ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কাজী রওনাক হোসেন

আমার দেখা মিয়ানমার

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ২৬ আগস্ট ২০১৬

আমার দেখা মিয়ানমার

(পূর্বে প্রকাশিতের পর) পরদিন সকালে আমরা যাব নতুন রাজধানী নাপিতো। সকালে নাস্তা খেয়ে সবাই লবিতে চলে আসলাম। এখানে আমাদের সঙ্গে যোগ হলেন আবু আলম ভাই ও মিনি আপা। দুজনেই চমৎকার ট্রাভেলিং মানসিকতা সম্পন্ন। আলম ভাই যে সরকারী অত্যন্ত উঁচু পদে কাজ করে রিটায়ার করেছেন, তা বোঝার কোন উপায় নেই। সবার সঙ্গেই চমৎকারভাবে মিশে গেলেন। আমার তখন মনে হচ্ছিল ’৭৭ সালের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ। নাপিতো হচ্ছে ইয়াঙ্গুন থেকে প্রায় ৩৭০ কিলোমিটার দূরে। তবে, ইয়াঙ্গুন শহর থেকে বের হয়ে হাইওয়েতে ওঠার পর রাজধানী নাপিতো পর্যন্ত দূরত্ব হচ্ছে ৩৩৬ কিলোমিটার। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে- এ সম্পূর্ণ রাস্তাটি একটি সোজা রাস্তা। কোথাও কোন বাঁক নেই। পুরো রাস্তাটি ৮ লেনের। মাঝে অনেক বড় ডিভাইডার। দুপাশে এখনি করা যায় এই অবস্থার চার লেন ৪ লেন ৪ লেন রাস্তা বাড়ানোর জায়গা। দিনটি ছিলো প্রচ উত্তপ্ত। আমরা যখন রাজধানীর ভেতরে ঢুকলাম, তখন দুপুর হয়ে গেছে। ওয়াটার ফাউন্টেন পার্কে প্রথমে গেলাম, কিন্তু, ফাউন্টেন বন্ধ। ফলে ওখানে নেমে ১০/১৫ মিনিট পরেই আমরা রওনা হলাম দুপুরের খাবারের জন্য। যদিও আমাদের সফরসূচীতে সাফারি ওয়ার্ল্ড, ন্যাশনাল রিসোর্স ভিলেজ, জুলজিক্যাল গার্ডেন ইত্যাদি ছিল। কিন্তু আমরা বাস্তবে বুঝতে পারলাম এগুলো দেখতে যাওয়া বোকামি ছাড়া কিছুই না। কারণ, গরমে আমাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত প্রায়। পথেই পার্লামেন্ট হাউস দেখলাম। প্রচুর ছবি তুললাম এবং অবাক বিস্ময় লক্ষ্য করলাম পার্লামেন্ট হাউসের সামনের রাস্তাটি ২২ লেনের বিশাল রাস্তা। বলা চলে বোয়িং বিমান নামতে পারবে। সবচেয়ে প্রশংসনীয় যে ব্যাপারটি তা হচ্ছে ইয়াঙ্গুন কিংবা ইয়াঙ্গুন থেকে নাপিতো হাইওয়ের সব জায়গাই ঝকঝকে তকতকে। কোথাও কোন ময়লা, বোতল, ক্যান, টিস্যু কোন কিছুই দেখা যায় না। গাড়ি থেকে কেউ কিছুই ছুড়ে মারে না। এত লম্বা পথ পুরোটাই সযতœ-সংরক্ষিত। আমরা চলে আসলাম ফুড-কর্নার কেকে রেস্তরাঁয়। চমৎকার প্রণফ্রাই এবং লাঞ্চ খেয়ে আবার রওনা হলাম ইয়াঙ্গুনের পথে। পথ যেন আর শেষ হয় না। প্রায় ৭টার পরে আমরা হোটেলে পৌঁছালাম। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে আমাদের সফরসঙ্গী সালাহউদ্দীনের বন্ধু টেলিনরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হাসনাইন তৌফিক আহমেদের বাসায় দাওয়াত খেতে গেলাম। বিশাল বাসা। আয়োজনও চমৎকার। কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনক হলো যে সেদিনই তার স্ত্রী পায়ে ব্যথা পাওয়ায় আরও বেশ কিছু আইটেম বানানো বাদ পড়ে গিয়েছিল। ডিনার করে বেশ রাতই হয়ে গেল হোটেলে ফিরতে। পরদিন সকালে ফ্রি টাইম। ১২টায় চেক-আউট। দুপুরে ফ্লাইট। সবাই যে যার মতন টুকটাক কিনতে বেরিয়ে পড়ল। সকালে নাস্তার পরই একটা ফটোসেশন হলো। দেখা গেল আলাদা-আলাদা গেলেও প্রায় সবাই স্কট-মার্কেট, যা পাথর ও হ্যান্ডিফ্রাক্টসের জন্যে বিখ্যাত সেখানে গিয়েছেন। আমি অবশ্য এনটিভির আহমেদ পিপুল ও তার পরিচিত মাসুদ ভাইয়ের সঙ্গে ফিশ-মার্কেট এবং পোর্ট দেখতে গেলাম। সেখানে এক মজার তথ্য পেলাম যে এ বছর বৈশাখে বাংলাদেশের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও বাজারে পদ্মার ইলিশ বলে যেই মাছ বিক্রি হয়েছে তার মূল চালানটি এসেছে বার্মা থেকে। মাসুদ ভাই জানালেন যে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে এপ্রিলের ১০ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে ১০০ কন্টেইনার ইলিশ এসেছিল। ফিশ মার্কেট ও পোর্ট দেখা শেষে আমরাও গেলাম স্কট মার্কেটে। সেখানে এক এলাহী কা । ১ ডলার থেকে শুরু করে ১ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত রুবী, স্টার রুবী, নীলা, টোপাজ ইত্যাদি হরেক কিসিমের পাথর দেখার সুযোগ হলো। ফিক্সড প্রাইস শপ ছাড়া দামাদামীর কোনো শেষ নেই। আমাদের সঙ্গে অনেকেই যার যার সাধ্য অনুযায়ী পাথর কিনল। পাথর বসানো নেকলেস এবং আংটি কিনল। সময় দ্রুত বয়ে যাচ্ছে। আমাদের এয়ারপোর্টে পৌঁছানোর জন্যে গাড়িও তৈরি। দ্রুত হোটেলে ফিরে এসে চেক-আউট করে কোচে বসে পড়লাম। যথাসময়ে এয়ারপোর্টে এসে বিমানে চড়া। মনে মনে চিন্তা রইল যে ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে নাপিতোতে এক বা দুরাত থাকতে হবে এবং দেখতে হবে মান্দ্রেলা, বাগান ও অন্যান্য দশর্নীয় স্থানগুলো। সু-চির নেতৃত্বে মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফিরে আসুক। উন্নয়ন ত্বরান্বিত হোক। আমাদের এত কাছের দেশ মিয়ানমার যে কতটা শৃঙ্খলার ও উন্নত তা নিজে না গেলে বোঝা যাবে না। পেট্রোলের দাম কম হওয়াতে সব কিছুরই দাম কম। খাবার-দাবার, থাকা সহনীয়। শুধু বিদ্যুতের চরম ক্রাইসিস। বিদ্যুতের সঙ্কট উত্তরণ ঘটাতে পারলে মিয়ানমারের উন্নতি কে রুখবে? শেষ
×