ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মীম নোশিন নাওয়াল খান

সত্যিকারের মৎস্যকন্যা

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ২৬ আগস্ট ২০১৬

সত্যিকারের মৎস্যকন্যা

বিদেশী ফ্যাশন বর্তমানে অনেক মেয়েরাই আলাদা লেজ তৈরি করে সাগর দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন মৎস্যকন্যা হয়ে। এখন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছোট-বড় অনেকেই মৎস্যকন্যা হয়ে আনন্দ দিচ্ছেন সবাইকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখন এই কাজটি হয়ে গেছে আরও সহজ, নিজেদের প্রচেষ্টায় শুধু নয়, প্রশিক্ষণ নিয়েও আজকাল মৎস্যকন্যা হচ্ছেন অনেকে। মেয়েরা শুধু নয়, এটি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ছেলেদের কাছেও। স্টান্ট দৃশ্য, অভিনয়, মডেলিং ইত্যাদিতে অংশ নিচ্ছেন মৎস্যপুত্ররা। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছেন অনেক মৎস্যকন্যা। তাদের মধ্যে কয়েকজনের গল্প থাকছে আজকের আয়োজনে। আজ থেকে আরও ১০০ বছর আগেই মৎস্যকন্যার মতো লেজ লাগিয়ে পানিতে নামতে সক্ষম হয়েছিলেন এ্যানেট কেলারম্যান। ইতিহাস অনুযায়ী সম্ভবত তিনিই বিশ্বের প্রথম মৎস্যকন্যা। এ্যানেট এক ধরনের প্যারালাইসিসে আক্রান্ত ছিলেন। নিজেকে ঠিক রাখার জন্যই সাঁতার কাটতে শুরু করেন তিনি। এরপর হয়ে ওঠেন একজন পেশাদার মৎস্যকন্যা। তার জীবন নিয়ে তৈরি হয়েছে একটি চলচ্চিত্র, যার নাম ‘মিলিওন ডলার মারমেইড’। মেলিসা যুক্তরাষ্ট্রের মেয়ে মেলিসা ডন মৎস্যকন্যা হওয়াটাকে শুধু পেশা হিসেবে পরিচয় দেন না, বরং তার একটি জীবন হিসেবে পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। রোজ রঙিন লেজ পরে পানিতে না নামলে হয়ই না তার। পানির নিচে থাকতে পারেন টানা ৫ মিনিট। মৎস্যকন্যা তার এতটাই প্রিয় যে নিজের নামটাও পাল্টে ফেলেছেন। এখন তার নাম ‘মারমেইড মেলিসা।’ হানা ফ্রেজার হানা ফ্রেজারের জন্ম অস্ট্রেলিয়ায়, কিন্তু বসবাস যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়। ৯ বছর বয়সেই টেবিলক্লথ কেটে বানিয়ে ফেলেছিলেন মৎস্যকন্যার লেজ। এরপর দিনের পর দিন চর্চা করেছেন পানির নিচে থাকার। বড় হয়েও মৎস্যকন্যার প্রতি তার আকর্ষণ রয়েই গেছে। আর সেজন্য এটাকেই বেছে নিলেন পেশা হিসেবে। এখন আলাদা করে লাগানো লেজ পরে তিনি আড়াই মিনিট পর্যন্ত পানির নিচে থাকতে পারেন, যেতে পারেন ৪৫ ফুট গভীরে। শুধু মডেলিং নয়, অভিনয় করেছেন চলচ্চিত্রেও। মুন ২০০৩ সাল থেকেই মৎস্যকন্যা হয়ে পানিতে নামা শুরু মুনের। মূলত এ্যারিজোনাভিত্তিক কাজ করলেও অন্যান্য এলাকায়ও শো করতে যান এই মৎস্যকন্যা। শুধু মৎস্যকন্যা হয়ে পানিতেই ঘুরে বেড়ান না তিনি, সম্পূর্ণ রূপকথার জগতে নিয়ে যেতে তার আছে গুপ্তধনের বাক্স, জলদস্যুদের জাহাজসহ নানা রকম আকর্ষণীয় উপকরণ। এমিলি ব্রিটেনের প্রথম পেশাদার মৎস্যকন্যা এমিলি কিট। মাত্র উনিশ বছর বয়সেই মৎস্যকন্যা হওয়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেন এমিলি। পুরনো সুইমিং কস্টিউম কেটে বানিয়ে ফেলেছিলেন মৎস্যকন্যার লেজ। এরপর শুরু অনুশীলন। তারপর থেকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। আন্ডারওয়াটার মডেলিং এবং বিভিন্ন শো-তে অংশ নিয়ে দারুণ কাটছে এমিলির দিন। মৎস্যকন্যা হতে চাইলে প্রথমেই যা দরকার তা হলোÑ সাঁতার জানা। সাঁতারে দক্ষতা না থাকলে এই পেশায় আসা সম্ভব নয়। পানির নিচে বেশিক্ষণ থাকার অভ্যাস করতে হয় মৎস্যকন্যাদের। মডেলিং এবং অভিনয় জানা থাকলে ভাল, না জানলেও এগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকতে হয়। পানির প্রতি ভালবাসা না থাকলে মৎস্যকন্যা হওয়া সম্ভব নয়- এমনটাই মতামত সব পেশাদার মৎস্যকন্যাদের। গোমড়ামুখী হলেও চলবে না, মৎস্যকন্যাদের হতে হয় হাসিখুশি, প্রাণবন্ত। সবাইকে আনন্দ দিতে হলে হাসিখুশি না হয়ে উপায় নেই। মৎস্যকন্যাদের অনেকেই বন্ধুত্ব করতে পারেন জলজ প্রাণীদের সঙ্গে, তাদের দেখলে প্রাণীগুলো তেড়ে আসে না মোটেও। পোশাক-আশাক মৎস্যকন্যাদের কস্টিউম এবং মারফিন বা লেজের পেছনে খরচ করতে হয় অনেক। একজন মৎস্যকন্যার একাধিক হাতে তৈরি বা কেনা লেজ থাকে। নানা রঙের এবং ডিজাইনের হয় মারফিন। লেজ তৈরির উপকরণের ওপর নির্ভর করে তার দাম। এছাড়া টপেও রয়েছে ভিন্নতা। কাপড়ের তৈরি টপ ছাড়াও সমুদ্রের আবহ ফুটিয়ে তুলতে সামুদ্রিক ঝিনুক দিয়ে তৈরি টপ ব্যবহার করেন কোন কোন মৎস্যকন্যা। টপের সঙ্গে মিলিয়ে জুয়েলারি ব্যবহার করেন তারা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেগুলো হয় সমুদ্রের থিমের ওপর এবং নানা রকম শামুক-ঝিনুক দিয়ে তৈরি। হতে চাইলে মৎস্যকন্যা মৎস্যকন্যা হওয়ার সবচেয়ে সহজ এবং খরচবিহীন পদ্ধতি হচ্ছে নিজে নিজে চর্চা করা। ভাল সাঁতার কাটা, পানির নিচে বেশি সময় থাকা ইত্যাদি দক্ষতা অর্জন করতে নিজেই চর্চা করতে পারেন। এগুলো আয়ত্তে এনে ফেললে মৎস্যকন্যা হওয়াটা আর কঠিন হবে না। একটা লেজ বানিয়ে বা কিনে নিতে হবে শুধু। নিজে তৈরি করতে চাইলে এ বিষয়ে বিশদ জানতে ইন্টারনেটের সাহায্য নিতে পারেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখন মৎস্যকন্যার লেজ তৈরি করে। পেশাদার মৎস্যকন্যারাও হাতে তৈরি লেজ বিক্রি করেন। ইন্টারনেটের মাধ্যমে কিনতে পারেন মৎস্যকন্যার লেজ। নিজেই ডিজাইন করতে পারেন টপস, জুয়েলারি এবং অন্যান্য সামগ্রীর। সবকিছু হয়ে গেলে পানিতে নেমে অনুশীলন করতে করতে আপনিও হয়ে যেতে পারেন রূপকথার মৎস্যকন্যা।
×