) আমার বন্ধু জনাব কাঞ্চু ম-ল বিএ; তাকে একটা পোস্ট না দিলে অবিচার হয়, সে জন্যে ফিলিম নাটক এসবের তো একজন প্রডিউসার বা প্রযোজক থাকে, তা ওই প্রডিউসারের পদটা আমি তাকে দিয়েছি। আর সে নিজেই যে দায়িত্বটা আমার কাছ থেকে নিয়েছে। আমার বোঝার আগেই, সেটা হচ্ছে এই রেস্টুরেন্টের ক্যাশিয়ারের। (কাঞ্চুকে) এদিকে আয় দেখি। কাঞ্চু : আমাকে আবার কেন? (বলতে বলতে এগিয়ে আসে এবং সম্মুখ মঞ্চ থেকে একটি চেয়ার নিয়ে নির্দেশকের কাছাকাছি বসে পড়ে।) নির্দেশক : আজকে প্রথম দিন, মানে শুভ উদ্বোধন কিনা, সে জন্যেই তোকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। না হলে কি আর...। থাকগে। (দর্শকদের উদ্দেশে) নাটক এক্ষুণি শুরু হবে। শুরুর আগে একটা কথা বলে নেয়া দরকার। কথাটা হচ্ছে গিয়ে... এই নাটকে... একটু ঘাপলা হয়ে গেছে। কাঞ্চু : তুই যেখানে সেখানে তো হবেই। নির্দেশক : থাম তুই। ...একে ঠিক ঘাপলা বলা উচিত হবে না। বরং বলা যায়, বরং এটাকে একটা... ওই যে কি বলে... এক্সপেরিমেন্ট, নিরীক্ষামূলক ব্যাপার-স্যাপার বলে চালানো যেতে পারে। কাঞ্চু : না পারলেই বড়ো বড়ো কথা। নির্দেশক : (কাঞ্চুকে উপেক্ষা করে) নাটকটার রিহার্সাল ঠিক যেমন হওয়া দরকার তেমনটি হয়নি। মাত্র... থাকগে, সেটা আপনাদের না জানলেও চলবে। আসল কথা ঠিকমতো হয়নি। আর সবচেয়ে বড়ো কথা নাটকটি লেখাই হয়নি। আইডিয়া বলুন, ডায়লগ বলুন, এ্যাকশন, এক্সপ্রেশনÑ সবকিছু মাথার মধ্যে জড়ো হয়ে আছে, শুধু লিখে ফেললেই চলতো। কিন্তু সত্যি বলতে কি, হয়নি (কাঞ্চুর দিকে তাকিয়ে নিয়ে)Ñ আমার এই বন্ধুর জন্যে। কাঞ্চু : (রেগে) কি? নির্দেশক : তুই-ই তো। এতো তাড়াহুড়ো না করলে... কাঞ্চু : করবো না তো কি। (চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে দর্শকদের প্রতি) বুঝলেন, রেস্টুরেন্ট কেনা হয়েছে সেই কবে। তাও আবার কি করে খুলবেন।... এটি ছিলো আমাদের আরেক বন্ধুর রেস্টুরেন্ট। সে চালাতে না পেরে আমাদের কাছে বেঁচে দিয়ে ওয়েজ আর্নিং স্কীমে একই সঙ্গে বেবি ফুড আর ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ের ব্যবসায় নেমে গেলো। তার কাছ থেকে কেনা হয়েছে সেই দু’মাস। সে কিনা এর মধ্যেই অনেক বানিয়ে ফেলেছে। আর আমরা? (নির্দেশককে দেখিয়ে) ইনি তাল তুললেন যে, নাটক রেডি হলে পর রেস্টুরেন্ট ওপেন করা হবে। এতগুলো টাকা একেবারে ফালতু ফেলে রাখা যায়, আপনারাই বলুন। নির্দেশক : তোর কি? তোর তো টাকা নয়। সব টাকা আমার। এ ক’বছর মেরে কেটে লুটে পুটে যা গুজিয়েছিলাম পুরোটাই ইনভেস্ট করেছি এতে। এর মালিক আমি। কাঞ্চু : তাতে কি হয়েছে? নির্দেশক : কি হয়েছে মানে। তোর দরদ কার জন্যেÑ আমার জন্যে, না এই রেস্টুরেন্টের জন্য। কাঞ্চু : বড়ো কঠিন প্রশ্ন। নির্দেশক : শুনে রাখÑ তোর দরদ থাকতে হবে আমার জন্যে। কারণ আমার জন্যে দরদ মানেই রেস্টেুরেন্টের জন্যে দরদ। কাঞ্চু : তুই দেখছি লিডারদের মতো কথা বলছিসÑ আমাকে ভালোবাসা মানেই দেশকে ভালোবাসা। নির্দেশক : লিডাররা ঠিকই বলে। কাঞ্চু : তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু আমি তোর বন্ধু। আমার জন্যেও তোর দরদ থাকতে হবে। নির্দেশক : সেটা খুব ইম্পর্টেন্ট নয়। কাঞ্চু : (কিঞ্চিত ভুরু কুছকে) ও। তবে (বেশ জোর দিয়ে) ক্যাশ মেনেজমেন্ট কিন্তু আমার হাতে। নির্দেশক : (একটু টেসে যায় যেন) ও। (নিচু গলায়) ঠিক আছে থাম। লোকজনের সামনে নিজেদের মধ্যে... (কাঞ্চু বসে পড়ে) আফটার অল, আমরাই তো। (দর্শকদের) শুনুন। ব্যাপারটা হলো গিয়ে নাটক লেখা না হলেও যেভাবে আমি নাটকটা নামাচ্ছি, তা কি বলবোÑ অভিনব। কুশীলবদের আমি পর পর ঘটনাগুলো মানে সিকোয়েন্সগুলো, ক্লাইম্যাক্স, এ্যাকশন সবকিছু সুন্দর করে বুঝিয়ে দিয়েছি। তারাও ঠিক ঠিক বুঝে নিয়েছে। শুধু তাই নয়, সমস্ত সিকোয়েন্সগুলোর কিছু ডায়ালগও তাদের দিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা সেগুলো মুখস্ত করে নিয়েছে। কাঞ্চু তো এ সবের মাহাত্ম্য ঠিক বোঝে নাÑ কাঞ্চু : কি বললি? নির্দেশক : ঠিকই তো। বুঝলে কি আর তিনবার বিএ ফেল করতিস। কাঞ্চু : (দমে যায়) তুই লোকজনের সামনে এভাবে... নির্দেশক : দর্শকেরা জানে। কাঞ্চু : দর্শক নয়, খদ্দের। নির্দেশক : ওই হলো। তারা জানে তুই বিএ পাস। যদিও ১৯৭২ সালে? (কাঞ্চু ক্ষুণœ মনে উঠে কাউন্টার টেবিলে বসে) সে যাকগে। কথা হলো... প্রথম খদ্দের : এতো কথা রেখে নাটক শুরু করুন। নির্দেশক : নাটকের জন্যেই তো বলতে হচ্ছে, যাকে বলে ভূমিকা। আপনারা যাতে আমার এ নাটকের স্পিরিট ঠিকমতো গ্রহণ করতে পারেন সে জন্যেই কথাগুলো আমাকে বলতে হচ্ছে। ২য় খদ্দের : তাহলে সংক্ষেপে সেরে দিন। নির্দেশক : আচ্ছা, আচ্ছা, সংক্ষেপেই সেরে দেবো।... কথা হলো, আমার নাটকে এ্যাকটর-এ্যাকট্র্রেস মাত্র দু’জনÑ একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। দু’জনেই বেশ অভিজ্ঞ আর তুখোড়। তাদের তো সিকোয়েন্স এ্যাকশন এসব বোজানো হয়েছে, তবুও আমি আরেকটা কায়দা করেছি। কারণ ওদের চেয়ে আমার পজিশন অন্যরকম। আমি ছোটবেলায় ইংরেজি স্কুলে পড়ার সময় একটা নাটকে মৃত সৈনিকের ভূমিকয় অভিনয় করে খুবই সুনাম অর্জন করেছিলাম। আর এদিকে পত্রপত্রিকায় যে সব নাট্য সমালোচনা বেরোয় সে সব পড়ে যেমন জ্ঞানলাভ করেছি, তেমনি নাটকের প্রতি আমার ইন্টারেস্টও বেড়ে গেছেÑ ফলে ওদের চেয়ে আমি শ্রেষ্ঠ। সে জন্যেই ঠিক করেছি, অভিনয় চলাকালে আমি এ্যাকশনগুলো বলে যেতে থাকবো, ডিকটেট করতে থাকবো, ওরা সেই মতো অভিনয় করে যাবে। এ দুজন ছাড়া আরো একজন আছে, নতুনত্বের কারণে তাকে রেখেছি, সে হচ্ছে (একটু বেশি জোর দিয়ে) ওয়েটার। প্রথম ওয়েটার : (কোনো খরিদ্দারের টেবিলে ব্যস্ত) ইয়েস স্যার। নির্দেশক : না, তোমাকে নয়।... আরো একজন আছে। অভিনেতা নয়, মিউজিশিয়ান বা সঙ্গীত পরিচালক। সে একজন কামেল গীটারিস্ট। তাকেও সব সিকোয়েন্স বোঝানো হয়েছে। সে এফেস্ট মিউজিক দেবে। দরকার হলে আমি তাকেও নির্দেশ দেবো।... যাই বলুন, এটাও কিন্তু একটা এক্সপেরিমেন্ট, সফলতার যাত্রাপথে এর মূল্য...। কাঞ্চু : ফলেই পরিচয়। নির্দেশক : (কাঞ্চুর প্রতি একবার ভ্রƒক্ষেপ করে, দর্শকদের উদ্দেশে) আসল কথা হচ্ছে, আপনারা তো এটা জানেনই যে, নাটকের নীতি হচ্ছে নির্দেশক যা ইচ্ছে করবে, যা বলবে, অভিনেতারা তা-ই মেনে নেবে, মানতে বাধ্য। অর্থাৎ কিনা নাটকের এথিক্স অনুযায়ী ডিরেক্টর মানেই ডিকটেটর, সর্বময় অধিকর্তা। সুতরাং আমার নির্দেশই চরম এবং পরম। (কাঞ্চু খিক্খিক্ করে হেসে উঠে। নির্দেশক রাগত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায়।)... আমি এই নাটকের কুশীলবদের যা নির্দেশ দিয়ে রেখেছি এবং যেমন যেমন দেবো, তারা তাই বিশ্বস্তভাবে অনুসরণ করে অভিনয় করে যাবে। আমার মহৎ আইডিয়াকে সুন্দরভাবে রূপায়িত করবে। তাতে যদি প্রোডাকশন গোল্লায় যায় যাক, আমি জানি তা যেতে পারে না। কিন্তু নাটকের এথিক্স আমি প্রতিষ্ঠা করতে চাই। কারণ আমি লক্ষ্য করেছি যে, এ দেশের নাট্যকর্মে নির্দেশকের এই ভূমিকা আজ পর্যন্ত কোন গুরুত্ব পায়নি। এদিক থেকে এটাও আমার কৃতিত্ব, আমাদের নাটকের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে। কেউ যদি না লেখে, কেউ ঠিকমতো লিখতে পারবেও না, আমি নিজেই লিখবো, বেনামে লিখবো। (কাঞ্চু প্রচ- উৎসাহে হাততালি দেয়।)... (কাঞ্চুর উদ্দেশে) ধন্যবাদ। (দর্শকদের উদ্দেশে, বাও করে) ধন্যবাদ। মঞ্চ সম্পূর্ণ অন্ধকার হয়ে যায়। ঝুলন্ত ডোমগুলোও নিভে যাবে। দশ সেকেন্ড অন্ধকার ও নীরবতা। এই সময়ের মধ্যে মিউজিশিয়ান এসে তার নির্ধারিত টুলে বসবে। দ্বিতীয় দৃশ্য সম্মুখ মঞ্চের পুরুষ মহিলার জন্য নির্দিষ্ট টেবিল ছাড়া অন্যান্য সমস্ত আলো জ্বলে উঠবে। দেখা যাবে নির্দেশক সম্মুখ মঞ্চের মাঝখানে মিউজিক ডিরেক্ট করার উদ্দেশে দাঁড়িয়ে। কাঞ্চু ম-ল কাউন্টার টেবিলে কিছু একটা করছে। মিউজিশিয়ান গীটারে হাত লাগিয়ে বসে আছে হুকুমের অপেক্ষায়। আলো জ্বলতেইÑ নির্দেশক : মিউজিক। (মিউজিশিয়ান প্রারম্ভিক সঙ্গীত বাজাতে থাকে। নির্দেশক দর্শকদের দিকে তাকিয়ে বা মাঝে মাঝে মিউজিশিয়ানের দিকে তাকিয়ে দু’হাত দোলাতে থাকে যেন অর্কেস্ট্রা পরিচালনা করছে। কিছু পরে দর্শকদের দিকে ফিরে) নাটক শুরু হচ্ছে। (যেয়ে নিজ আসনে বসে। চারদিকে দেখে।) মেয়েটি আসলো। (নির্দেশকের অপর দিক থেকে মেয়ের প্রবেশ। পরনে উচ্চবিত্ত শ্রেণীর অতি আধুনিক হাল ফ্যাশনের পোশাক।) ঢুকেই দেখলো আর কেউ আসেনি। একটু ব্যথিত হলো। এগিয়ে চলেছে মঞ্চের দিকে। অর্থাৎ প্ল্যাটফর্মের দিকে। মঞ্চের চেয়ারে বসার আগে ঘড়ি দেখলো। বসলো। কাঁধের ব্যাগটি টেবিলে রাখলো। বাইরের দিকে দেখলো। চোখ থেকে রোদ চশমা নামিয়ে রাখলো টেবিলে। (ওয়েটার উঁকি দিয়ে মেয়েটি দেখছে, লক্ষ্য করে) ওয়েটার উঁকি দিয়ে দেখলো মেয়েটিকে। মেয়েটি ব্যাগ থেকে একটি বই নিয়ে পড়ার ভান করতে লাগলো। (বেশিক্ষণের বিরতি দিয়ে) ওয়েটার টেবিলে মেনু এন দিলো। ওয়েটার মেনু দিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় কাঞ্চু ওয়েটারকে ইশারা করে কিছু যেন বুঝিয়ে দেয়। নির্দেশক তা লক্ষ্য করে এবং বিরক্তি প্রকাশ করে। ওয়েটার ভিতরে চলে যায়। মেয়েটি আবার ঘড়ি দেখলো। বিরক্তি আর ক্ষোভ তার চোখে মুখে। বাইরের দিকে দেখলো। অবশেষে বই পড়ার ভানে আবার নিবিষ্ট হলো। (ওয়েটার মেয়েটির বই পড়ার সময় এক গ্লাস পানি এনে টেবিলে রাখে। মেয়েটি বিস্মিত চোখে তার দিকে তাকায়। নির্দেশক ক্ষুব্ধ হয়ে কঠিন কণ্ঠে) ওয়েটার। (ওয়েটার থমকে দাঁড়ায়) এটা কি হচ্ছে? ওয়েটার : আমার কি দোষ (কাঞ্চুকে দেখিয়ে) উনিই তো...। (চলবে)
×